সাপলুডু: জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক নাজিম উদ দৌলা যা বললেন
এটা মুভি রিভিউ পোস্ট না। আসলে কিছু কষ্টের কথা শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। অনেক ডিরেক্টর আমাকে বলেন, “ভাই একটা মাথা নষ্ট করা গল্প দিন, সিনেমা বানাবো”। আমি খুব উৎসাহী হয়ে, খেটেখুটে টুইস্টে ভরপুর জমজমাট গল্প দাঁড় করাই। তারপর ডিরেক্টর গল্প শুনে বলেন, “এই গল্পে তামিল-তেলেগু সিনেমা হতে পারে, বাংলাদেশে চলবে না ভাই”। আমি হতাশ হয়ে যাই! খুব রাগ হয় এই ইন্ডাস্ট্রির ডিসিশন মেকারদের উপর। কিন্তু আজ বুঝলাম তারা আসলে ঠিকই বলেন!
সাপলুডু মুক্তি পেয়েছে গতকাল। মুক্তির পরপরই বেশ কিছু ভালো রিভিউ দেখলাম। দেখার ইচ্ছে জাগলো। অতীতে হাইপ দেখে বাংলা সিনেমা দর্শনের অনেক বাজে অভিজ্ঞতা আছে আমার। তাই আগ্রহের মাত্রা বাড়তে দেইনি। কিন্তু যা দেখলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না! পিওর থ্রিলার! ন্যাকামি নেই, অতি অভিনয় নেই, রং-ঢং নাচগান নেই- আছে একটা জম্পেশ গল্প! দুই তিনটা ছোটো খাটো প্লটহোল, আর কিছু দৃশ্যের আনরিয়েস্টিক ডায়লগ বাদে মুভিটা বেশ উপভোগ্য। একটু বাজেট বেশি পেলে হয়তো কিছু দৃশ্যের আয়োজন আরও ভালো হতে পারতো। তবে যা পেয়েছি তাতে আমি সন্তুষ্ট।
এবার আসি দুঃখের কথায়- আমি সিনেপ্লেক্স পৌঁছালাম ৬টা ৩০-এ। শো ছিলো ৭টা ৫০-এ৷ ভেবেছিলাম টিকেট পাবো না। কিন্তু শুধু যে টিকিট পেয়েছি, তাই নয়! হলে ঢুকে দেখি অর্ধেক সিটই ফাঁকা! হোয়াট দ্যা… মুভি রিলিজ হয়েছে গতকাল, সবাই বলছে ভালো মুভি, আজকে সরকারি ছুটির দিন… অথচ সন্ধ্যার শো-তে অর্ধেক সিট খালি! সাধে কি আর ডিরেক্টররা বলেন যে এই ধরনের সিনেমা বাংলাদেশে চলবে না? আমি খুবই আপসেট! আপনারা অ্যাভেঞ্জারের টিকেট কাটার জন্য জীবন বাজি রাখেন, আর নিজের দেশের একটা ভালো সিনেমা দেখার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই! খুবই দুঃখজনক।
সাপলুডুর প্রযোজনা সংস্থাকে বলবো- সিনেমা শুধু বানালেই হয় না। মার্কেটিং বলেও একটা ব্যাপার আছে। এটা ওভারলুক করে যাওয়াটা বোকামি! বাজেট যদি ১ কোটি হয়, অন্তত ১৫ লাখ রাখতে হবে মার্কেটিং খাতে। আপনারা যদি একটু সময় নিয়ে ঠিকঠাক প্রচারণা চালাতেন, তাহলে প্রেক্ষাগৃহের চিত্রটা অন্যরকম হতে পারতো। সিনেমার পোস্টারগুলোও সাদামাটা, আনাড়িপনার ছাপ! পরিচালক দোদুল ভাইকে বলবো- সাপলুডু ব্যবসা করুক বা না করুক, আপনি একটা সাহসী কাজ করেছেন ভাই। কপি-পেস্টের যুগে আপনি মৌলিক গল্প নিয়ে সিনেমা বানিয়ে দেখিয়েছেন- আমরাও পারি! আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ!
আপনাদের যদি থ্রিলার জনরার মুভি-সিরিজ দেখতে ভালো লাগে, তাহলে সাপলুডু খুবই ভালো লাগবে। আমি একজন থ্রিলার লেখক এবং চিত্রনাট্যকার। আমার কথায় ভরসা রাখতে পারেন। যারা চান বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির সুদিন ফিরে আসুক, তারা অবশ্যই “হলে গিয়ে” সাপলুডু দেখবেন। সাপলুডু যদি হিট না হয় তাহলে কোনো ডিরেক্টর এইরকম পিওর থ্রিলারধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণের সাহস পাবেন না!
(ফেসবুক থেকে)