Select Page

সিনিয়র শিল্পীরা ‘আপত্তি’ জানালেও তাদের নাম দিয়ে বাতিল হয় পরীমনির সদস্য পদ!

সিনিয়র শিল্পীরা ‘আপত্তি’ জানালেও তাদের নাম দিয়ে বাতিল হয় পরীমনির সদস্য পদ!

মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে বয়কট বা সদস্য পদ স্থগিতকরণ যেন ‘স্বাভাবিক’ ঘটনা। এ পদক্ষেপের শিকার হয়েছেন শীর্ষ নায়ক শাকিব খানও।

এবার পরীমনির বিরুদ্ধে মাদক মামলা হওয়ার পরপরই তার সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। ওই সময় সংগঠনের পক্ষদের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, সিনিয়র শিল্পী আলমগীর, উজ্জ্বল, ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহেল রানাসহ সবার সঙ্গে কথা বলেই চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে অভিনেত্রী পরীমনির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু এখন সোহেল রানা ছাড়া বাকিরা বলছেন, তারা স্থগিতের পক্ষে ছিলেন।

সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে এখন সুর পাল্টাছেন মিশা-জায়েদ। তারা এখন বলছেন ‘কার্যকরি কমিটির সিদ্ধান্ত’।

প্রথম আলো আলমগীর বললেন, ‘আমার সঙ্গে এই বিষয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি। আমি ওই সমিতির উপদেষ্টা পরিষদেরও কেউ না। আই অ্যাম নট এন এক্সিকিউটিভ মেম্বার। আমার নাম কেন জড়ানো হচ্ছে, জানি না। শিল্পী সমিতি থেকে এখন কেউ যদি আমার নাম বলে থাকে, সেটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। আবারও বলছি, আমার সঙ্গে কেউ কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি।’

আলমগীরের সঙ্গে মিশা কথা বলার বিষয়টি অস্বীকার করলে সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, ‘আমরা চলচ্চিত্রের সিনিয়র অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে পরীমনির ঘটনা নিয়ে আলাপ করেছি। তখন একেকজনের কাছ থেকে একেক রকম মন্তব্য শুনেছি। পরে বিষয়টি নিয়ে শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সংসদের সিনিয়রদের সঙ্গে বসেছি। সব শেষে কার্যনির্বাহী সংসদের মিটিংয়ে সবার মতামত নিয়ে সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের সংগঠনের সংবিধান আছে। সংবিধান রক্ষার্থে আমাদের এই সিদ্ধান্ত। এর মানে এই নয় যে আমরা পরীমনির পাশে নেই। কার্যনির্বাহী সংসদের কথা শুনে আমাদের চলতে হয়।’

তবে পাশাপাশি মিশা সওদাগর এ–ও জানিয়ে রাখলেন, ‘আলমগীর ভাইয়ের সঙ্গে কথা না হলেও উজ্জ্বল ভাই এবং সোহেল রানা ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে।’ তারা এ বিষয়ে কী বলেছেন, জানতে চাইলে মিশা বললেন, ‘আমি তো এটা বলব না।’

আগের অবস্থান থেকে ভোল পাল্টিয়ে বলছেন, ‘আমি তো আলমগীর ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে বলিনি। আমার সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি। আলমগীর ভাইয়ের কথা যেহেতু জায়েদ খান বলেছে, এই বিষয়ে তাঁকেই জিজ্ঞেস করা উচিত। আলমগীর ভাইয়ের সঙ্গে কথা না হলেও উজ্জ্বল ভাই এবং সোহেল রানা ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের সঙ্গে আমরা কী কথা বলেছি বা বলিনি, সেটা বিষয় নয়। সদস্যপদ স্থগিতের বিষয়টি তো কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্ত।’

তবে সিনিয়রদের নাম জড়াচ্ছেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি প্রথম আলোর কাছে নীরব থেকেছেন।

অন্যদিকে উজ্জ্বল বলেন, ‘যেকোনো অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহীর কাছে তো কর্তৃত্ব আছে। যে কর্তৃত্বে তারা সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। আমাকে যখন জিজ্ঞেস করেছে, পক্ষ-বিপক্ষে কোনো দিকে যাইনি। বলেছি গো স্লো (ধীরে চলো)। বলেছি, এত তাড়াহুড়ো করার তো কিছুই নাই। যেকোনো একটা ঘটনা ঘটলে তো সেটার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার প্রয়োজন পড়ে না। সে জন্যই বলেছি, গো স্লো, অবজার্ভ হোয়াট ইজ হ্যাপেনিং (ধীরে চলো, দেখো কী ঘটে)।’

এর আগে ইলিয়াস কাঞ্চনও শিল্পী সমিতির বিপরীতে যুক্তি দেন। তিনি বলেন, বলেন, ‘ওদের জিজ্ঞেস করেন, ইলিয়াস কাঞ্চন সাহেব কী বলেছিল? আমি কিন্তু সদস্যপদ স্থগিতের ব্যাপারটি নিষেধ করছি। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, তখন আমি বলেছি, একজন শিল্পীর নামে মাত্র অভিযোগ এসেছে। কোনো কিছুই প্রমাণিত হয়নি। অভিযোগ যখন প্রমাণিত হয়নি, কী কারণে তোমরা সদস্যপদ স্থগিত করবা? তারা আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, আমরা তো স্থায়ীভাবে করছি না। সাময়িকভাবে করছি। তখন আমি বলেছি, এই স্থগিতই–বা কেন করবা। স্থগিত করাটা ঠিক হবে না। স্থগিতের বিষয়ে আমার মত নেওয়া হয়নি। আমাকে বলেছে, অন্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ করবে। অন্যরা কী বলছে, তা তো আমি বলতে পারব না।’

ঘটনার শুরুর পরীমনির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে নয়। এর আগে জাতীয় পার্টির নেতা ও ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টা ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন পরীমনি। তখনও এ নায়িকা সমিতিকে পাশে পায়নি।

আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন বা উজ্জ্বল সদস্য পদ স্থগিতের বিপরীতে মত দিলেও পক্ষে ছিলেন সোহেল রানা। তিনি বলেন, তার মতে, মদসহ এমনভাবে আটক হওয়াটা এটি শিল্পী ও শিল্পের অপমান।

ডিপজল, রুবেল, আহমেদ শরীফের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সমালোচনায় পড়েছে শিল্পী সমিতি। এ ছাড়া পরীমনির বিরুদ্ধে মাদক পরপরই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা গেছে জায়েদ খানকে।

এ দিকে পরীমনির বিরুদ্ধে দায়ের করা মাদকের মামলায় জামিন শুনানির জন্য দীর্ঘদিনের ব্যবধানে (আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করা নিম্ন আদালতের আদেশের যৌক্তিকতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন জানানো হয়েছে।

বুধবার (২৫ আগস্ট) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পরীমনির পক্ষে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান এ আবেদন দাখিল করেন।

আবেদনে পরীমনির জামিন চাওয়া হয়েছে এবং বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।

এর আগে তৃতীয় দফা রিমান্ড শেষে গত ২১ আগস্ট রাজধানীর বনানী থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমণিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমাম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

এ ছাড়া জেড আই খান পান্নার নেতৃত্বে ঢাকার শতাধিক আইনজীবী পরীমনি পক্ষে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।


মন্তব্য করুন