সব দোষ বুবলিরই!
অল্প সময়ের ব্যবধানে আরো একবার শবনম বুবলির দিকে অভিযোগের তীর ছুড়লেন শাকিব খান। বিয়ে বা ডিভোর্সের কোনো উল্লেখ না করেই জোর দিয়ে বললেন, তাদের মধ্যে সম্পর্ক নেই। এমনকি বুবলির ব্যক্তি জীবন নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করে নিজেকে ‘ষড়যন্ত্রের স্বীকার’ বলে বর্ণনা করেন।
তাদের এখনো সম্পর্ক রয়েছে- এই দাবি প্রসঙ্গে দায় এড়িয়ে সব প্রমাণের ভার দিলেন বুবলিকে। তিনি বলেন, ‘আমি কিছু বলতে চাই না। সে যখন বলছে আমাদের মধ্যে এখনো সম্পর্ক রয়েছে তাহলে সে-ই প্রমাণ দিক।’
‘সম্পর্কের অবনতি’ প্রসঙ্গে স্পষ্ট উত্তর নেই। বরং বুবলির নামে ‘অবৈধ সম্পর্কের’ অভিযোগ তুলে বলেন, ‘সে আমাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেল করে সম্পর্ক, সন্তান, অর্থবিত্ত, নাম সবই করেছে। আমিও তাকে অন্ধ বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু শেহজাদকে জন্ম দেওয়ার পর আমেরিকা থেকে দেশে এসে সে নানা স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়ল। নানা জনের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলল। যা মিডিয়াসহ সবাই জানে। একই সঙ্গে সাড়ে ৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট এবং ৫৬ লাখ টাকার গাড়ির মালিক হলো, হঠাৎ করে এমন বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়া কীভাবে সম্ভব। কেউ যদি বিনা কারণে বিশ্বাসভঙ্গ করে বা বিশ্বাসঘাতকতা করে তাহলে তার সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে কনটিনিউ করা যায় আপনারাই বলুন।’
আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজের ‘অপ্রকাশিত সম্পর্ক’কে যেন টানলেন। বললেন, ‘আমি আসলে সরল মনে অনেককেই বিশ্বাস করেছি। কিন্তু সবাই আমার সরলতাকে দুর্বলতা ভেবে ধোঁকা দিয়েছে। অকৃজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে। আমি এখন আর কারো সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না।’ শুধু দুই সন্তান জয় ও বীরকে নিয়ে বাকি জীবনটা সাধারণ মানুষের মতো পরম শান্তিতে কাটাতে চান বলে জানান।
আব্রাহামের মতো গোপন ছিল শাকিবের দ্বিতীয় সন্তান বীরের জন্মের বিষয়টিও। একই ঘটনা দুইবার ঘটা নিয়ে নিজের দায় নিয়ে বলেন, ‘দেখুন, পার্সোনাল বিষয়কে আমি কখনো ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করতে চাই না। তাই কাউকে কিছু বলিনি। কিন্তু বুবলীকে তো কাউকে বলতে বারণ করিনি। সে কেন তখন এ নিয়ে কিছু বলল না। সে এতটাই ক্রিটিক্যাল মাইন্ডের যে, গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর আমার ছেলে জয়ের জন্মদিনে তার বেবি বাম্পের ছবি প্রকাশ করে আমাকে বিব্রত ও ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করল। একই সঙ্গে নানাজনের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্কের স্ক্যান্ডাল চাপা দিতেই সে তখন হুট করে তার বেবি বাম্পের ছবি প্রকাশ করে বসল। তার মনে যদি কোনো দুষ্ট বুদ্ধি না থাকত তাহলে সে তো আগেই এই ছবি প্রকাশ্যে আনতে পারত। এখন আবার কোন স্বার্থ হাসিল করতে আমার সঙ্গে সম্পর্কের কথা তুলে সে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে।’
সেই সময় অপুর সঙ্গে সম্পর্কের কথা শাকিব বারবার অস্বীকার করে আসলেও এখন বলছেন সেই সম্পর্কের কথা সবাই জানত। সম্পর্কে জড়ানোর জন্যও বুবলিকে দুষে বললেন, ‘(অপুর সঙ্গে বিয়ের কথা গোপন করে সম্পর্ক)তার এই অভিযোগ একদম মিথ্যা। সবাই জানে আমার ও অপুর বিয়ের কথা, অথচ সে জানে না, এটি চরম মিথ্যা ছাড়া আর কি হতে পারে। এ নিয়ে তখন তো অপু তাকে গালাগালও করেছে। একজন লোকের বিয়ে করা বউ থাকার পর কী সে আরেকটি বিয়ে করতে পারে। বুবলি তো নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাকে শুধু সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। এখনো সে নিজেকে আমার স্ত্রী পরিচয় দিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের অপচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। আবারও বলছি সে প্রমাণ করে দিক সে আমার স্ত্রী। বুবলি এখন আমার স্ত্রী নয়, এ কথা আমি আর কতবার বলব।’
তাহলে কী বিয়ে হয়নি! নাকি বিয়ে হলেও ডিভোর্স হয়ে গেছে। এ বিষয়ও ‘সুপারস্টার’ চাপিলিয়ে দিলেন বুবলির ওপর। ‘সেটা সে-ই বলুক। সে যখন এখনো নিজেকে আমার স্ত্রী দাবি করছে, তাহলে সে-ই প্রমাণ করে দিক বিষয়টি।’
বুবলি জানিয়েছিলেন, ঈদের পর একসঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে শাকিব বলেন, ‘শেহজাদের জন্মদিনেও সে জোর করে আমার বাসায় এসেছে। শেহজাদকে তার ন্যানিই আমার বাসায় নিয়ে আসে। অথচ ঈদের দিনও পরিকল্পিতভাবে বুবলি আমার বাসায় এসেছে। যেখানে আমার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই নেই, সেখানে আমার বাসায় সে আসবে কেন? ঈদের দিন বাসায় কেউ এলে তাকে তো আর বের করে দেওয়া যায় না। অথচ এর আগে একবার তাকে ঘাড় ধরে বের করে দেওয়া হয়েছিল। যাক, ঈদের দিন সে এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই একসঙ্গে বাসার সবাই বসে খেয়েছি। তারপর শেহজাদকে নিয়ে গাড়িতে করে যখন বেড়াতে বের হচ্ছিলাম তখন বুবলীও গাড়িতে উঠে পড়ে এবং পেছনের সিটে বসে থাকে। তার রান্না করা বা তার হাতে কোনো খাবারই আমি খাইনি। আসলে সেদিন ঈদের সুযোগ নিয়ে সে আমার বাসায় এসেছিল।’
বুবলিকে চলচ্চিত্রে নিয়ে আসার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা। আমি তাকে চিনতামও না, সে তার মেকাপ আর্টিস্টকে দিয়ে আমার মেকাপ আর্টিস্টকে বলাত সে আমার সঙ্গে নায়িকা হিসেবে ছবিতে কাজ করতে চায়। আমার মেকাপ আর্টিস্ট আমাকে এসে বলত টিভিতে খবর পরে একটি মেয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করতে ও আপনার সঙ্গে অভিনয় করতে চায়। আমি এসব কথাকে কখনো পাত্তা দিইনি। এভাবে অনুরোধ করাতে করাতে প্রায় ৫-৬ মাস কেটে গেল। এক দিন এফডিসিতে ‘রাজনীতি’ ছবির শেষ দিনের শুটিং করছিলাম। হঠাৎ বিকালের দিকে আমার মেকাপ আর্টিস্ট এসে বলল ওই মেয়েটা আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্য সকাল থেকে এসে বসে আছে। তখন মেকাপ রুমে অভিনেতা আহমেদ শরীফ, প্রয়াত সাদেক বাচ্চু ও এ ছবির পরিচালক বুলবুল বিশ্বাসসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। আমি মেকাপ আর্টিস্টকে বললাম আচ্ছা তাকে নিয়ে এসো। মেয়েটি এসে আমাকে তার ইচ্ছার কথা জানাল। শুনে বললাম ভবিষ্যতে সুযোগ হলে দেখব। পরে যখন ‘বসগিরি’ ছবিটি নির্মাণ হতে যাচ্ছিল সেই ছবিতে নির্মাতা একজন নতুন নায়িকা খুঁজছিলেন তখন আমি তাকে বললাম বুবলীর কথা। নির্মাতাই তখন তাকে এনে কাজ করালেন।’
বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই সাক্ষাৎকার ও এমনকি কয়েক দিন আগে প্রথম আলোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তীর্যক কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হননি শাকিব খান। প্রতিবেদক তাকে জিজ্ঞাসা করেননি, এত ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে কীভাবে টিকে থাকলেন? এই সব সম্পর্কের শুরুই বা কীভাবে? কেনই বা বারবার ‘স্ত্রী’-‘সন্তান’কে লুকিয়ে রাখেন? অথবা সব কথা কেন বুবলিকে বলতে হবে?