শনিবার বিকেল: মার্কেটিং গিমিকটা না করে গুছিয়ে কাজ করলে সুবিচার হতো
‘শনিবার বিকেল’ ফ্রাসট্রেটিং একটা অভিজ্ঞতা দিল। ৮০ মিনিটের থ্রিলার, তাই ঝটপট দেখে নেন। বাচ্চা আর বুড়াদের দূরে রাখবেন। অপ্রীতিকর সংলাপ, বচনগুলা নিতে পারবে না অনেকেই। ওটিটি বলে সেন্সর হয়নি জানি। দেখার পর লেখাটা পড়ে দেখেন মেলে কিনা। চাইলে পড়তেও পারেন। স্পয়লার ফয়লার নাই! গল্প তো অজানা নয়। তবে শুরুতেই ‘ফিকশন’ দাবী করা হয়েছে যখন দেখি ওয়ান টেক এ জিনিসটা কেমন দাঁড় করিয়েছে।
একটা চেম্বার পিস বা এক লোকেশনে বন্দী ছবিগুলোর গুমোট দম বন্ধ করা শ্বাসরুদ্ধকর হস্টেজ থ্রিলার ফিল যে কেউ আশা করবে। ভয় ছিল এর কতটা বাংলাদেশের কেউ সবদিক ঠিক রেখে এচিভ করতে আদৌ পারবে কিনা!
যতটুকু পারা যেত, সেটাও পেলাম না! গুলির আওয়াজেই তো দম নাই! অথচ ধামাধাম লাশ পড়ছে! অথচ লেখনীতে সম্ভাবনা ছিল, ঠিকঠাক বানানো গেলে আবেগঘন হৃদয়বিদারক মুহুর্ত তৈরি হতো বটে! এখন কমবেশি বিদেশি থ্রিলার দেখে অভ্যস্ত বাঙালি, যারা একদম বিলো এভারেজ লো বাজেট বিদেশি ছবিটিও দেখেছে, সেও বুঝবে জিনিসটা একেবারেই হয়নি! রায়হান রাফীর একদম এক্সপ্লোয়েটেশন হরর ওয়েব ফিল্ম এও হররটা থাকে! আর এটা তো সত্য ঘটনা! হরর কই!??
সেজন্য তো অ্যাটমোস্ফিয়ার বিল্ড করতে হবে। ওয়ানটেক বিধায় হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরা ব্যবহার করা যেত না? সিনেমাটোগ্রাফিতেই তো ধরা! বিহাইন্ড দ্য সিন তথ্য জানা নেই। কারো জানা থাকলে বলবেন… ক্যামেরায় কী কী সীমাবদ্ধতা ছিল যে সাসপেন্সটা তৈরি হয়নি? ওয়ানটেক ফিল্মে শেকি ক্যামের ব্যবহারে ডিসওরিয়েন্টিং ফিল আনার প্রচেষ্টা হয়নি কেন?
হোলি আর্টিজানে যাইনি, তাই জানি না সেটার মতো কতটা রাখা হয়েছে। আর কতটা নিজস্বতা ঢোকানো হয়েছে। শুধু জানি, সেট আর প্রোডাকশন বিশ্বাসযোগ্য লাগেনি।
বাংলাদেশি কনটেন্টে অভিনয় নিয়ে বলতে চাই না- কারণ বাংলাদেশিদের অভিনয় ভালো লাগে না। স্ক্রিপ্টেড ডেলিভারি বা ইম্প্রোভাইজেশন যাই হোক, সব মিলিয়ে একটা সেকেন্ডের জন্যেও জিনিসটা রিয়েল হয়নি। খুব কম কনটেন্টেই সেটা পেয়েছি। ফারুকীর কোনো মুভিতেই অভিনয় ভালো লাগে না, মানে উনি বা হুমায়ুন আহমেদ – তাঁদের ছবিতে অভিনয়গুলা মেকি/ খেলো মনে হয়, বাস্তবজীবনে কেউ এভাবে কথা বলে না। এখানে ডাবিং, সাউন্ড মিক্সিং আর পাত্রপাত্রীর ডেলিভারিও অনেকাংশে দায়ী মনে হয়। এজন্য কাস্টে একগাদা পরিচিত অভিনেতা না রাখাই স্রেয়। ওনারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজেদের ভাবমূর্তির বাইরে যেতে পারেন না, চেষ্টা করেন, হয় না বা সেটা পরিচালকের সীমাবদ্ধতা। যে ন্যাকা সে ন্যাকা ন্যাকাভাবেই কথা বলে, যে কথায় কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে ভেংচি দিতে ওস্তাদ সেও সেটাই করেছে, যে ভয় পেয়ে কথা বলার সময় এ-এ-এ করে সে সেটাই করেছে। ম্যানারিজমে পরিবর্তন নেই। কেউ বাজে অভিনয় করেননি, দেখেই এক মাসের রিহার্সাল চোখে পড়ে।
এজন্যই বাংলা কনটেন্ট নিয়ে লিখতে চাইনা, নেগিটিভিটি চলে আসে। লিখলাম কারণ ‘শনিবার বিকেল’-এর মুক্তি নিয়ে অনেক কাহিনি হলো। হলে দেখার ইচ্ছা ছিল, হয়নি। ভালোই হয়েছে। বড় পর্দায় নাটক মনে হত। সিনেম্যাটিক টেনশন, কারুকাজ, ভাবভঙ্গির কিছুই নেই এখানে। যেকোনো এক বিকেলে আয়োজন করে পজিটিভ মাইন্ডসেট নিয়েই দেখে ফেলেন। যা পাবেন, তাতেই লাভ। এই লেখা পড়ে প্রত্যাশা নাই করতে পারেন। কাজে দেবে। কী হতে পারতো, কী কী করা যেত, সেটা সাধারণ দর্শক হয়েও কল্পনা করতে পারবেন।
এন্ডিংটা ভালো লেগেছে। বা বলা উচিত, দ্য আইডিয়া অব দ্য এন্ডিং ভালো ছিল। অন্তত ভিন্ন একটা প্র্যাকটিস যে হয়েছে এই বাজারে এটাই বা কম কী! এটা দেখে ‘হাউ টু নট মেক আ ওয়ান টেক থ্রিলার’ আইডিয়া চলে আসবে। এই মার্কেটিং গিমিকটা না করে গুছিয়ে কাজটা করাই যেতো, তাতে এমন ভয়াবহ ঘটনার প্রতি সুবিচারও করা হত। যেটা পারেন না, সেটা করতে না যাবেন না, ব্যস!