Select Page

যে সব কারণে এফডিসির আয় কমে গেছে

যে সব কারণে এফডিসির আয় কমে গেছে

বাংলাদেশের সিনেমায় এফডিসির অনেক অবদান। এক সময় রমরমা অবস্থায় থাকা প্রতিষ্ঠানটি এখন পড়েছে বেহাল দশায়। চার মাস ধরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছেন না। চলতি মাসের বেতন পাওয়াও অনিশ্চিত। এমন আশঙ্কা এফডিসি কর্তৃপক্ষের। এ নিয়ে আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জানা গেছে, বেতনভাতা না দেয়ার মূল কারণ ক্রমান্বয়ে এফডিসির আয় কমে যাওয়া।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ১৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একমাত্র এ প্রতিষ্ঠান নিজস্ব আয় থেকে সব ব্যয় নির্বাহ করে। ২০০০ সালের প্রথম পর্যন্ত  প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক ছিল, সরকারের রাজস্বও জোগান দিত। বর্তমানে এ সংস্থার আয় কমার মূল কারণ হিসেবে এফডিসি সূত্রে জানা গেছে, ৩৫ মিলিমিটারে (সেলুলয়েড) চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় কাঁচা ফিল্ম বিক্রয় ও ল্যাব প্রিন্ট  হতো। এছাড়া ডিজিটাল প্রযুক্তিতে কাঁচা ফিল্ম বিক্রয় বন্ধ, ল্যাব প্রিন্ট এবং এফডিসির ভবন নির্মাণে তিনটি ফ্লোর ভেঙে ফেলাতে প্রতিষ্ঠানটি ৭০ ভাগ আয় কমে যায়।

এছাড়া সিনেমা হল কমে যাওয়ায় প্রযোজকদের চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ কমেছে। বর্তমানে এফডিসিতে ফ্লোর, ক্যামেরা ডাবিং, এডিটিং, লাইট, কালার গ্রেডিং, বিএফএক্স, শুটিং স্পট ইত্যাদি ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে মাসে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা আয় হয়। তার বিপরীতে ২১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল আনুষঙ্গিক মিলে মাসে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা খরচ হয়।

এফডিসির আয় কমাতে সংস্থাটি এখন চরম সংকটে পড়েছে। সর্বশেষ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য এফডিসির কিছু জায়গা অধিগ্রহণ বাবদ সরকার যে ৬ কোটি টাকা প্রদান করে তা এফডিআর করে রাখা হয় এবং উক্ত এফডিআর থেকে লোন নিয়ে গত ৮ মাস যাবৎ বেতন পরিশোধ করে চলছিল। বর্তমানে এফডিআরের বিপরীতে লোন নেওয়ার সুযোগ না থাকায় গত ৪ মাস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া পড়েছে।

এর আগে ২০১৫ সাল থেকে ব্যাংকে থাকা এফডিসির এফডিআর ভাঙিয়ে বেতন ও যাবতীয় খরচ নির্বাহ করা হতো। এক সময় এফডিআর শেষ হয়ে যাওয়ায় সরকারি প্রণোদনায় কিছুদিন ব্যয় নির্বাহ করা হয়েছিল। বিশেষ সূত্রে জানা যায়, সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টাকা সময়মতো পাওয়া যায় না বলে এফডিসির হাল এখন বেহাল হয়ে পড়েছে।

গত চার-পাঁচ বছরে অবসরে যাওয়া এফডিসির প্রায় ৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের ছুটি নগদায়ন এবং গ্রাচ্যুয়িটি বাবদ পাওনা প্রায় ১৫ কোটি টাকা এখনো বুঝে পায়নি। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সরকারের রাজস্বভুক্ত হলেও দেশের প্রধান গণমাধ্যম স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠানটি এত বছরেও সরকারের রাজস্বভুক্ত না হওয়ায় এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

প্রতিষ্ঠানটি রাজস্বভুক্ত না হওয়ায় অবসরের পর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পেনশনও পাচ্ছেন না। তারা বলেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনের পর দিন অর্ধাহারে, অনাহার জীবন কাটাচ্ছে। অর্থের অভাবে চিকিৎসাও ব্যাহত হচ্ছে। এখনো গ্রাচ্যুয়িটি না পাওয়ায় অর্থকষ্ট আর হতাশায় অবসরকালীন এ পর্যন্ত আটজনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। বাকি বেশিরভাগরই জরাজীর্ণ অবস্থায় দিন অতিবাহিত হচ্ছে বলে জানান অনেকে।

নতুন বছর আসার পর তাদের সন্তানদের স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় ভর্তিসহ আনুষঙ্গিক বহুবিধ খরচ রয়েছে, গত চার মাস শেষ হলো এখনো বেতন জোটেনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাগ্যে। অথচ একসময় তারাই লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংস্থাটির আয় বৃদ্ধি করেছিলেন। এফডিসির সূত্র জানায়, এ সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে বারবার লিখিত আবেদনপত্র দিয়ে জানানো হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বহুবার অর্থ মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছে। এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের প্রণোদনার ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের  অর্থ ছাড়ে কেন এত গড়িমসি তথ্য মন্ত্রণালয়ের তা জানা নেই বলে জানায় এফডিসি প্রশাসন। খবর বাংলাদেশ প্রতিদিন


মন্তব্য করুন