সাতবার জাতীয় পুরস্কারজয়ী শিল্প নির্দেশক মহিউদ্দিন ফারুক আর নেই
মারা গেছেন সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী শিল্প নির্দেশক মহিউদ্দিন ফারুক। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। একাধিক সংবাদমাধ্যমের কাছে খবরটি নিশ্চিত করেন চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু।
শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই শিল্প নির্দেশক।
ফারুকের পারিবারিক সূত্র জানায়, শেষ তিন-চার দিন ধরে উনার জ্বর ছিলো। তাছাড়া আগে থেকেই উনার হার্টে সমস্যা ছিলো, এই সময়ে এসে স্ট্রোক করেছেন ধারণা করছেন তারা।
এদিকে করোনা উপসর্গে মহিউদ্দিন ফারুকের মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, মৃত্যুর আগে তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। নিশ্চিত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু কিনা পরীক্ষার জন্য আইসিডিডিআর,বি তে পাঠানো হয়েছে।
শিল্প নির্দেশনার বাইরে ‘বিরাজ বৌ’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে পরিচালক হিসেবেও সুনাম অর্জন করেন তিনি। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ‘ফিল্ম এন্ড মিডিয়া’ ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মহিউদ্দিন ফারুক ১৯৪১ সালের ৩ মার্চ মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়ার আড়ালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আয়েত আলী সরকার ও মা দুধমেহের খানম। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। ২ ভাই ১ বোনর মধ্যে তিনি সবার ছোট। নিজ গ্রামের আড়ালিয়া প্রাইমারি স্কুলে তার লেখাপড়ার হাতে খড়ি।
বিভিন্ন স্কুল পেরিয়ে ১৯৫৮ সালে ঢাকার মুসলিম হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন তিনি। এরপর জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৬০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে তৎকালীন ঢাকা আর্ট কলেজে ভর্তি হন। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা, অভিনয়, ছবিআঁকা এসবের প্রতি ঝোঁক ছিল তার। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন মঞ্চনাটকের দল ‘থিয়েটার’ এর সাথে যুক্ত হন তিনি। যুক্ত ছিলেন প্রগতিশীল রাজনীতির সাথেও।
বিশ্ববিদ্যালয় পাসের আগেই সুইডেন-পাকিস্তান ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার প্রজেক্টে চাকরি পেয়ে যান তিনি। ১৯৬৫ সালে চারুকলার পড়ালেখা শেষ করে ১৯৬৭ সালে তৎকালিন পাকিস্তান টেলিভিশনে যোগদান করেন। ২০০০ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানেই যুক্ত ছিলেন মহিউদ্দিন ফারুক।
চলচ্চিত্রে শিল্প নির্দেশনার জন্য সবচেয়ে বেশি সুনাম অর্জন করেন তিনি। উদয়ন চৌধুরীর ‘পুনম কি রাত’ ছবিতে শিল্প নির্দেশক হিসেবে তার চলচ্চিত্র জগতে যাত্রা আরম্ভ। এরপর প্রায় ২০০ চলচ্চিত্রে শিল্প নির্দেশনা দিয়েছেন। বসুন্ধরা (১৯৭৭), ডুমুরের ফুল (১৯৭৮), পিতা মাতা সন্তান (১৯৯১), পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯৩), দুখাই (১৯৯৭), মেঘলা আকাশ (২০০১) এবং মনের মানুষ (২০১০) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন চলচ্চিত্রে বাচসাস পুরস্কার, প্রযোজক সমিতি পুরস্কার-সহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন মহিউদ্দিন ফারুক।
ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৬৫ সালে তিনি ফাতেমা আক্তার বানুকে বিয়ে করেন। তাদের ১ মেয়ে ও ২ ছেলে।