Select Page

‘আয়েশা’ ডিলেমায় ফেলে দিলো

‘আয়েশা’ ডিলেমায় ফেলে দিলো

একজন আয়েশা জালে আটকা পড়া, আর বাকিদেরও কেবল শুধু মুখটাই মুক্ত সহানুভূতি দেখানোর জন্য।

আনিসুল হকের ‘আয়েশামঙ্গল’ অবলম্বনে ফারুকীর কামব্যাক টিভি ফিকশন ‘আয়েশা’ দেখলাম, দেখেই গেলাম। ফারুকীর ‘ডুবের’ পর আরও একটা প্রচন্ড ম্যাচিওর্ড কাজ। বলতে গেলে ডুবের রিইউনিয়ন, ফারুকীর ডিরেকশন-তিশার অভিনয়, শেখ রাজিবুল ইসলামের ক্যামেরার ভেলকী আর ‘চিরকুটের’ পাভেল অরিনের মিউজিক।

তিশার প্রায় কাছাকাছি একটা পারফরমেন্স দেখেছিলাম গত বছর প্রায় এই সময়েই ‘বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো’তে। আমাদের প্রজন্মটা যেই সময়টাতে টিভি দেখে বড় হয়েছে সেই সময়ের দুইজন সেরা অভিনেত্রী নিঃসন্দেহে- জয়া আহসান আর নুসরত ইমরোজ তিশা। জয়া আহসানের উপরতো কলকাতার দৃষ্টি পড়ার পরেইতো ওপারের হয়ে গেলেন। তিশার ক্ষেত্রেও যদি এমনটা হয় তাহলে অবাক হবো না। আসলে এখানে বসে থেকে কেনইবা সস্তা চরিত্রগুলো করে নিজের অপচয় করবেন।

যাই হোক, নাটকের নামচরিত্রে যেমন তিশা তেমনি পুরো নাটকজুড়েই তার উপস্থিতি।আর অভিনয়? সেটুকু জাজ আর করতে পারলাম কই, পুরোটা সময়ইতো মন্ত্রমুগ্ধের মতো ডুবে ছিলাম। শুধু একটা জিনিস মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে তাই বলি,’চিড়িয়াখানা’ ছবির জন্য উত্তম কুমার ১৯৬৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ওই ছবিতে ব্যোমকেশ বক্সীর চরিত্রে কেবল কথার মাঝে ‘আ’ বলে বিরতি নিয়ে আর হাত দিয়ে মুখ আর গলা চুলকে যেন চরিত্রটায় অন্যরকম প্রাণের সঞ্চার করেন। আর এখানে আয়েশার ডায়ালগ ডেলিভারিতে বারবার ঢোঁক গেলাটাও চরিত্রটাকে অদ্ভুত সুন্দরভাবে জীবন্ত করে তুলেছে।

ফারুকীর কাজ নিয়ে আমার সবসময়কার একটা অভিযোগ ছিলো যে তিনি কাজের শুরু থেকে শেষ অবধি সুতোটা নাটাইতে ধরে রাখতে পারতেন না, হয়তো কেবল আমারই এমনটা মনে হতো। কিন্তু ডুব আর আয়েশার পর আমার অতিকষ্টে ধরা এই খুঁতটাকেও বোবা করে দিলেন। মাইন্ডব্লোয়িং শব্দটাও কেমন জানি যথেষ্ট না বিশেষণ হিসেবে। আর পার্টটাইম আবৃত্তিকার ফারুকীকেও পাওয়া গেলো।

কিন্তু সত্যি বলতে এসবের বাইরেও একটা অভিযোগ আছে ফারুকী কিংবা তার সময়ের আতিক, অমিতাভ রেজা, মেজবাউর সুমন, উজ্জ্বল কিংবা গিয়াসউদ্দীন সেলিমদের নিয়ে, দেশের দর্শকরা প্রস্তুত নয় বলে ফিল্মের গল্পকে টিভিতে প্র্যাকটিসের নামে টিভিকেই প্লে-গ্রাউন্ড বানিয়ে দর্শকদের অদ্ভুত এক ডিলেমায় ফেলে দিয়েছেন। ওরা ফিল্মে এখন এমন গল্পই দেখতে চায়, কিন্তু আবার এই গল্পকেই ফিল্মে দেখলে বলবে নাটক। এই সাইকোলজিক্যাল ক্রাইসিসের দায় আপনাদেরই। আমি ‘আয়েশা’ দেখার পর ভাবছিলাম এটা যদি ফিল্ম তো তবে আর বাড়তি কি থাকতে পারতো?

হয়তো মূল উপন্যাসের বিয়ের সময়ের যে খুনসুটি আর কমেডিগুলো ঝেড়ে ফেলা হয়েছে সেগুলো এসে একটু লেংথটা বাড়াতো আর ১৯৭৭ এর সময়টাকে ধরতে গেলে যে প্রপসগুলোর দরকার ছিলো তা হয়তো পাওয়া যেত, তাহলে আর বিস্কুট ফ্যাক্টরীকে বিমান সদরদপ্তর, র‌্যাঙ্ক-ব্যাজবিহীন ইউনিফর্ম আর বেসিনে লোহার বদলে প্লাস্টিকের ট্যাপ দেখানো লাগতো না। ব্যাস, এটুকুই।

এতোটা সচল স্ক্রীপ্ট আর ডিরেকশনের জোরটাই ফারুকীর টিভিতে কামব্যাকটাকে অন্য মাত্রা দিলো। আর হ্যাঁ, আবারও আমাকে ডিলেমায় ফেলে দিলো, ভাঁড়ামো আর ফাতরামির যুগে টিভিতে যেমন এই ধরনের কাজ দেখতে চাচ্ছি ঠিক সেভাবেই এই কাজগুলোকে আসল জায়গায় অর্থাৎ ফিল্মেও দেখতে চাচ্ছি।


মন্তব্য করুন