Select Page

শাকিব খানের ভালো ছবিগুলো

শাকিব খানের ভালো ছবিগুলো

এটা চরম সত্য যে শাকিব খানের মাস্টারপিস ছবি নেই। মনে রাখার মতো ছবি কয়েকটা আছে আর তার সাথে ভালো ছবিও আছে যেগুলো দেখার মতো গল্প ও অভিনয়ে।

শাবনূরের বিপরীতে শাকিব খান প্রথম লাইমলাইটে আসে। প্রথমদিকে শাবনূরের সাথে অভিনয়ে বেশ সমস্যা ছিল শাকিবের পরে সময়ের সাথে সাথে ন্যাচারালি ভালো অভিনয় করে গেছে। ‘আমার স্বপ্ন তুমি’ ছবিতে ব্যর্থ প্রেমিকের চরিত্রে শাকিব অসাধারণ অভিনয় করেছে। এ ছবি দিয়েই নির্মাতাদের সুনজরে আসে সে। তারপর নতুন যাত্রা শুরু হয় তার। এর পাশাপাশি শাবনূরের সাথে ‘সবার উপরে প্রেম, নাচনেওয়ালী, সবার উপরে প্রেম, প্রেম সংঘাত, নয়ন ভরা জল, ফুল নেব না অশ্রু নেব, স্বপ্নের বাসর, প্রাণের মানুষ, সমাধি, কপাল’ এ ছবিগুলো উল্লেখযোগ্য। এগুলোর মধ্যে ‘নয়ন ভরা জল, প্রাণের মানুষ, সমাধি’ গল্প ও অভিনয়ে এগিয়ে। শাবনূরের সাথে গানের দিক থেকেও শাকিব ভালো ছবির মানদণ্ডে আছে। যেমন-

* কিছু কিছু মানুষের জীবনে – স্বপ্নের বাসর
* সবকিছুরই শুরু আছে – নয়ন ভরা জল
* দুধে আলতা বদন তোমার – ফুল নেব না অশ্রু নেব
* আমার হৃদয় একটা আয়না – ফুল নেব না অশ্রু নেব
* তোমার ঐ মুখের হাসি – আমার স্বপ্ন তুমি
* ও কন্যা গো – নাচনেওয়ালী
* পাস্ট ইজ পাস্ট – প্রাণের মানুষ
* মাথায় পাগড়ি পরে – প্রেম সংঘাত

পপির সাথে ‘বাপবেটির যুদ্ধ’ মানসম্মত ছবি। পপির চরিত্রের গুরুত্ব বেশি থাকলেও শাকিব তার ভূমিকায় ভালো ছিল। ‘জমজ’ ছবিটি মোটামুটি মানের ভালো কাজ।

পূর্ণিমার সাথে ‘সুভা’ ছবিটি শাকিবের ক্যারিয়ারে উজ্জ্বল একটা ছবি। তবে নারীপ্রধান ছবি হওয়াতে পূর্ণিমা ছিল প্রধান চরিত্র। শাকিব তার ভূমিকায় অসাধারণ ছিল। তার বিপরীতে ‘মা আমার স্বর্গ, মাটির ঠিকানা, আজকের সমাজ, বাধা, ভালোবাসার লাল গোলাপ, আই লাভ ইউ, বিয়ের প্রস্তাব’ এগুলো ভালো ছবি। এর মধ্যে ‘আজকের সমাজ’ অসাধারণ। স্টুডেন্ট পলিটিক্সের বাস্তবতায় সাধারণ ছাত্রের প্রতিবাদী হয়ে ওঠার ভূমিকায় শাকিব দুর্দান্ত ছিল। ছবিতে রিয়েল সমস্যাগুলো উঠে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের ছাত্রের। ‘মা আমার স্বর্গ’ আরেকটা অসাধারণ কাজ। মা-ভক্ত ছেলে শাকিব তার মা ববিতার জন্য নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন দেয়। শাকিবের জন্য ভিলেন মিশা সওদাগর শেষ পর্যন্ত নায়কের মতো কাজ করে ববিতাকে সব খুলে বলে তার দায়িত্ব পালন করে। ‘বাধা’ ছবিতে ব্যর্থ প্রেমিকের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেছে এবং ছবিটি উপভোগ্য। পূর্ণিমার সাথে ‘দুশমন দরদী’ ছবিতেও দারুণ ছিল শাকিব। ডিপজলের সাথে লড়াই ছিল জম্পেশ। ‘মাটির ঠিকানা’ ইসলামী দর্শনে আরেকটি অসাধারণ ছবি। মৃত্যুর পরের জীবনকে শাকিব দেখতে থাকে স্বপ্নে। স্বপ্ন ভাঙলে বাস্তবের ভুলের সাথে তা দ্বন্দ্ব হয়।

প্রথম নায়িকা কারিশমার সাথে ‘সবাইতো সুখী হতে চায়’ টাচি গল্পের ছবি ছিল। শাকিব তখন ইনোসেন্ট লুকের ছিল। অভিনয়টা ন্যাচারাল ছিল। ‘অনন্ত ভালোবাসা’ ছবিতে ইরিন জামানের বিপরীতে দারুণ অভিনয় করেছে। এ ছবির ‘তোমার ঐ মিষ্টি হাসি’ জনপ্রিয় গান।

সাহারার সাথে ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া, খোদার পরে মা, ভাড়াটে খুনি’ ভালো ছবি। প্রথমটা ঢালিউডের অন্যতম সেরা ব্যবসাসফল ছবি। শাকিব জোস অভিনয় করেছে। পরেরটা ‘মা আমার স্বর্গ’-র মতোই মা-ভক্ত ছেলের টাচি গল্পের ছবি। ‘ভাড়াটে খুনি’ অ্যাকশনে চমৎকার।

অপু বিশ্বাসের সাথে শাকিবের স্থায়ী জুটি হওয়াতে ৭০টি ছবি করেছে তারা। সংখ্যার দিকে মনোযোগী হওয়াতে কোয়ালিটি রাখতে পারেনি। তবে ‘তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা, ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ এ ছবি দুটি অসাধারণ। প্রথমটা আলমগীর পরিচালিত ‘নিষ্পাপ’ ছবির কপি। ব্যর্থ প্রেমিকের চরিত্রে শাকিব অনবদ্য অভিনয় করেছে। স্পেশালি ছবির শেষ ৪৫ মিনিটে শাকিবের অভিনয় দেখলে তাকে ডেডিকেটেড মনে হয়। ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ ছবিতে পারিবারিক অবিচারের বিরুদ্ধে পরিবারের সচেতন ছেলের প্রতিবাদের ছবি। অপু বিশ্বাস কাজের মেয়ে থাকে যাকে কথায় কথায় অত্যাচার করে বড়ছেলে মিশা। অপুর চ্যালেন্জের মুখে শাকিব তাকে বিয়ে করে। তার বাবার অবিচারের বিরুদ্ধে সে প্রতিবাদ করে। প্রতিবাদের ভাষাটা অসাধারণ ছিল। পরিচালক ছিল জাকির হোসেন রাজু। আসলে শাকিবের কো-আর্টিস্ট হিশাবে অপু বিশ্বাস একঘেয়েমি অভিনয় করার ফলে অধিকাংশ ছবি কোয়ালিটিফুল না। তবে এ দুটি ছবিতে অপুর অভিনয় ভালো ছিল। ‘নিঃশ্বাস আমার তুমি’ ভালো ছিল। ‘চাচ্চু, দাদী মা’ হিটের দিক থেকে আলোচিত। মানের কথা বললে ভালোর তালিকায় যোগ হবে।

জনার বিপরীতে ‘ডাক্তারবাড়ি’ ছবিটি শাকিবের ক্যারিয়ারের আরেকটি উজ্জ্বল ছবি। এ ছবিতে পারিবারিক বন্ধন আর দূরত্বকে দেখানো হয়েছে। শাকিব সিস্পলি ন্যাচারাল অভিনয় করেছে। তার চরিত্রটিও টাচি ছিল।

নদীর বিপরীতে ‘খুনি শিকদার’ ছবিটি বাংলাদেশের বহুল আলোচিত সিরিয়াল কিলার এরশাদ শিকদারের জীবনী থেকে নেয়া। হুবহু না হলেও মূল গল্পটা নেয়া হয়েছে। শাকিব খুনি শিকদারের ভূমিকায় ন্যাচারাল অভিনয় করেছে। অশ্লীল দৃশ্য ছিল তবে সেটাই ছবির একমাত্র সীমাবদ্ধতা নয়। ছবির ফিনিশিং এ শাকিবের ফাঁসি হবার ঘটনাটা টাচি এবং ফাঁসির দড়ির দিকে তাকিয়ে শাকিবের এক্সপ্রেশন বলে দেয় তার অভিনয়ের গুণ আছে।

‘সিটি টেরর’ ছবিতে মান্নার ছোটভাই থাকে শাকিব। তার নিজের সন্ত্রাসী ভূমিকায় দুর্দান্ত অভিনয় করেছে। বিশেষ করে শেষ পাঁচ মিনিটে মান্নাকে পেছন থেকে গুলি করার সময় শাকিবের এক্সপ্রেশন খেয়াল করলে তার ন্যাচারাল অভিনয়গুণ ধরা পড়ে। মান্নার সাথে ‘মায়ের মর্যাদা’ ছবিটিও উল্লেখযোগ্য ভালো ছবি।

মীমের সাথে ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’ বেশ ভালো কমার্শিয়াল ছবি। ‘কি জাদু করেছ বলো না, চাই না মেয়ে’ গান দুটি জনপ্রিয়। বিন্দুর সাথে ‘এই তো প্রেম’ কিছু অসঙ্গতির মাঝেও ভালো ছবি। এ ছবির ‘আমি তোমার মনের ভেতর’ গানটি জনপ্রিয়।

ববির সাথে ‘ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’, মাহীর সাথে ‘ভালোবাসা আজকাল’ এগুলো মোটামুটি মানের ভালো ছবি। পাওলি দামের বিপরীতে ‘সত্তা’ সাম্প্রতিক সময়ের উল্লেখযোগ্য ছবি। শ্রাবন্তীর সাথে ‘শিকারী’ সাম্প্রতিক ভালো ছবি। যৌথ প্রযোজনার নিয়মে স্বচ্ছতা না থাকায় কিছু ছবি আসবে না। এছাড়া একই সময়ে মানসম্পন্ন ও মানহীন ছবি করার প্রবণতা থাকায় কিছু ছবি ভালো ছবির কাতারে আসে না তার। আগামীতে হয়তো তার কাছে ভালো ছবি বেশি পাবো আমরা।

শাকিব খান আমাদেরই নায়ক। সমালোচনার জায়গায় আমিও তাকে ছাড় দেই না। তার দোষ অনেক তাই বলে তার দেখার মতো ছবি নেই এটা ভুল ও একতরফা কথা। শাকিবের ভালো ছবি আছে। আগে ছবিগুলো দেখুন তারপর ভালোমন্দ বলুন।


মন্তব্য করুন