Select Page

‘শাকিব-অপুকে কেন অনুদান’, প্রতিবাদের বিপরীতে প্রতিবাদ

‘শাকিব-অপুকে কেন অনুদান’, প্রতিবাদের বিপরীতে প্রতিবাদ

চলচ্চিত্রকর্মী সমাবেশে অনুদান নীতিমালা কমিটির বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরা হয় সম্প্রতি। এর প্রতিবাদ করেছে এফডিসি কেন্দ্রিক সমিতিগুলো

প্রতিবছরই চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য মোটা অঙ্কের সরকারি অনুদান দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, ক’বছর ধরে সরকারি অনুদানের সিংহভাগ চলে যাচ্ছে বাণিজ্যিক ঘরানার শিল্পী-নির্মাতা-প্রযোজকদের পকেটে। বিপরীতে ক্রমশ এই অনুদানের পরিমাণ কমছে ইতিহাস-ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি বিকাশের লক্ষ্যে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রের পক্ষে। বিশেষ করে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদানের বাজেট এখন শূন্যের কোঠায়!

তাই প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতারা বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ। তারা স্পষ্ট ভাষায় বলছেন, শাকিব খান, অপু বিশ্বাসকে কেন সরকারি অনুদান দিতে হবে!

সোমবার (৪ জুলাই) শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদান প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতির প্রতিবাদে চলচ্চিত্রকর্মী সমাবেশে অনুদান নীতিমালা কমিটির বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরা হয়। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ৩৪টি সংগঠন এই সমাবেশের আয়োজন করে।

এতে উপস্থিত থেকে নির্মাতা মানজারে হাসিন মুরাদ বলেন, ‘বাণিজ্যিক সিনেমা নির্মাণের জন্য ব্যাংক থেকে নানান ফান্ডিংয়ের জায়গা আছে। কিন্তু জনগণের টাকায় বাণিজ্যিক সিনেমা নির্মাণ করা হবে, সেটা ঠিক হবে না। আমরা বাণিজ্যিক সিনেমার বিরুদ্ধে না। কিন্তু সরকারি অনুদানে হবে শিল্পসম্মত সিনেমা। শাকিব খান, অপু বিশ্বাস কি নিজ অর্থায়নে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারেন না? তাদের অনুদান দিতে হবে কেন!’

সমাবেশে চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘সরকারের অনুদানের লক্ষ্য হওয়া উচিত শিল্পসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণ, বাণিজ্যিক নয়। প্রথম হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ, দ্বিতীয় হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, আমাদের সামগ্রিক অবস্থা প্রাধান্য দেবে যে চলচ্চিত্র সেগুলোকেই সরকার অনুদান দেবে। এটা হচ্ছে মূল কথা।’

আরেক নির্মাতা জাহিদুর রহিম অঞ্জন বলেন, ‘শর্ট ফিল্ম ও প্রামাণ্যচিত্রের জন্য একটি কমিটি হোক। তারা যাচাই করে অনুদান দেবে। এতে যদি দশটি প্রামাণ্য ছবিতে অনুদান দেওয়া লাগে দিতে হবে।’

সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাবি চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি সিয়ান শাহরিয়ার আলমগীর, বাংলা প্রামাণ্যচিত্র পর্ষদের সদস্য ভ্রাত্য আমিন, চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়রা বিলকিস, ফরিদুর রহমান, আবু সাইদসহ অনেকে।

সমাবেশে প্রতিবাদী গান পরিবেশন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ সদস্যরা। সমাবেশে দুটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। উত্থাপন করা হয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান নিশ্চিতসহ ১০টি প্রস্তাবনা।

এ দিকে চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান বন্ধের জন্য কিছু নির্মাতার দাবিকে চলচ্চিত্র শিল্প ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন সমিতিগুলোর নেতারা।

সমাবেশের একদিন পর (৫ জুলাই) বাণিজ্যিক সিনেমায় অনুদান বন্ধের যে দাবি, সেই দাবির প্রতিবাদ জানিয়েছে চলচ্চিত্র শিল্পী, পরিচালক, প্রদর্শক, চলচ্চিত্রগ্রাহক সমিতি ও ফিল্ম এডিটরস গিল্ড। সমিতিগুলো বুধবার মন্ত্রণালয়ে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছে।

চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান বন্ধের জন্য কিছু নির্মাতার দাবিকে চলচ্চিত্র শিল্প ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন সমিতিগুলোর নেতারা।

সবার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘গত ৪ জুলাই সোমবার রাজধানীর শাহবাগে কয়েকজন চলচ্চিত্র নির্মাতা বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে এবং চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য, দেশের জন্য এবং সর্বোপরি মানুষের সুস্থ বিনোদনের জন্য ক্ষতিকর এই দাবি আমরা কোনোভাবেই সমর্থন করি না এবং এটিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে চলচ্চিত্র শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র বলে মনে করি।

‘একথা আমরা সবাই জানি যে, দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের পুণরুত্থান এবং দর্শকদের আবার প্রেক্ষাগৃহমুখী করতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অনুদান ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে। বিশেষ করে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান প্রদান যেমন চলচ্চিত্র নির্মাতা, পরিচালক, শিল্পী, কলাকুশলী এবং হল মালিকদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছে তেমনি মানুষকেও সুস্থ বিনোদনের চর্চায় সিনেমা হলে ফিরিয়ে এনেছে। এসব কারণে পুরো চলচ্চিত্র সমাজের পক্ষ থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অকুণ্ঠ ধন্যবাদ প্রাপ্য।

‘অথচ আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, কয়েকজন চলচ্চিত্র নির্মাতা দেশের মূলধারার চলচ্চিত্রের বাইরের কিছু সংগঠনের ব্যানারে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তাদের মধ্যে কয়েকজন এবছর অনুদান না পেয়ে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে এই অবস্থান নিয়েছেন। এমন কি সরকারি অনুদান গ্রহণ করে সেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেননি এমন অভিযুক্তরাও এই দাবির সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন। অথচ চলচ্চিত্রে অনুদান সরকারি নীতিমালা পুরোপুরি অনুসরণ করেই দেয়া হয়। গত তিন বছরে ৯টি প্রামাণ্যচিত্রসহ মোট ২৫টি স্বলদৈর্ঘ্য ও ৫৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকে অনুদান দেয়া হয়েছে, যা আগের বছরগুলোর তুলনায় সংখ্যা ও অনুদানের অর্থ দুই মাপকাঠিতেই বেশি। দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা-বোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত কমিটিই অনুদান প্রদান করে। এ সকল সত্য তাদের বক্তব্যকে ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং স্বার্থসিদ্ধিমূলক বলে প্রমাণ করেছে।’

/বাংলা ট্রিবিউন ও নিউজ বাংলা টোয়েন্টিফোর


মন্তব্য করুন