Select Page

সামান্য আয়োজনে দুর্দান্ত ‘জ্বীন’

সামান্য আয়োজনে দুর্দান্ত ‘জ্বীন’

হরর ফিল্ম আমি দেখতে পারি না। ভয় লাগে প্রচণ্ড। হরর ফিল্ম দেখত আমার বন্ধু জনি। জনির কল্যাণেই আমার বেশ কিছু হরর ফিল্ম দেখা হয়। ভুতুড়ে ছবি দেখতে দেখতে আমি কোলে বালিশ চেপে আধমরা হয়ে বসে থাকতাম আর তা দেখে জনি খেকখেক করে হাসত। জনির বাসায় ছবি দেখে রাত-বিরাতে আমার একা বাসায় ফিরতেও ভয় লাগত।

আজ সন্ধ্যায় বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্সে আমি আর সোহেলী নাদের চৌ্ধুরী পরিচালিত জ্বীন ছবিটি দেখলাম। একা আমার পক্ষে এ-ছবি দেখা সম্ভব ছিল না। হলে প্রায় শখানেক দর্শক ছিলেন, সোহেলী পাশে বসা, তাও আমি ভয়ের চোটে হাত-পা গুটিয়ে বসে রইলাম।

বাসায় আসার সময় দেখি রাস্তাঘাট বেশ নির্জন, আগামী তিনদিন সরকারি ছুটি বলেই হয়ত। সিএনজিতে বসেও কেমন ভয় ভয় লাগছিল। আজ রাতে কীভাবে ঘুমাব কে জানে! সোহেলী বলল, এখন তো আর একা বাথরুমে যেতে পারব না।

অল্প কিছু চরিত্র, সামান্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ছবিটি দুর্দান্ত পরিবেশ ফুটিয়ে তুলেছে। প্রথম দিকে কিন্তু অতটা ভালো লাগছিল না। একটা চরিত্র, বাড়ির গৃহপরিচারক, বেশ স্থূলাকার, তাকে নেয়া হয়েছে সম্ভবত লোক হাসানোর জন্য, প্রথম দিকে খুবই বিরক্তিকর লাগছিল, পরবর্তীতে তার জন্য কেন যেন মায়া হয়, শেষ পর্যন্ত তিনি ভালোই অভিনয় করেছেন।

ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র মোনা (পূজা চেরি) আর রাফসান (সজল) স্বামী-স্ত্রী। মোনার মায়ের অমতের কারণে পালিয়ে বিয়ে করতে বাধ্য হয় তারা। বিয়ের পর থেকেই রাফসান খেয়াল করে তার স্ত্রীর কিছু অস্বাভাবিক আচরণ। ধারণা করা হয় তার ওপর জ্বীন ভর করেছে। রাফসান খবর দেয় তার এক মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক বন্ধুকে। প্রথমে তারা এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজতে থাকে, কিন্তু, পরবর্তীতে প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন গল্প বেরিয়ে আসে।

ছোটখাট কিছু ত্রুটি বাদ দিলে পুরো ছবিটি উপভোগ করার মতো। প্রথম দিকে আরেকটু ডিটেইলিং দরকার ছিল। কিছু দৃশ্যধারণ নাটকের মতো হয়ে গেছে। জিয়াউল রোশান অভিনয় করেছেন মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক চরিত্রে, কিন্তু, হেঁটেছেন তিনি ঢাকাইয়া মডেলের মতো। সংলাপেও কিছু দুর্বলতা ছিল। জিয়াউল রোশান বারবার শুধু সাবকনসাস-সাবকনসাস করছিল, অথচ, ওই সব জায়গায় আরো অনেক মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দেয়া যেত, অনেক রেফারেন্স দেয়া যেত। অনেক সময়, বিশেষ করে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন যে-দুজন, দৃশ্যের শেষে কী সংলাপ দিবেন বুঝতে না পেরে চোখমুখের এমন অভিব্যক্তি দিয়েছেন যার কোনো অর্থ হয় না।

ছবির শেষটা মারাত্মক! প্রতি মুহূর্তে টান টান উত্তেজনা আর শিহরণ! একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন এক বয়স্ক ভদ্রলোক, জ্বীন বিশারদ অধ্যাপক চরিত্রে, তাকে আগে কখনো দেখিনি, অসম্ভব সুন্দর অভিনয় করেছেন তিনি।

এরকম এক্সপেরিমেন্টাল একটি কাজ করা নিঃসন্দেহে সাহসী ব্যাপার। তা ছাড়া, বাংলাদেশ তো খুব স্পর্শকাতর একটি জায়গা। কখন কে কোনদিক থেকে আপত্তি করে বসে কে জানে! ধার্মিক ও অধার্মিক দুদলই হয়তো এ-ছবিটি নিয়ে আপত্তি তুলতে পারেন দুজায়গা থেকে।

এ-ছবির কোনো বৈজ্ঞানিক বা ধর্মীয় ব্যাখ্যা খুঁজে লাভ নেই। শিল্প বিজ্ঞান ও ধর্মের বাইরে। শিশুর মতো মন নিয়ে বসলেই আনন্দ লাভ সম্ভব। শিশু হলেই ভয় পাওয়া সম্ভব। ভয়ও শিল্পের এক রস।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

কামরুল আহসান

লেখক, গবেষক ও নাট্যকার

মন্তব্য করুন