Select Page

শর্ত দিয়ে ‘শনিবার বিকেল’ থেকে নিস্তার

শর্ত দিয়ে ‘শনিবার বিকেল’ থেকে নিস্তার

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়েছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। চার বছর পর আপিল বোর্ডের শুনানিতে প্রদর্শনের মুক্তির পেল সিনেমাটি। এর মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হলো সেন্সর বোর্ড।

আজ শনিবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে ফিল্ম সেন্সর আপিল কমিটির অন্যতম সদস্য সাংবাদিক শ্যামল দ্ত্ত শর্তসাপেক্ষে ‘শনিবার বিকেল’কে অনুমতি দেয়ার কথা জানালেন।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ছবিটি ছেড়ে দিয়েছি মুক্তির জন্য। শর্ত সাপেক্ষে ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তিতে আর বাধা নেই। শর্তটি হলো, ছবির শুরুতে একটি ডিসক্লেইমার দিতে হবে। যেখানে লেখা থাকবে- এটি হোলি আর্টিজান সংশ্লিষ্ট কোনও ঘটনা অবলম্বনে নয়।’’

অর্থাৎ, হোলি আর্টিজান থেকে অনুপ্রাণিত ছবি দর্শক দেখবে ওই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় জেনে!

এদিকে ফারুকী বলেন, “আমরা এখনও চিঠি পাইনি। তবে খবরে দেখলাম, আপিল বোর্ডের সদস্য শ্যামল দত্ত বলেছেন, ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তিতে আর বাধা নেই। খবরটা শুনে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এখন চিঠির অপেক্ষায় আছি।”

হোলি আর্টিজানের ঘটনা নিয়ে বলিউডে নির্মিত ‘ফারাজ’ মুক্তি পেতে যাচ্ছে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি। ওই খবরের পর থেকে নতুন করে ‘শনিবার বিকেল’ আলোচনায় আসে। ফারুকী এখন বলছেন, একইদিনে মুক্তি পাবে তার ছবিটি।

শুটিং শেষে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেতে জমা দেওয়া হয়। ওই বছরের ৯ জানুয়ারি ছবিটির প্রদর্শনী হয়। এত দিন পর্যন্ত ছবিটির সেন্সর ছাড়পত্র পায়নি। পরিচালকের মতে, ‘শনিবার বিকেল’ আটকানোর প্রক্রিয়ায় বহু নিয়মবহির্ভূত ঘটনা ঘটেছে।

কী রকম সেই নিয়মবহির্ভূত ঘটনা জানতে চাইলে ফারুকী প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘প্রথমে আমরা যখন ছবিটি শুট করতে যাই, আমরা তথ্য মন্ত্রণালয়ে চিত্রনাট্য জমা দিয়ে বিদেশি শিল্পী ও কলাকুশলী আনার জন্য আবেদন করি। তখন তথ্যমন্ত্রী ছিলেন হাসানুল হক ইনু। তথ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন দপ্তর সেই স্ক্রিপ্ট পড়ে আমাদের অনুমোদন দেয়। শুধু অনুমোদনই নয়, ওই সব দপ্তরে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আমাদের ফোন করে উৎসাহও দেন। সেই চিত্রনাট্য থেকেই ছবিটি বানিয়ে আমরা সেন্সর বোর্ডে জমা দিলাম। সেটার প্রথম প্রদর্শনী হলো ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি। সেন্সর বোর্ড সদস্যরা ছবিটি দেখে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ইন্টারভিউ দিয়ে বললেন, ছবিটি ভালো হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছবি, দ্রুত সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। তারপর যেটা ঘটল, সেটা অভাবনীয়! ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের অনলাইনে একযোগে কিছু ধর্মীয় রাজনীতি করা মানুষের লিংকে দাবি করা হলো ‘শনিবার বিকেল’ নিষিদ্ধ করতে হবে। যারা এটা করলেন, তারা তো কেউই সিনেমাটা দেখেননি।’

ফারুকী এও বলেছিলেন, ‘যে ছবি দেখে সেন্সর বোর্ড সদস্যরা দ্রুত সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা বললেন, সেই ছবি কেন ১৫ তারিখে দ্বিতীয়বার দেখে সার্টিফিকেট দিতে অস্বীকৃতি জানানো হলো? কে তাদের বাধ্য করল? আমরা আপিল করলাম। আপিল কমিটির সভাও হয়ে গেল ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে। এরপর সাড়ে তিন বছর তারা নিশ্চুপ। আমাদের কিছুই জানাল না। এটা কোন রীতি? এরপর আমরা ২০২২-এর আগস্টে ফ্যাবের পক্ষ থেকে আন্দোলন শুরু হলে মন্ত্রী মহোদয় আমাদের নেতাদের ডেকে বললেন, তাঁরা ‘শনিবার বিকেল’ ছেড়ে দেবেন। তাঁদের দুয়েকটা পর্যবেক্ষণ আছে। সেসব ঠিক করে দিলেই ছেড়ে দিচ্ছেন। তাঁরা দ্রুতই চিঠি দিয়ে জানাবেন। কিন্তু আমাদের চিঠি না দিয়ে আবারও আপিল কমিটির সভা ডাকা হলো, যে সভা তিন বছর আগেই একবার হয়ে গেছে!’

ফারুকী পরোক্ষভাবে ধর্মীয় রাজনীতির কথা তুললেও সরকারি পক্ষ থেকে কখনো এ যুক্তি দেয়া হয়নি।

গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে ডেইলি স্টার এক প্রতিবেদনে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বক্তব্য ছাপে। সেখানে বলা হয়, ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি হলি আর্টিজানের ঘটনা নিয়ে নির্মিত। সেখানে দুজন পুলিশ সদস্যসহ বেশকিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া র‍্যাব, সেনাবাহিনী ও পুলিশ অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে জঙ্গিদের দমন করেছে। এ বিষয়গুলো ছবিতে আসেনি। আমি সেন্সর বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। বোর্ড থেকে তাদেরকে (পরিচালক) বলার পর সংযোজন করে জমা দিয়েছিলো। কিন্তু সেগুলো যথেষ্ট নয়। এরপর তারা আপিল করে।

‘শনিবার বিকেল’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা, জাহিদ হাসান, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ইয়াদ হুরানি, নাদের চৌধুরী, ইরেশ যাকের, ইন্তেখাব দিনার প্রমুখ।


মন্তব্য করুন