শ্যাম বেনেগাল বানাবেন বঙ্গবন্ধুর জীবনী, আশঙ্কা কোথায়?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক বাংলা ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন ভারতের পরিচালক শ্যাম বেনেগাল। সোমবার সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সাংবাদিকদের এতথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী এই চলচ্চিত্র পরিচালনায় বাংলাদেশের তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল তাকে সহযোগিতা করবে। পাণ্ডুলিপি তৈরির পর বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের দেখিয়ে নিয়ে মূল কাজ শুরু হবে।’
বঙ্গবন্ধুর জীবনীচিত্র নির্মাণে ভারতের পক্ষ থেকে পরিচালক শ্যাম বেনেগাল, গৌতম ঘোষ এবং কৌশিক গাঙ্গুলীল নাম প্রস্তাব করা হলেও পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ ও দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পাওয়া শ্যাম বেনেগেলকেই বেছে নিয়েছে বাংলাদেশ।
খবরটি প্রকাশের পর বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। ফেসবুকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট দিয়েছেন নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। সেখানে কিছু বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
উজ্জ্বল লেখেন, ‘একটা বিষয় মাথায় রাখা দরকার -ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বায়োপিক ভাল বনানোর রেকর্ড নাই। চাটুকারীতা আর দলাদলীর কালচারে সেটা সম্ভবও নয়! মহাত্মাগান্ধী’র বায়োপিক বা নেতাজি সুভাষ বোস এর বায়োপিক -দু’টোই বিলোএ্যাভারেজ ছবি। অথচ নেতাজী’র রহস্যের সন্ধানে বা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে আপনি থ্রিল্ড হবেন! যেসব গ্রন্থ পড়ে আপনি থ্রিল্ড হচ্ছেন, সেটিই সিনেমার পর্দায় এলে এমন ক্লিসে লাগছে কেন! কই লিংকন দেখেতো হতাশ হতে হয়নি!
আমার কি মনেহয় -সিনেমা সরকারি প্রকল্প হবার জিনিষ নয়! কয়েকজন আমলা মিলে ঠিক করে ফেল্লেন অমুক নির্মাতা যোগ্য, আর অমনি সে যোগ্য হয়েগেল -তাহলে ২৪ ঘন্টা যারা চলচ্চিত্র নিয়ে মগ্ন থাকেন, তাদের অযথা এসব করার দরকার কি!
আরেকটা বড় বিষয় হলো ১০ বছর টানা দেশ শাসন করে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের ন্যুনতম উন্নয়ন সাধনের চেষ্টা না করে হঠাৎ একজন মহানায়ককে নিয়ে সিনেমা বানানোর উদ্যগ নিয়ে কী লাভ! বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করবার মত সিনেমা হল কি এই দেশে আছে, নাকি আছে একটা যুগোপযেগী বিপনন ব্যবস্থা!
অসমাপ্ত আত্মজীবনী আমি অসংখ্যবার পড়েছি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বানানো ছবি’র তো লিংকনকে ছাপিয়ে যাওয়ার কথা, কী ছিল না এই মহানায়কের জীবনে! শৈশব কৈশরের দুরন্তপনা, বাবার দলের বিপরীতে ফুটবল খেলতে নেমে যাওয়া, দেশ ভাগের সময় বেকার হোস্টেল থেকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সেচ্ছাসেবী হয়ে কাজ করা, নৌপথে দফায় দফায় এক জেল থেকে আরেক জেলে চালান হওয়া, পকেটে নামমাত্র টাকাপয়সা নিয়ে ভারতবর্ষ আবিস্কার করতে বেরিয়ে পড়া, ভূখা মিছিল, ৭ই মার্চ এর ভাষণ!
একবার চোখ বন্ধ করে ঐ দৃশ্যটি ভাবুনতো -বঙ্গবন্ধু করাচী থেকে শহীদ হোসেন সোহরাওয়ার্দীর সংগে মিটিং করে ফিরছেন। ট্রেনে ফেরার পথে খুলনা স্টেশন থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হবে তিনি আগে থেকেই জানতেন। সুতরাং সদ্যপরিচিত একজন সহযাত্রীকে নিজের মালপত্র বুঝিয়ে দিয়ে লুঙ্গি পরে, কোমরে গামছা বেঁধে কুলি সেজে আগের স্টেশনে লাফিয়ে নেমে পড়লেন বঙ্গবন্ধু! কি থ্রিল্ড হলেন না!
তাহলে এই ছবি নিয়ে আমার আশঙ্কার জায়গাটা আসলে কোথায়? এটা ভাই হলিউড না -যে লিংকন হোক আর কেনেডি -ছবি সাকসেসফুল করাটাই মুল কথা! আশঙ্কাটা সেখানেই!
এদেশে সরকারি নজরে আসার ক্ষমতা তাঁরাই রাখেন যারা ফিল্মটা বাদ দিয়ে নজরে পড়ার বিদ্যার্জনে ব্রতী থাকেন। গৌতম ঘোষকে ডেকে এনে লালন সাঁইজীর বায়োপিকের ১৪টা বাজিয়েছেন একবার, এবার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কি হয়, সে ভয়তো করবেই !
বিদেশী পরিচালক নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই, কিন্তু পরিচালকের উচিত হবে ২-৪ বছর বাংলাদেশের ৬৪টা জেলা ঘুরে প্রবীণদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা। খালি কিছু ইতিহাস পাঠ করে বঙ্গবন্ধু’র সিঁকিভাগও আবিস্কার করা যে যাবেনা, সে বিষয়ে আমি শতভাগ নিশ্চিত।’