Select Page

রিভিউ
সাবার নিঃসঙ্গ যাত্রা

<div class="post-subheading">রিভিউ</div>সাবার নিঃসঙ্গ যাত্রা

সাবা নিঃসঙ্গ যাত্রা করা একটি মেয়ে যার ভেতর-বাহির সবটাই অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ছুটে চলেছে। নিজের জগত থেকে বের হবার তার কোনো উপায় নেই, যতই সে উপায় খোঁজে ততই তার চারপাশ আবার অনিশ্চয়তায় ভরে ওঠে।

‘সাবা’ মা ও মেয়ের আবেগঘন গল্পের ছবি। মা তার মেয়ের কাছে কতটা প্রিয় তার একটা গভীর অনুভব পুরো গল্পের মধ্যে ফুটে উঠেছে। মা বিছানায় পড়ে আছে, হুইল চেয়ারই সম্বল। মাকে সুস্থ করতে মেয়ে যতটুকু সম্ভব লড়াই করে যাচ্ছে। তার চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ কিন্তু সে মানসিকভাবে ক্লান্ত নয়। মানসিকভাবে মাকে সুস্থ করাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। কিন্তু পারবে কি সুস্থ করে তুলতে নাকি অন্য কিছু অপেক্ষা করছে তার জন্য!

‘সাবা’ ঠিক ঐ জায়গাতেই দর্শকের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে যেখানে অনেক মানুষও বাস্তবে আপনজনের দেখাশোনার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছে। এখানে সাফল্য বা ব্যর্থতা বলতে কিছু নেই শুধু দায়িত্ব পালনের দিকেই অবিরাম ছুটে চলা। সাবার চরিত্রটি অত্যন্ত সেনসেটিভ। মাকে একটু অসুন্থ দেখলেই তার সব এলোমেলো হয়ে এতটা দায়িত্বশীল।

সাবা-র মা জিদ করে, তর্ক করে, বেড়াতে যেতে চায়। একটা বয়সে পৌঁছে মানুষের যে শিশুসুলভ জিদ আসে চরিত্রটি সে বাস্তবতাই তুলে ধরেছে।

নিঃসঙ্গতা যখন পেয়ে বসে তখন এমন আচরণ যৌক্তিক হয়ে ওঠে। বাস্তবে যাদের মা/বাবারা এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে তারাও এ চরিত্রটিকে নিজেদের সাথে মেলাতে পারবে।

মেহজাবীন ‘সাবা’ ছবিতে তার শক্তিশালী অভিনয়ের ছাপ রেখেছে। যে দৃশ্যে যে অভিব্যক্তি দরকার সেটাই আছে। নিবেদিতপ্রাণ সেবাব্রতী মেয়ের ভূমিকায় বাস্তবে এমন সংগ্রাম যারা করছে তাদের জন্য অনুপ্রেরণা দেয়ার মতো চরিত্র। ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার চেহারায় বাস্তবতার সাথে লড়ে যাওয়ার ছাপ স্পষ্ট ছিল এবং সেভাবেই চরিত্রটি বাস্তবসম্মত হয়ে উঠেছে।

মায়ের ভূমিকায় রোকেয়া প্রাচীর কম সংলাপে নীরবতায় ভেতরের অনেক কথা বলে যাওয়া অভিনয় অসাধারণ। মোস্তফা মনোয়ারের চরিত্রটি গল্পের অন্যতম প্রাণ।

‘দম নিলেই বেঁচে থাকা বলে না’ ছবির এ সংলাপটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল। দম যতক্ষণ আছে নিজের ও কাছের মানুষের জন্য কিছু করা উচিত।

পরিচালক মাকসুদ হোসেনের নির্মাণ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে যেহেতু ছবিটি বিভিন্ন দেশের ফিল্ম ফেস্টিভালে পুরস্কৃত হয়েছে।

সব মিলিয়ে ‘সাবা’ গল্পে, অভিনয়ে, কারিগরি কাজে ‘মাস্টওয়াচ’ ছবি।

মেসেজ: মা-বাবা বেঁচে থাকলে সেবা করুন নয়তো পরে আফসোসের সীমা থাকবে না।

রেটিং – ৮/১০


About The Author

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

Leave a reply