Select Page

শিল্পীর গল্প

শিল্পীর গল্প

‘ঐ মেয়েটি বড় সুন্দরী, ইচ্ছে করে তার প্রেমে পড়ি। প্রথম দেখায় তারে লাগল ভালো, মনটা হলো চুরি।’

হুম, মেয়েটি বড় সুন্দরী। ‘প্রিয়জন’ ছবির এ গানের সুরেই তার পরিচয় দেয়া ভালো। তাকে প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে লং ড্রাইভে যেতে যেতে গানে গানে পরিচয় দেয় রিয়াজ। নাম তার শিল্পী। আমাদের বাণিজ্যিক ছবির অন্যতম নায়িকা।

ডাগর চোখের নায়িকা শিল্পী। চোখ দুটো দেখলে শিল্পীর তুলিতে আঁকাই মনে হয়। ঐ গানে তার আরো সৌন্দর্যের কথা বলা হয়েছে –

‘চোখে তার কবিতার জাগে ভাষা, হাসি দেখে মনে হয় মোনালিসা।’

মায়ের দেওয়া নাম ছিল শিল্পী। নামটা পরিবর্তন করার দরকার হয়নি। ঐ নামেই চলচ্চিত্রে এসেছে। মোট ছবির সংখ্যা ৩৬। প্রথম ছবি ‘নাগ নর্তকী’, ১৯৯৪ সালে। উল্লেখযোগ্য ছবি: লাভ লেটার, বাংলার কমান্ডো, কত যে আপন, বাবা কেন চাকর, প্রিয়জন, গৃহবধূ, লম্পট, শেষ প্রতীক্ষা, মুক্তি চাই, ক্ষমা নেই, সুজন বন্ধু, মিথ্যার মৃত্যু, প্রেমের নাম বেদনা, শক্তের ভক্ত, রাজপথের রাজা, হিরো নাম্বার ওয়ান, কে আমার বাবা প্রভৃতি।

অমর নায়ক সালমান শাহর বিপরীতে ছিল ‘প্রিয়জন’ ছবিতে। জনপ্রিয় ছবি। দর্শক তাকে ‘সালমানের নায়িকা’ বলে বিষয়টা তার পছন্দ। একটা সাক্ষাৎকারে শিল্পী একথা বলেছে। সালমানের স্মৃতিচারণে বলেছে-‘শুটিংয়ের জন্য আমি এফডিসিতে ঢুকব এমন সময় দেখি সালমান গাড়ি নিয়ে ঢুকছে। গাড়ি থামিয়ে নেমে বলত কেমন আছি। খুব সরল ভালো মানুষ ছিল সালমান। দর্শক ভালোবেসে সালমানের নায়িকা বলে খুব ভালো লাগে।’

বাপ্পারাজের সাথে শিল্পীর জুটি গড়ে উঠেছিল। বাবা কেন চাকর, মিথ্যার মৃত্যু, কত যে আপন, প্রেমের নাম বেদনা এ ছবিগুলোতে দুজনের রসায়ন খুবই ভালো। ‘মিথ্যার মৃত্যু’ ছবিতে শিল্পী কালি মেখে কালো হয়ে থাকত। একদিন বৃষ্টিতে কালি মুছে গেলে তাকে সুন্দরী দেখা যায়। বস্তির সবাইকে বাপ্পা জানিয়ে তাকে যেন আর কালি না বলে। তাকে সে ভালোবাসে এবং তার দিকে যেন কেউ না তাকায়।

‘প্রেমের নাম বেদনা’ এ জুটির সবচেয়ে ভাইটাল কাজ। দুজনকেই জীবন দিতে হয়। বাপ্পা নিষিদ্ধ পল্লীতে আসার পর ঘটনাক্রমে শিল্পীও আসে। বাপ্পার অতিরিক্ত মদ খাওয়া ও অসুস্থতা দেখে তাকে পরামর্শ দেয় শিল্পী। দেয়ালের আড়াল থেকে বাপ্পা-শিল্পীর কথা চলে। একসময় বাপ্পা পরিচয় জানতে চাইলে শিল্পী বলে না। বাপ্পা জোর করে জানতে গেলে মুখ ঘুরিয়ে শিল্পীকে আবিষ্কার করে। ‘তোমরা সবাই থাকো সুখে’ এ টাচি গানে বাপ্পা নিচে মদ হাতে গান গায় আর দোতলায় এপাশ-ওপাশ করে কাঁদে শিল্পী। অসাধারণ ছিল শিল্পীর অভিনয়।

শেষ প্রতীক্ষা, শক্তের ভক্ত, রাজপথের রাজা ছবিতে ছিল মান্নার বিপরীতে। ‘শেষ প্রতীক্ষাৱয় দিতির বোনের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছে। দিতির ছেলেকে তার কাছে রাখে এবং ছেলেকে নিয়ে দুই বোনের সাথে মান্নাকে জড়িয়ে শিল্পীর দ্বন্দ্ব জমে ওঠে।

রুবেলের বিপরীতে মুক্তি চাই, লম্পট, ক্ষমা নেই, ওমর সানীর বিপরীতে ‘গৃহবধূ’, আমিন খানের বিপরীতে বাংলার কমান্ডো, সুজন বন্ধুতে ছিল। এ ছবিতে কোচোয়ান চরিত্রে থাকে। অনেক কথা বলে কিন্তু কথা শেষ হলে বলে, ‘বেশি কথা বলা আমি একদম পছন্দ করি না।’

শিল্পী লেডি অ্যাকশন ছবিও করেছে। মুক্তি চাই, শক্তের ভক্ত ছবিতে তার অ্যাকশন ছিল চোখে পড়ার মতো, অভিনয়ও খুব ভালো করেছে। বিশেষ করে ‘শক্তের ভক্ত’ ছবিতে মান্নার চেয়ে শিল্পীর চরিত্রের গুরুত্ব ছিল বেশি।

শিল্পীর ছবির জনপ্রিয় কিছু গান— এ জীবনে যারে চেয়েছি, ঐ মেয়েটি বড় সুন্দরী, ও সাথীরে তুমি ছাড়া ভালো লাগে না – প্রিয়জন; তোমরা সবাই থাকো সুখে – প্রেমের নাম বেদনা; একলা কোনো কথা আমি বলতে পারি না, ভালোবেসে দেখো জীবন দিয়ে দেবো – বাবা কেন চাকর; আমি তোমারই প্রেম ভিখারি – রাজপথের রাজা; তুমি আমার কত যে আপন – কত যে আপন; বন্ধু তিনদিন পর – বাংলার কমান্ডো; এইতো আমি আছি তোমারই কাছাকাছি – কে আমার বাবা।

শিল্পী কিছু টিভি নাটকেও অভিনয় করেছে। বিটিভির ‘ঈদ আনন্দমেলা’সহ অন্যান্য অনুষ্ঠানেও তার নাচের পারফরম্যান্স ছিল।

ভালোবেসে নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে শিল্পী। পরিবার নিয়েই তার বর্তমান ব্যস্ততা। শিল্পী বাণিজ্যিক ছবির উল্লেখযোগ্য নায়িকা হয়ে থাকবে।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন