Select Page

শাবানা-কবরীর নায়ক, তবে পরিচিতি শীর্ষ চিত্রগ্রাহকের

শাবানা-কবরীর নায়ক, তবে পরিচিতি শীর্ষ চিত্রগ্রাহকের

অভিনেতা হিসেবে মাহফুজুর রহমান খান ততটা সফল না হলেও চিত্রগ্রাহক হিসেবে তিনি কিংবদন্তি। তবে এক সময় অভিনয় করেছেন শাবানা-কবরীর মতো ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষ নায়িকাদের বিপরীতে।

মাহফুজুর রহমান খানের পরিচিতিমূলক লেখা ও ছবি আজাদ আবুল কালামের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত

চলচ্চিত্রগ্রাহক হিসেবে তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ। বাণিজ্যিক থেকে শৈল্পি; সৃজনশীল ও ব্যতিক্রমী কাজের স্বাক্ষর রেখে গেছেন চলচ্চিত্রে। ধ্রুপদী ক্যামেরার কাজের মাধ্যমে তিনি অর্জন করেছেন সুনাম। সেরা নির্মাতাদের সঙ্গে কাজের পাশাপাশি পেয়েছেন দশবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

মাহফুজুর রহমান খান শুরুর দিকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন। কয়েকটি চলচ্চিত্রে, তৎকালীন অতি জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা কবরী ও শাবানা’দের মতো নায়িকাদের বিপরীতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন তিনি। নায়ক হিসেবে তাঁর নাম ছিল ‘মাহফুজ’। তিনি যেসব ছবিতে অভিনয় করেছেন- আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘আমার জন্মভূমি’ (১৯৭৩), মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘আলো ছায়া’ (১৯৭৪), নুর-উল আলম পরিচালিত ‘চলো ঘর বাঁধি’ (১৯৭৪), দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত ‘দাবি’ (১৯৭৪), সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া পরিচালিত ‘একালের নায়ক’ (১৯৭৫)।

মাহফুজুর রহমান খান নীতিবান, দুর্নাম, সম্মান, কৈফিয়ত’সহ কয়েকটি ছবিও প্রযোজনা (অংশীদার) করেছেন। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল দিশা ইন্টারন্যাশনাল।

মাহফুজুর রহমান খানের জন্ম ১৯৪৯ সালের ১০ মে ঢাকার লালবাগে, মৃত্যু ২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বর।

তার বাবা হাকিম ইরতিজা-উর-রহমান খান ছিলেন ব্যবসায়ী। পৈতৃক নিবাস লালবাগের চকবাজারস্থ হাকিম হাবিবুর রহমান খান রোডে। রোডটির নাম তার দাদা হাকিম হাবিবুর রহমান খানের নামানুসারে। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে মাহফুজুর রহমান খান ছিলেন সবার বড়। তার চাচা, ই আর খান (ইরতিফা-উর-রহমান খান) একজন খ্যাতনামা পরিচালক ও প্রযোজক ছিলেন। প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক ভাতৃদ্বয় এহতেশাম ও মুস্তাফিজ ছিলেন তাঁর ফুফাত ভাই।

মাহফুজুর রহমান খান ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল স্কুল, কুমিল্লা ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে পড়েন।

স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকে তিনি চিত্রগ্রহণে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তার বাবার ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে চিত্রগ্রহণে হাতেখড়ি হয়।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রগ্রাহক আব্দুল লতিফ বাচ্চুর অধীনে সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে ‘দর্প চূর্ণ’ ও ‘স্বরলিপি’ চলচ্চিত্রে কাজ করেন মাহফুজুর রহমান খান। একক চিত্রগ্রাহক হিসেবে তার প্রথম কাজ আবুল বাশার চুন্নু পরিচালিত, ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কাঁচের স্বর্গ’ ছবিটি। তিনি আরো যেসব চলচ্চিত্রে চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- আমার জন্মভূমি, মেহেরবানু, হারানো মানিক, চাষীর মেয়ে, ভালবাসা, সখি তুমি কার, জোকার, গাঁয়ের ছেলে, অপন ভাই, প্রিন্সেস টিনা খান, ভাই ভাই, জীবন মৃত্যু, মহানায়ক, দোস্তী, ঝুমকা, সুখে থাকো, বদনাম, কালো গোলাপ, অভিযান, নির্দোষ, তালাক, তওবা, সহযাত্রী, সৎভাই, চাঁপা ডাঙ্গার বউ, তিন কন্যা, ঢাকা-৮৬, ভেজা চোখ, মরণের পরে, অচেনা, অন্ধ বিশ্বাস, ত্যাগ, অন্তরে অন্তরে, পোকা মাকড়ের ঘর বসতি, আনন্দ অশ্রু, জীবন চাবি, অনেক দিনের আশা, পাহারাদার, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, মেঘলা আকাশ, চন্দ্রকথা, শঙ্খনাদ, এক খণ্ড জমি, হাজার বছর ধরে, নন্দিত নরকে, স্বপ্নডানায়, চন্দ্রগ্রহণ, কি যাদু করিলা, আমার আছে জল, মেঘের কোলে রোদ, বৃত্তের বাইরে, ঘেটুপুত্র কমলা, জীবনঢুলী, এক কাপ চা, ৭১-এর মা জননী, ৭১-এর ক্ষুদিরাম, পদ্মপাতার জল, পৌষ মাসের পিরীত প্রভৃতি।

চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি টেলিভিশনের জন্যও অনেক কাজ করেছেন। বহু নাটক ও টেলিফিল্ম-এর চিত্রগ্রহণের কাজ করে গেছেন সফলতার সাথে।

ক্যামেরার যাদুকর মাহফুজুর রহমান খান, দশ-দশবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। যেসব ছবির জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন- অভিযান (১৯৮৪), সহযাত্রী (১৯৮৭), পোকামাকড়ের ঘরবসতি(১৯৯৬), শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), দুই দুয়ারি (২০০০), হাজার বছর ধরে (২০০৫), আমার আছে জল (২০০৮), বৃত্তের বাইরে (২০০৪), ঘেটুপুত্র কমলা (২০১২) ও পদ্মপাতার জল (২০১৫)। এছাড়া আটবার বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার ও কয়েকবার প্রযোজক সমিতির পুরস্কার এবং একবার বিশেষ বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন।

ব্যক্তিজীবনে মাহফুজুর রহমান খান ১৯৭৮ সালে ড. নিরাফাত আলম শিপ্রাকে বিয়ে করেন। শিপ্রা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০০১ সালের ২৭ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। দাম্পত্য জীবনে তারা নিঃসন্তান ছিলেন।


মন্তব্য করুন