সংগীত কিংবদন্তি আলম খান আর নেই
বরেণ্য সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলম খান আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শুক্রবার সকাল ১১টা ৩২ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বাংলা গানে অবিস্মরণীয় অবদান রাখা এই সংগীতজ্ঞের বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
আলম খান কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী পপগুরু-খ্যাত আজম খানের বড় ভাই। তিনি সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
১৯৪৪ সালের ১০ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আলম খান। ছোটবেলাতেই একটি অর্কেস্ট্রা গ্রুপে বাদ্যযন্ত্র বাজনা শেখেন তিনি। সেখানে প্রথম সারেগামার হাতেখড়ি হয়। পরবর্তীতে ওস্তাদ ননি চ্যাটার্জীর কাছে তালিম নেন।
১৯৬১ সালে মঞ্চ নাটক ‘ভাড়াটে বাড়ী’তে আবহ সংগীতের কাজ করেন আলম খান। সেখানে সংগীত থেকে তার প্রথম রোজগার। এরপর টেলিভিশনে শিশুদের অনুষ্ঠানে কাজ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের বছর খানেক আগে আবদুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজিত টেলিভিশনের প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’ এর সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব পান।
টেলিভিশনের নাটকেও দারুণ সফল হলেন যার ফলে পরবর্তীতে আবদুল্লাহ আল মামুনের মঞ্চ নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘ইডিয়ট’ সহ বেশ কিছু নাটকের সংগীত পরিচালনা করেন।
১৯৭০ সালে পরিচালক আব্দুল জব্বার খানের ‘কাঁচ কাঁটা হীরে’ছবিতে সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে রূপালি পর্দায় কাজ করা শুরু করেন আলম খান। এরপর ধীরে ধীরে ঢালিউডের অন্যতম সংগীত পরিচালক হিসেবে স্থায়ী আসন পান।
আলম খানের সুর ও সংগীত পরিচালনায় সৃষ্ট অসংখ্য গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো— ওরে নীল দরিয়া, হীরামতি হীরামতি ও হীরামতি, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস, আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, কী জাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা, বুকে আছে মন, তুমি যেখানে আমি সেখানে, সবাই তো ভালোবাসা চায়, ভালোবেসে গেলাম শুধু, চাঁদের সাথে আমি দেবো না তোমার তুলনা, আমি একদিন তোমায় না দেখিলে, আজকে না হয় ভালোবাসো আর কোনদিন নয়, তেল গেলে ফুরাইয়া, আমি তোমার বধূ তুমি আমার স্বামী, জীবনের গল্প বাকি আছে অল্প, তিন কন্যা এক ছবি, মনে বড় আশা ছিল, দুনিয়াটা মস্ত বড়, ও সাথীরে যেও না কখনো দূরে, বেলি ফুলের মালা পরে, কাল তো ছিলাম ভাল, ওরে ও জান আমারই জান, চুমকি চলেছে একা পথে, ভালোবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া ও তুমি কি এখন আমারই কথা ভাবছো।
আলম খান শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ‘বড় ভাল লোক ছিল’ (১৯৮২), ‘তিন কন্যা’ (১৯৮৫), ‘সারেন্ডার’ (১৯৮৭), ‘দিনকাল (১৯৯২) এবং ‘বাঘের থাবা’ (১৯৯৯) ছবিগুলোতে। শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে ২০০৮ সালে পেয়েছেন ‘কি জাদু করিলা’ ছবির জন্য।