Select Page

সিনেমা হল না বাঁচলে সিনেমা দেখাবেন কোথায়!

সিনেমা হল না বাঁচলে সিনেমা দেখাবেন কোথায়!

বাংলাদেশের সব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এবং নির্মাতারা মূলত দুই ঈদকে কেন্দ্র করে সিনেমা বানাতে ইচ্ছুক। গত কয়েকবছর ধরে ও সামনের দুই ঈদের মুক্তিপ্রতিক্ষীত সিনেমাগুলোর তালিকা দেখলেই বুঝবেন অবস্থাটা কী! বেশিরভাগ প্রযোজক শুধু দুই ঈদকে মাথায় রেখে সিনেমা বানাচ্ছে। বলতে পারেন, আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ঈদ কেন্দ্রিক ইন্ডাস্ট্রি হয়ে গেছে। ঈদে সিনেমার ভালো ব্যবসা হয় মানলাম কিন্তু এর বাইরের সময়গুলোতে সিনেমাহল কী দেখাবে?

সিনেমাহলের মালিকদের কথা বাদ দিলাম, সিনেমাহল সংশ্লিষ্ট যে কর্মচারীরা রয়েছেন তাদের বেতন দিবে কীভাবে!

একটা সিনেমাহলে কমপক্ষে ৫-৬ জন কর্মী লাগে। সিনেমাহল পরিচালনার জন্য তার ওপর বিদ্যুৎ বিল, মেইনটেনেন্স বাবদও একটা খরচ রয়েছে। সিনেমায় যদি না চলে সিনেমা হলে তাহলে হল মালিক কীভাবে এই খরচ জোগাড় করবে!

ঐদিন দেখলাম একটা সিনেমাহল নোটিশ দিলো যে- সিনেমা না থাকার কারণে সিনেমাহল বন্ধ থাকবে পরবর্তী কোনো নতুন সিনেমা না আসা পর্যন্ত। অনেক সিনেমাহলে দেখবেন পুরাতন সিনেমা চালিয়ে কোনোরকমে সিনেমা হলটা চালু রাখছে। কিছু তো করার নেই তাদের। শুধু হলটা বাঁচিয়ে রাখার কি আপ্রাণ চেষ্টা। তবে কতদিন এভাবে চলবে?

শুধু ঈদের সিনেমা দিয়ে এভাবে হল বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব না। বাংলাদেশের প্রযোজক-নির্মাতারা নিয়মিত সিনেমা তো দিতেই পারছে না, তারউপর ভারতীয় সিনেমা আমদানি করার কথা উঠলেই উনারা হুংকার দিয়ে উঠে। তারা নিজেরাও হলকে সিনেমা দিবে না, আবার হল মালিকরা ভারতীয় সিনেমা চালাতে চাইলে সেটাও করতে দিবে না।

হল মালিকরা তাহলে করবে কী?

হলের কর্মী এবং তাদের ফ্যামিলি কি না খেয়ে থাকবে?

এমন না যে ভারতীয় সিনেমা আমদানি হলেই আমাদের সিনেমা হলের দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। সিনেমা হলগুলো মাত্র দু’বছরের সময় চেয়েছে ভারতীয় সিনেমা চালানোর জন্য। দু’টা বছর সুযোগ দিয়ে দেখুন না তাদের কী মতামত দাঁড়ায়।

হল মালিকদের এই চাওয়াটা আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়নি। তারা শুধু তাদের ব্যবসাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছে। দেশের সিনেমার উত্থানে এই সিঙ্গেল স্ক্রিণগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। একসময় এই সিনেমাহলগুলো দিয়ে অনেক প্রযোজকের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। আজ বাংলা সিনেমার এই অবনতির পিছনে কিন্তু সিনেমা হলগুলো দায়ী নয়, মূল দায়ী হচ্ছে প্রযোজকরা। যারা ২০০০ সালের পরে কাটপিস এবং নিম্নমানের সিনেমা নির্মাণ করে দর্শকদের সিনেমাহল থেকে বিমুখী করেছে।

পাকিস্তানের মতো দেশ যাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ৯০ এর দশকের পরে মারাত্মকভাবে ধসে যায়। একসময় প্রায় সিনেমা নির্মাণই বন্ধ হয়ে যায় তাদের। সেই ইন্ডাস্ট্রি আবার গত কয়েকবছরে ঘুরে দাড়িয়েছে। ঘুরে দাড়ানোর একটা মূল কারণ কি জানেন?

‘বলিউডের সিনেমা’। তাদের দেশে সরকার ভারতীয় সিনেমা চালানোর অনুমতি দেয়। তারপর দেখা যায় ধীরে ধীরে সিনেমাহল বাড়তে শুরু করে এবং পাকিস্তানের প্রযোজকরা এই সুযোগে ভারতীয় সিনেমার সাথে কম্পিট করার জন্য সিনেমা নির্মাণ শুরু করে। আজ এই পাকিস্তানে ১৫০ এর বেশী সিনেমাহল রয়েছে পাশাপাশি এখনো ভারতীয় সিনেমা তাদের দেশে চলছে। পাকিস্তানের সিনেমা বিশ্বব্যাপী আজ ৩০০+ কোটি রুপি আয় করে। সিনেমার বিশ্ববাজারে তারা বড় মার্কেট তৈরি করে ফেলেছে, তাদের যেকোনো সিনেমায় এখন আরামসে ২০-৩০ কোটি আয় করে ফেলে আর দুই ঈদে তো বক্সঅফিসে তাণ্ডব চলে পাকিস্তানে।

আজ পাকিস্তান কেন পেরেছে জানেন?

এই ভারতীয় সিনেমার জন্য। পাকিস্তানের প্রযোজক-নির্মাতারা একটা সময় পর বুঝতে পেরেছিলো যে তারা যদি ভালো সিনেমা নির্মাণ না করে তাহলে ভারতীয় সিনেমার সাথে তারা পেরে উঠতে পারবে না। সেকারণে তারা ভারতীয় সিনেমার সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারবে এমন সিনেমা নির্মাণ করতে শুরু করে আর আজ এই ইন্ডাস্ট্রি কোথায় চলে গেছে তাতো দেখতেই পারছেন।

প্রতিযোগিতায় না নামলে আপনি কখনোই সেরা হতে পারবেন না, মনে রাখবেন।

যায়হোক, আমাদের সিনেমা হলগুলো সবার আগে বাঁচাতে হবে। সিনেমাহল না বাঁচাতে পারলে, সিনেমা চালাবেন কোথায় ভাই?

হয় আপনারা নিয়মিত সিনেমা দেন নাহলে অন্তত বারো মাসে ১০টি সিনেমা আমদানীর সুযোগ দেন।

কোনটা করবেন ভাবুন!

নাহলে সিনেমাহল বাঁচবে না। সিনেমাহল না বাঁচলে আপনারাও মূল্যহীন হয়ে যাবেন।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

মন্তব্য করুন