‘শাকিব খান ভাইয়া’র দেরি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের দুষলেন নবীন পরিচালক
‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ সিনেমার মহরত নিয়ে যত কাণ্ড। মঙ্গলবার নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর শাকিব খানকে হাজির হতে দেখে কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশ করে। এর আগেই এ নায়ক এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। এ ছাড়া শিডিউল ফাঁসানোর অভিযোগ নতুন নয়।
এবার ‘শাকিব খান ভাইয়া’র প্রশংসা করে নবাগত সিনে পরিচালক তপু খান সাংবাদিকদের নিয়ে ফেসবুক গরম করলেন। সেখানে সাংবাদিকদের প্রতি অভিযোগের তীর ছুড়লেও অনুষ্ঠানে বসিয়ে রাখার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেননি তিনি। জবাবে থেমে নেই সাংবাদিকরাও।
বুধবার সকালে তপু ফেসবুকে লেখেন, “প্রথম দিনে শাকিব খান ভাইয়া কল টাইমের আগেই শুটিং সেটে এসেছিলেন। আমরাই স্বাস্থ্যবিধি সুনিশ্চিত করার জন্য সময়মতো শুরু করতে পারিনি। তাছাড়া আজকে শহরে মাত্রাতিরিক্ত যানজটের কারণে কলাকুশলীদের বিলম্ব উপস্থিতির কারণেই আমাদের দেরি হয়েছে! শাকিব ভাইয়া মেকাপরুমে বসে আমাদের জন্য অপেক্ষা করেছেন। এতে আমাদেরই খারাপ লেগেছে এবং মুগ্ধ হয়েছি তার ধৈর্যশীলতা দেখে।
কিন্তু সামান্য তিল বিষয়টি তাল বানিয়ে বেশ কয়েকটি অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিক ভাইয়েরা গুজবের উপর ভিত্তি করে ভুলবশত অসত্য নিউজ করেছেন। যারা নিউজ করেছেন তাদের প্রায় কেউই সেখানে ছিলেন না। আমার সাথে তারা কথাও বলেননি। এমনকি আমার প্রযোজনা সংস্থার সাথে কোনরকম যোগাযোগ করেননি।
সম্মানের জায়গা থেকে বলছি – কাটতি বাড়ানোর আশায় এবং গুজব এর উপর ভিত্তি করে ভিত্তিহীন নিউজ প্রকাশ করে সাংবাদিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। যারা পরিচালক বা প্রযোজনা সংস্থার সাথে কোনোরকম যোগাযোগ না করে খবর প্রকাশ করেছেন তাদেরকে অনুরোধ করছি দয়া করে খবর প্রকাশের পূর্বে পরিচালক বা প্রযোজনা সংস্থার কাছ থেকে সঠিক সংবাদ নিয়ে খবর প্রকাশ করবেন। আমরা যোগাযোগ করতে না পারলেও পরবর্তীতে প্রযোজনা সংস্থার মাধ্যমে সঠিক খবরটি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি সব সময়।
শাকিব খান ভাইয়া আমাদের সাথে রাত ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত টানা পূর্ণ সহযোগিতা দিয়ে শুটিং করেছেন। বরং আমাদের একটু দেরি হয়েছে তাকে শুটিং শেষ করে ছাড়তে। এই আন্তরিক সহযোগিতার জন্য আমরা শাকিব ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ যে শিডিউল কৃত কর্মঘন্টার বাইরে যে তিনি তার মূল্যবান অতিরিক্ত কর্মঘন্টা আমাদেরকে সময় দিয়েছেন গতকাল প্রথম দিনের শুটিংয়ে এবং বুবলি আপু ধৈর্যশীলতার সাথে রাত পর্যন্ত কাজ করেছেন সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে। কর্মপরিবেশ ছিল আমাদের প্রথম দিনের জন্য খুবই আন্তরিক ও সহযোগিতাপূর্ণ।
আগামীতে সাংবাদিক ভাইয়ের কাছ থেকে সহযোগীতা কামনা করছি। আশা করবো তারা আন্তরিকতা রেখে পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ।
শাকিব খান ভাইয়ের উপর একটা কথাই বলবো *শুনেছি সে সুউচ্চ কঠিন পাহাড়, কিন্তু দেখলাম তিনি এক বিশাল সমুদ্র সমান হৃদয়ের অধিকারী*
ব্যক্তিগত মতামত জানালাম। সবার শুভ কামনা প্রার্থী। ধন্যবাদ।”
এ পোস্টে দেশ রূপান্তারের প্রতিবেদক পাভেল রহমানের মন্তব্য, “পরিচালক বা প্রযোজনা সংস্থা ছাড়াও সাংবাদিকের নানা সোর্স থাকবে, সেসব সোর্স থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হলে সাংবাদিক অবশ্যই নিউজ করবেন। সব সময় তো, পরিচালক বা প্রযোজনা সংস্থার প্রেস রিলিজ দিয়ে নিউজ হবে না। তাহলে তো সাংবাদিকের দরকার নাই।
প্রেস রিলিজ সাংবাদিকের একটা সোর্স মাত্র। কিন্তু প্রেস রিলিজের বাইরেও অনেক তথ্য থাকে, যা সাংবাদিক নানা সোর্স থেকে সংগ্রহ করেন। সেই তথ্যে মিথ্যাচার করা হলে, অবশ্যই প্রতিবাদ করবেন।
প্রকাশিত নিউজ যদি অসত্য হয়, প্রতিবাদলিপি পাঠাতে পারেন, মূল ধারার গণমাধ্যম নিশ্চয় সেটাও প্রকাশ করবে।
আর শাকিব খান নিয়ে যে প্রশংসা বাক্য লিখলেন, সেটা নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে, শুটিং সেটে দেরি করে যাওয়া, সাংবাদিক সম্মেলনে দেরি করে যাওয়া তো শাকিব খানের পুরনো অভ্যাস। যদি, এখন অভ্যাস বদলায়, তবে সেটা আপনার সৌভাগ্য। শাকিব নিয়ে এর আগে যারা কাজ করেছেন, তারা ভালো করেই শাকিবকে জানেন। অনেকে বিরক্তও৷ কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি শাকিবকেন্দ্রিক বলে, অনেকেই মুখ খুলেন না। তপু খান আপনার সিনেমার জন্য শুভ কামনা।”
কালের কণ্ঠের মাহতাব হোসেন বলেন, “তপু খান ভাই, সংবাদে ভুল ভ্রান্তি যদি হয়, সেটার দায় দায়িত্ব আপনাদের, তথ্য সরবরাহের দায়িত্বের লোকদের। আপনাদের পাবলিক রিলেশন থেকে সঠিকভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে না, সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে পারে না। ‘ছবি তোলা যাবে না-ভিডিও করা যাবে না’র মতো আইন করে মহরত আয়োজন করা কার বুদ্ধি। জানি না এই ঘটনা কতটুকু সত্য, কিন্তু বাজারে এটা ছড়িয়ে গেছে আগেরদিনই। শক্ত পাবলিক রিলেশনের দায়িত্বে থাকলে এমনটা হতো না। যে তথ্য বিভ্রাট ঘটেছে সেটা নিয়ে আপনি বলতেই পারেন- কিন্তু তাই বলে আজ ‘কতিপয় অনলাইন পোর্টাল’ বলে দিলেন এটা তো ঠিক হলো না ভাই। আজকে ‘জাগোনিউজ’ বা ‘এনটিভি অনলাইন’কে কতিপয় বললেন আপনাকে অনুসরণ করে কাল তো ‘বিবিসি অনলাইন’ অনলাইনকেও অনেকে কতিপয় বলবে- এতে কী কোনো লাভ লোকসান হবে?”
নিজের ফেসবুকে ডেইলি স্টারের জাহিদ আকবর লেখেন, “এক অর্বাচীন নাট্য পরিচালক সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। কার ও কাদের বুদ্ধিতে দিয়েছেন ঠিক জানি না। কাটতি বাড়ানো মানে কী? এই অর্বাচীন নাট্য পরিচালকের নাম আগে শুনেছি বলে মনেহয়না। তার কোনো ভালো কাজ থাকলে অবশ্যই জানতাম। তার আবার কিসের কাটতি? এই অর্বাচীন জ্বী হুজুর টাইপ পরিচালক সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে লেখার আগে ভাবার দরকার ছিলো।”
জাগো নিউজের লিমন আহমেদ লেখেন, “এই মনে করেন খুশিতে ঠ্যালায় আবেগে সেই সুলতান সুলেমানের আমল থেকেই নায়ককে ভাইয়া বলে শুরু করে অনেকেই শা*য়া দিয়ে শেষ করেছে। তারা অনেকেই ইতিহাসের দেয়ালে ধুসর পোস্টার হয়ে গেছে। তাই আমি খুব করে চাই জোর করে মিথ্যে কথা বলে, গ্যাংদের মুখস্ত বুলি আউড়ে, অনুসারীদের দিয়ে ঢোল পিটিয়ে, নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে আপনি যেন ভাইয়া বলেই শেষ করতে পারেন। আপাতত স্রেফ এটুকু কল্যাণ চাই আমি আপনার। লাভ লস স্বীকৃতি প্রশংসা না হয় তোলাই থাক। আমাকে মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা করে লাভ নাই।
আপনার জন্য আমার মানবিক ভালোবাসা। আপনাকে ও আপনার কাজকে আমি মন থেকে পছন্দ করি, সাপোর্ট করি। আপনাকে যারা ভুল পরামর্শ দিয়ে পলাশীর প্রান্তরে নামিয়ে দিয়েছে কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই তাদের জন্য আমার ঘৃণা…।”
চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়া স্টুডিওতে সাংবাদিক সম্মেলনে নতুন চলচ্চিত্র ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ এর সাইনিং অনুষ্ঠিত হয় পরিচালক তপু খান এবং বাংলা চলচ্চিত্রের আলোচিত জুটি শাকিব খান ও শবনম বুবলির সাথে।
মহরতের পর মঙ্গলবার শুরু হয়েছে ছবির শুটিং। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে একটানা ৩০দিন শুটিং করার পরিকল্পনা রয়েছে নির্মাতাদের।