সংক্ষিপ্ত রিভিউ: নকশি কাঁথার জমিন
আকরাম খান পরিচালিত ‘নকশি কাঁথার জমিন‘ প্রদর্শিত হয়েছে বিদেশের একাধিক উৎসবে, পেয়েছে পুরস্কারও৷ সে সিনেমা নিয়ে সংক্ষিপ্ত রিভিউ চলচ্চিত্রকার মোনালিসা দাশগুপ্ত। ফেসবুক থেকে নেয়া রিভিউটি পড়ুন
নন্দিত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ‘বিধবাদের কথা’ গল্পের ওপর নির্মিত ‘নকশিকাঁথার জমিন’ সিনেমাটি আমি প্রথম দেখেছিলাম গতবছরের গোয়া ফিল্ম ফেস্টিভালে ( International Film Festival of India, Goa)। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভুমিকায় নির্মিত বেশ কিছু ভালো ভালো ছবি দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, কিন্তু “নকশী কাঁথার জমিন” আমার মনে বিশেষ স্থান নিয়েছে কেননা এতে মুক্তিযুদ্ধে নারীর আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
বাইরে যখন প্রবল যুদ্ধে প্রতিদিন দুই পক্ষের মানুষ নির্দয় ভাবে মারা যাচ্ছে, তখন পরিবারের ভিতরেও শুরু হয়েছে দুই মতাবলম্বী ভাই ও তাদের ছেলেদের ভিতর তীব্র ঘৃণা ও শত্রুতা। এই থেকেই সূত্রপাত গৃহযুদ্ধের। ঘরের শত্রু বিভীষণ । এসবের ভেতর দিয়ে দুই বোনের সম্পর্ক, তাদের অসহায়ত্ব আর সংগ্রামের গল্প নিয়েই চলচ্চিত্র ‘নকশি কাঁথার জমিন’। ছবিটি দেখতে দেখতে আকরাম খানকে বাংলাদেশের এক ব্যতিক্রমী শক্তিশালী পরিচালক বলে আমার মনে হয়েছে । উনার চিন্তাভাবনা ও মননশীলতার পরিচয় স্পষ্ট এই ছবিতে।
এতে কেন্দ্রীয় দুই বোনের চরিত্রে অসাধারন অভিনয় করেছেন জয়া আহসান ও ফারিয়া শামস সেওতি। জয়াকে দেখলাম কীভাবে চোখের পাতা না ফেলে চোখের মণিকে স্থির রেখে শুধুমাত্র ফেসিয়াল এক্সপ্রেশান দিয়ে তীব্র ক্রোধ বা তীব্র ঘৃণা ফুটিয়ে তুললেন! এই টেকনিক আমি শিখেছিলাম নিউ ইয়র্ক ফিল্ম একাডেমিতে পড়াশুনা করবার সময়ে। খুব সহজ কাজ নয়!
পরিচালকের পরিচালনার মুনশিয়ানার তারিফ করতেই হয়। এই চলচ্চিত্রে জয়া যদি চাঁদ হন, চাঁদের হাটে বাকি সব চরিত্র একেকটি উজ্জ্বল তারা। সব্বাই যে যার সেরাটুকু দিয়েছেন।
জয়ার ছোটবোনের চরিত্রে অসাধারন অভিনয় করেছেন ফারিয়া শামস সেওতি। এতে আরও আছেন ইরেশ যাকের, রওনক হাসান, দুই ভাই দিব্য জ্যোতি, সৌম্য জ্যোতি, লাবণ্য চৌধুরী, আদ্রিতা ইবনাত খানসহ অনেকে। এদের অনেককেই আমি মিট করেছিলাম গোয়াতে !
ডিওপি বরকত হোসেন পলাশ ছবির প্রটিটি ফ্রেমকে পিকচার পোস্টকার্ড বানিয়েছেন তার লাইট ও ক্যামেরার অনুপম দক্ষতায় – নকশি কাঁথার জমিনে ফুটে উঠা গাছ, ফুল, পাখি কিংবা লতাপাতার ছবির মতো এই সিনেমার ক্যানভাসে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায় ফুটিয়ে তুলেছেন একটি ফুল, যার নাম “নকশি কাঁথার জমিন”।
ছবির সকল কলাকুশলীদের জানাই আমার ভালোলাগা ও আন্তরিক শুভেচ্ছা ।