Select Page

সবার মেরুদণ্ড সোজা থাকে না, আশফাক নিপুণেরটা থাকে

সবার মেরুদণ্ড সোজা থাকে না, আশফাক নিপুণেরটা থাকে

নির্মাতা আশফাক নিপুণ ইনক্রিডেবল, এটা মহানগরের প্রথম সিজন দেখেই লিখেছিলাম। সেটা আর নতুনভাবে লেখার প্রয়োজন পড়ছে না কারণ ইতোমধ্যেই তা এপার-ওপার দুই বাংলার মানুষরাই জানেন। আমি বরং একটু ভিন্ন কথা বলি।

নিপুণের প্রসঙ্গে আমার শ্রীজাতের কয়েকটা লাইন মনে পড়ে যায়-
“মানুষ থেকেই মানুষ আসে
বিরুদ্ধতার ভিড় বাড়ায়,
তুমিও মানুষ, আমিও মানুষ
তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়।”

একটি জাতীয় দৈনিক নিষেধাজ্ঞার দাবিতে এই ঘুণেধরা রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং এর ফ্যাসিবাদী শাসকদের অপকর্মের পক্ষ নিয়ে যেখানে মাত্র কিছুদিন আগেই গুটিকয় শিল্পীদের ব্যানার হাতে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে দেখেছি, সেখানে আশফাক নিপুণ তার নিমার্ণের মাধ্যমে নিজের আর অন্যের তফাৎটা স্পষ্ট দেখালেন।

দূর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন! ক্ষমতাসীনদের নোংরা, পচে যাওয়া রাজনীতি। একপেষী টাকার পাহাড় বানানো বিত্তশালীদের অপরাধ আর অপকর্মের বলি হওয়া নিরীহ মানুষদের অসহায়ত্ব এবং সমসাময়িক বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাবলীকে সাহসীকতার সঙ্গে এভাবে পর্দায় তুলে আনার শক্তি, সাহস ও সততা আমার ধারণা সবার হয় না। নিপুণের হয়েছে। উনি পেরেছেন। সামনে আরো পারবেন।

এর আগেও লিখেছিলাম, আবার লিখছি। যেকোনো সৃষ্টি তখনই আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করবে, যখন তা হৃদয়ে ধারণ করে সৃষ্ট অথবা নির্মিত হবে। রাজনৈতিকভাবে একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আশফাক নিপুণ তার নির্মাণে সেই ছাপ রেখেছেন। এরজন্য তাকে হয়তো অনেককিছু ফেস করতে হয়েছে, সেটা ঠিকঠাক না জানলেও অনুমান করতে পারি। হয়তো সামনেও তাকে অনেককিছু সহ্য করতে হবে। মানুষ হিসেব সৎ, স্বচ্ছ এবং সত্য থাকলে আমার ধারণা এসব প্রতিবন্ধকতায় উনি বিচলিত কখনোই হবেন না। হয়তো হনওনি আগে।

গত সিজনে এত এত গুরুত্বপূর্ণ এবং ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার থেকে এই সিজনে শুধুমাত্র একটি চরিত্র ‘ওসি হারুন’কে নিয়েই গল্প এগিয়ে নেওয়া এবং সেখানে মানুষের মনোযোগ আটকে রাখাটাও চ্যালেঞ্জিংই হওয়ার কথা। সেখানে আশফাক নিপুণ কতটুকু সফল হয়েছেন, সেটা যারা দেখেছেন বা দেখবেন, তারা খুব ভালো করেই বুঝতে পারবেন। আমি নিজের কথা বলতে পারি। প্রচণ্ড হাইপ তোলা ভারতীয় সিনেমা “পাঠান” প্রথম দশ মিনিট দেখতেই আমি বিরক্ত হয়ে উঠেছিলাম, শেষ পর্যন্ত দেখতে হয়েছে ভিন্ন কারণে। আমার মতো মানুষের চোখ যদি ক্লান্তিহীনভাবে কোনো নির্মাতা নয়টা এপিসোডে আটকে রাখতে পারেন, উনি আমার ব্যক্তিগত হিসাবের খাতায় তো অবশ্যই দুর্দান্ত সফল।

বেশ কিছু নতুন চরিত্র এই সিজনে যুক্ত হয়েছে। তবে মিস করেছি ইন্সপেক্টর মলয়কে। গল্পের প্রয়োজনেই উনাকে রাখা হয়নি হয়তো। মোশাররফ করিম বরাবরের মতো এক্সপ্রেশন মাস্টার! ওসি হারুন একটা ব্র‍্যান্ড ক্যারেক্টার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একা গল্প টেনে নেওয়াও সহজ কাজ না। সেটা উনি করেছেন। আফনান চৌধুরীর চরিত্রটা এই সিজনে খুব কম সময়ের জন্য ছিল। Shamol Mawlaকে তো মাঝে মাঝে আমি আফনান চৌধুরীই ভেবে ফেলি! দ্য ড্যাশিং শ্যামল মাওলা, তার চরিত্রে অনন্য। “ওরে আমার লাগবে”র সিনটা জোস ছিল। ফজলুল রহমান বাবু গুণী অভিনেতা। উনার অভিনয় নিয়ে আলাদা করে লেখার কিছু নেই। বেশকিছু ধাঁধা শেখা গেল উনার বদৌলতে! আফসানা মিমি অত্যন্ত সাবলীল ছিলেন। হওয়ারই কথা। তানজিকা আমিন ও দিব্য জ্যোতিও তাই।

শেষটায় অনিবার্ণ ভট্টাচার্যের আগমন বুঝিয়ে দিলো, মহানগরের এই যাত্রা এখানেই শেষ হচ্ছে না। গড়াবে আরো দূর! কিন্তু অনিবার্ণ ভট্টাচার্য কেন? এটা কি নিপুণের ব্যক্তিগত পছন্দ না হইচই কর্তৃপক্ষের রিকোয়ারমেন্ট? সেটা জানা নেই। অনিবার্ণ নিঃসন্দেহে ভালো অভিনেতা, সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। পর্দায় অনিবার্ণ-মোশাররফ করিমকে একসঙ্গে দেখতে পাওয়াটা অবশ্যই এক্সাইটিং! খেলা সত্যিই হবে! ওসি হারুন হেরে যায় না যেহেতু জানি, ফলে বড়ুয়া বাবুর শেষ শটে ওসি হারুনের কিছু হয়নি বলেই আমার বিশ্বাস! সিজন ৩ পর্যন্ত সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে আগেরবারের মতো অপেক্ষা যেন দীর্ঘতর না হয়, সেই প্রত্যাশা করি!

আবারও অভিনন্দন আশফাক নিপুণ এবং তার টিমকে। এ রকম অভিনন্দন আপনাদের বারবার জানাতে চাই, সাহসী নির্মাণ ও মেরুদণ্ড সোজা করে চলার জন্য। সবশেষে, দুইটা কথা মনে রাখবেন। এক- নিরপেক্ষ বলে কোনো পক্ষ হয় না। নিপীড়িতদের পক্ষে কথা বলতে মেরুদণ্ড সোজা থাকা লাগে। দুই- সবার মেরুদণ্ড সোজা থাকে না, আশফাক নিপুণেরটা থাকে।

মহানগরের তৃতীয় সিজনের জন্য আগাম শুভ কামনা। ❤️


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

মন্তব্য করুন