
সিনেমার চরিত্ররাও যেন টিকিট কেটে ‘উৎসবে’ মেতেছে
তানিম নুর ‘উৎসব’-এ বারবার বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে হাজির করেছেন। আমরা এমন সময়ে ফিরে যাই যখন আমাদের সিনেমা হলগুলো ভরপুর থাকতো। ‘শেষ কবে হলে গিয়ে সিনেমা দেখেছেন?’ উক্তিটা যেন জয়া আহসান বাংলাদেশের দর্শককেই করেছেন …
ব্যবসায়ী ইবেনেজার স্ক্রুজ রাগী ও ক্ষ্যাপাটে, সবার সঙ্গে তার সম্পর্ক তিক্ততার। এক বড়দিনের আগের রাতে তার বাসায় হাজির হয় একদল ভুত। যারা তাকে বর্তমানের সঙ্গে অতীত-ভবিষ্যতে নিয়ে যায়। স্ক্রুজ দেখতে পায় জীবনের নানা ঘটনার আবহ, ভাঙতে থাকে তার ভুল। কখনো বড়দিন উদযাপন না করা স্ক্রুজ পরদিন শীতের লন্ডনে নিজেকে নতুনভাবে সাজায়। মেতে উঠে বড়দিনের উৎসবে, হয়ে উঠে সবার প্রিয় একজন।

চার্লস ডিকেন্সের বিখ্যাত নভেলা ‘আ ক্রিসমাস ক্যারল’-এর সারমর্ম লিখতে গেলে এটুকু অন্তত বলতে হবে। ১৮৪৩ সালে প্রথমবার প্রকাশ হওয়া নভেলাটি এখনো জনপ্রিয়। সিনেমা-নাটক নানান ফর্মে দেখা গেছে একাধিকবার। কিন্তু কে ভেবেছিল বাংলাদেশের পরিচালক তানিম নুর সে উপন্যাসের ছায়ায় সৃষ্টি করবেন জাহাঙ্গীর নামের ‘খাইষ্ঠা’ চরিত্রের? তাও পৌনে দুই শতাব্দি পর। একটু ভিন্নভাবে। বড়দিন নয় চাঁদরাতের ঘটনা নিয়ে আমরা দেখি খাইষ্ঠা জাহাঙ্গীর বদলে যাওয়া।
ঈদুল আজহায় মুক্তি পেয়েছে তানিম নুর পরিচালিত ‘উৎসব’। সিনেমাটি হাজিরও হয়েছে উৎসবের আমেজ নিয়ে। একদিকে তারকাখচিত আয়োজন, অন্যদিকে গোটা সিনেমার আমেজটাই উৎসবমুখর।
‘উৎসব’-এর গল্প চরিত্রনির্ভর। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ডেকোরেশন ব্যবসায়ী কাম ইভেন্ট ম্যানেজার জাহাঙ্গীর। শান্তিনীড় এলাকায় তার আবাস। গোটা এলাকার আবালবৃদ্ধবনিতা তাকে অপছন্দ করে। ভীষণ অসামাজিক, কারো ভালো সহ্য হয় না তার। নিজের স্বার্থের বাইরে কিছুই দেখেন না। এলাকার ছেলেমেয়েদের ছাদে মিউজিক প্র্যাকটিস করতে দেন না, কারো বিড়ালের ক্ষতি করেন, চোরা লাইনে বিদ্যুতের তার জুড়ে দেন, মাদ্রাসার এতিমরা সাহায্য চাইতে এলে কর্কশ ভাষায় ফিরিয়ে দেন। এভাবেই চলছে তার দিন। মানুষ মেনে নিয়েছে তিনি এমন। মহল্লা কমিটির সভাপতি তাই সব জেনেও কিছু করেন না। চাঁদরাতে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে ঘটে অদ্ভুত ঘটনা। তার সঙ্গে দেখা হয় তিন ভূতের। শ্রুত আছে, জ্বীনেরা ধরে কোহকাফ নগরে নিয়ে যায়। এ ভূতেরা তা করে না।
ভুতের দল পর্যায়ক্রমে জাহাঙ্গীরকে নিয়ে যায় তার অতীতে, বর্তমান তো আছেই, সঙ্গে ভবিষ্যতে। তানিম নূর এ গল্পের ভেতর দিয়ে জাহাঙ্গীরকে জীবনের নানা পর্যায়ের ক্রাইসিস, চাওয়া-পাওয়া আর পিছুটানের এক রিগ্রেটফুল টাইম মেশিনে ভ্রমণ করান। অতীতকে টিভিতে কিংবা মধুমিতা হলের পর্দায় আর ভবিষ্যতকে দেখানো হয় ব্যক্তিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। সিনেমায় জাহাঙ্গীর নিজেই যেন হয়ে উঠেন টিকিট কেটে ‘উৎসব’ দেখতে যাওয়া দর্শকদের একজন। এ আধিভেৌতিক অভিজ্ঞতা তাকে ঘটনার পেছনের ঘটনারও সামনে এনে হাজির করায়। যা জাহাঙ্গীরকে নতুন করে জীবন সাজাতে সাহায্য করে। হয়ে উঠেন স্ক্রুজের মতো একজন মহল্লার গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি, ভালো বাবা ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ।

এ সিনেমার জনরা কমেডি-হরর। তাই সংলাপে কৌতুক উদ্রেকের চেষ্টা স্পষ্ট। কিন্তু এ চেষ্টা বিরক্তিকর নয়। তানিমের আগের কাজ, বিশেষ করে ওয়েব সিরিজ ‘কাইজার’ যারা দেখেছেন তারা ভালো বলতে পারবেন; কাইজারে সবাই যেন নিজেদের ভাষায় কথা বলেছে। ‘উৎসব’-এর চিত্রনাট্যে হিউমার তৈরিতে অযাচিত কোনো প্রচেষ্টা চোখে পড়েনি। সবাই নিজের মতো করেই কথা বলছিলেন, কমেডিটা তৈরি হয়েছে সেই নিজস্বতাকে ঘিরেই। এমন ছাপ প্রশংসনীয়। আবার সংলাপের ভেতর সময়ে সময়ে পর্দায় উপস্থিত হওয়া তারকাদের নিজের অন্য সিনেমায় দেয়া সংলাপের পুনরাবৃত্তিও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। চঞ্চল চৌধুরীর নিজের মুখে ‘কিরে, ভয় পাচ্ছিস?’, জয়া আহসানের মুখে নিজের অভিনয় নিয়ে সহজ স্বীকারোক্তি আর ‘মারওওঅঅ’, চঞ্চল চৌধুরীর ‘আশ্চর্য, লোকটা রেগে গেলো কেন?’, জাহাঙ্গীরের ভাতিজার মুখে ‘হিজিবিজি’র মতো সংলাপগুলো বেশ প্রাণবন্ত। আবার জাহাঙ্গীরের মুখে জয়া আহসান, অপি করিমের কাজের বর্ণনা আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় বাংলা নাটকের এক স্বর্ণালী যুগে।
‘উৎসব’-এর চিত্রনাট্য লিখেছেন স্বাধীন আহমেদ ও সামিউল ভুঁইয়া। সিনেমার শেষ মুহূর্তগুলোয় নাটকীয়তা আনতে এমন সব ডায়ালগ লিখেছেন কেমন যেন দর্শককে নৈতিকতা শেখানোর মতো হয়ে উঠছিলো। ফিল্মের কাজ তো দর্শককে ভাবতে সাহায্য করা, উপসংহার টানা নয়।
দ্বিতীয়ত রাজশাহীর বোয়ালিয়ায় আশি-নব্বই দশকের যে সময় দেখানো হয়েছে, তখনকার কথ্য ভাষা অনুপস্থিত। রাজশাহীর আবালবৃদ্ধবনিতা যে স্থানীয় ভাষায় কথা বলেন, সেটা বাদ দিয়ে ঢাকাই আরবান টোনে কথা বলাটা কোনো দিক দিয়েই যৌক্তিক নয়। বিশেষ করে, সিনেমায় যখন সময়কে ধরতে হয় তখন ভাষাই তো সবচেয়ে প্রভাব বিস্তার করে। ভাষা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল, আমরা এই সিনেমায় হয়তো বা সেই আশির দশকের এক আলাদা ধাঁচের রাজশাহীর ভাষা পেতে পারতাম, যেখানকার অনেক শব্দ এখন আর ব্যবহার করে না মানুষ। বাংলাদেশী সিনেমায় সিরিয়াস ভাষা বলতে এই শতকে তৈরি হওয়া সিনেমার ভাষাকেই কেবল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তানিম নুর একজন উল্লেখযোগ্য পরিচালক হিসেবে সে ট্যাবু ভাঙ্গতে পারতেন। বিশেষ করে যখন রাজশাহীর ভাষায় নির্মিত ‘শাটিকাপ’ কিংবা ‘সিনপাট’-এর মতো সিরিজ তো এরই মধ্যে সে ধারণা পোক্ত করে দিয়েছে।
আগেই বলেছি, ‘উৎসব’ তারকাখচিত। তানিম নুরের প্রশংসার সবচেয়ে বড় দিক সিনেমায় প্রায় প্রতিটি চরিত্রকে সমানভাবে ব্যবহার করতে পেরেছেন। মনে হয়নি কাউকে স্ক্রিনটাইম বেশি আর কাউকে কম দিয়েছেন। ১০৮ মিনিটের ভেতর চঞ্চল চৌধুরী, অপি করিম, জাহিদ হাসান, আফসানা মিমি, জয়া আহসান থেকে শুরু করে হালের সাদিয়া আয়মান, সৌম্য জ্যোতি, সুনেরা বিনতে কামাল প্রত্যেকেই সমানভাবে নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পেরেছেন। জাহিদ হাসান মূল চরিত্র জাহাঙ্গীরে ভূমিকায় আলাদা একটা ভাব তৈরি করেছেন। যেখানে সংগ্রাম ও মেটাফোরের বাইরে সামাজিক স্খলনে মধ্যবিত্তের একটা বিশেষ অংশের নির্বিকার ভূমিকার প্রতিরূপ দেখা যায়। জাহিদ হাসানের শুরুর অংশের চেয়ে শেষের অংশের ইমোশনাল ভূমিকা বেশি ভালো।

চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান ও অপি করিম আছেন নাম ভূমিকায়। চঞ্চল চৌধুরীর উপস্থিতিতে একটা হরর ভাব তৈরি হয়েছে শুরুর দিকে। শেষের দিকে এসে কৌতুক আর সিরিয়াসনেস মিলিয়ে আরো ইউজুয়াল করে তুলেছে। জয়া আহসান নিজের সত্যিকার চরিত্রেই অভিনয় করেছেন, এই চরিত্র যেমন ঠিক তেমনই। দর্শক জানেন জয়া আহসানের অভিনয়ের নির্ধারিত রেঞ্জ আছে। জয়া এবারও তার বাইরে যাননি। যেতে হয়নি হয়তো বা যেতেও চাননি। মধুমিতা হলে বসে জাহাঙ্গীরের দিকে তাকিয়ে, ‘কী ব্যাপার আংকেল?’ বলাটা বয়স কিংবা অভিনয়, কোনো বিবেচনাতেই জয়া আহসানের সঙ্গে যায় না। অপি করিমের অভিনয় মানেই এক উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে, ভালো সাবজেক্টে পড়াশুনা করেন আর জ্ঞানীদের মতো কথা বলেন। এ সিনেমায়ও অপি করিম তেমনই। নিজের মতো।
সিনেমার সবচেয়ে উপভোগ্য রাজশাহী অংশে জাহাঙ্গীর আর জেসমিনের প্রেম। সে প্রেম ভাষার কারণে ঢাকার ভার্সিটি পড়ুয়াদের প্রেমের মতো মনে হলেও রসায়ন উপভোগ্য। জেসমিন চরিত্রে সাদিয়া আয়মান এবং জাহাঙ্গীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌম্য জ্যোতি। জেসমিন চরিত্রটা ইন্টারেস্টিং। এক কৈশোর পেরোনো মেয়ে, যার ঢাকায় পড়ার স্বপ্ন; একদিকে পড়াশুনা করছেন আবার অন্যদিকে সংসার। তানিম নুর সিনেমাটি পরিবার ছাড়া দেখতে নিষেধ করেছেন। পরিবার নিয়ে দেখতে যাওয়া অনেক মানুষই এই চরিত্রে খুঁজে পাবেন নিজেকে বা নিজের মাকেই।
সিডির দোকানদার জাহাঙ্গীর চরিত্রে সোম্য জ্যোতি মানানসই নন, কিন্তু এইটিজের প্রেমিক হিসেবে তার অভিনয় দুর্দান্ত। আফসানা মিমিকেও বয়স্ক জেসমিন চরিত্রে দেখা যায়। ছোট চরিত্র। কিন্তু খুবই প্রভাবশালী। অনেকদিন পর তার অভিনয় সাদরে গ্রহণ করবেন মানুষ। তারিক আনাম খানের মোবারক ও ডাক্তার চরিত্রে ইন্তেখাব দিনার সাবলীল। দুয়েকটা জায়গায় জুনিয়র আর্টিস্টরা ভালো করেননি। ইলেকট্রিক মিস্ত্রির ‘কাকা, কই যান?’ বলার ধরনটা খুবই ক্লিশে।
সিনেমার সাউন্ড ও মিউজিক কম্পোজিশন অসাধারণ। শৈব তালুকদারের সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মিউজিক, ডাবিং আর ফলির মিক্সিং এত চমৎকার যে বড়পর্দায় দারুণভাবে উপভোগ করা যায়। মিউজিকে জাহিদ নীরব দারুণ সব ফিউশন এনে দিয়েছেন। এ সিনেমা দেখার আগে দর্শক হয়তো ভাববেনই না, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে’ গানেরও একটা হরর ম্যাশআপ হতে পারে। আর্টসেলের ‘ধূসর সময়’-এর প্রতি ট্রিবিউট, সিনেমায় বারবার ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে’ ইন্সট্রুমেন্টাল ভ্যারাইটি নিয়ে উপস্থিত হওয়া, লেভেল ফাইভের ‘তুমি’ গানটাকে এমন এক সিনেমায় উপস্থিত করা এক কথায় অসাধারণ।
সিনেমাটোগ্রাফিতে মনোজ্ঞ আয়োজন ধরা পড়ে। রাশেদ জামানের ক্যামেরায় একদিকে ওয়াইড শট আর ভিন্ন ভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ফ্রেমিংয়ের বাইরে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়বে সিনেমাজুড়ে নানা জায়গায় জোড়ায় জোড়ায় ক্যারেক্টারের শট। ক্যামেরা প্যান করে একটা অবজেক্ট থেকে স্পেসিফিক ক্যারেক্টারকে সাবজেক্ট করে তোলার এই শৈলীও গুরুত্বপূর্ণ। ড্রোনে ঢাকাকে দুইবার ভিজ্যুয়ালাইজ করা হয়েছে। একবার ব্যস্ত বড়লোক ঢাকা, আরেকবার জেনেভা ক্যাম্পের সিমেন্টের ঢালাইবিহীন ইটের ঢাকা। আমাদের সোসাইটাল বাইনারিতে এটা ভালো প্রেজেন্টেশন।
কস্টিউমেও সামঞ্জস্যতা রক্ষা করা হয়েছে। রাজশাহীর ক্যারেক্টারগুলোয় দুয়েক জায়গায় কমতি চোখে পড়লেও বাকি কস্টিউম সিলেকশন এক্সিলেন্ট। আর্ট ডিরেকশন ও কালার-লাইটিংয়ের কথাও উল্লেখযোগ্য। একটা টানটান পরিবেশনার জন্য সম্পাদক সালেহ সোবহান অনিমের কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। এ সিনেমার এত ফ্ল্যাশব্যাক, ভিন্ন ভিন্ন লোকেশানে নানারকম শট, তার ভেতর অল্প ডিউরেশনে এত ক্যারেক্টার আর্ক যে ব্যালেন্স করেছেন তা প্রশংসনীয়।

তানিম নুরের ‘উৎসব’কে আরেকটু ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখলে খানিক অ্যাক্টিভিজম হিসেবেও পাই। আমাদের সিনেমার দর্শকদের বড় অংশের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতরকে বাংলাদেশের ফিকশনে সে অর্থে কখনোই ধারণ করা হয়নি। তানিমের এই সিনেমা দর্শককে অনেক বেশি কানেক্ট করবে এক চাঁদরাত আর ঈদের দিনের পরিবেশনা দিয়ে। যদিও ঈদুল ফিতরের সে অর্থে আয়োজন চোখে পড়েনি। তবুও, দর্শকের দিনটিকে ঈদের দিন মনে করে নিতে বেগ পোহাতে হবে না। পুরনো পিতৃতান্ত্রিক মনোভাব থেকে আমরা বুঝে নিতে পারি, জাহাঙ্গীরের নানা রকম ভুলের দোষ জেসমিনের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মধ্যে।
তানিম নুর ‘উৎসব’-এ বারবার বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে হাজির করেছেন। আমরা এমন সময়ে ফিরে যাই যখন আমাদের সিনেমা হলগুলো ভরপুর থাকতো। ‘শেষ কবে হলে গিয়ে সিনেমা দেখেছেন?’ উক্তিটা যেন জয়া আহসান বাংলাদেশের দর্শককেই করেছেন। এখানে হলে দর্শক নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সিনেমার কুশীলবদের ভূমিকা নিয়ে আলাপ হয় নাই যদিও। ঈদের আগের রাতে বাংলাদেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঈদের দাওয়াত দেয়ার রেওয়াজটা এই সিনেমায় অনেকদিন পর মানুষ ফিরে পাবেন। মোহাম্মদপুরের বিহারী কাচ্চির শেফের মুখে উর্দু শুনে তাদের এক্সিস্টেন্স মনে পড়লেও পড়তে পারে। তবে সেসব ছাপিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে সিনেমার শেষের সামাজিক জীবনবোধটুকু। ‘ধার চাইলে পয়সা পাওয়া যায়, ভালবাসা পাওয়া যায় না’— জেসমিনের এই মন্তব্য দর্শককে ভাবায়।
এই পারিবারিক সিনেমায় জাহাঙ্গীরের নিজের মেয়েকে ফিরে পাওয়ার দৃশ্যের মতো সামাজিক দৃশ্য আমরা হারিয়ে ফেলেছি অনেকে আগে। ‘উৎসব’ আমাদের সেখানে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। একটা অস্থিরতার সময়ে ‘উৎসব’ দর্শককে বিরতি দেয়। সময় নেয়ার সুযোগ দেয়। আশপাশ নিয়ে ভাবতে শেখায়। প্রচণ্ড ব্যক্তিকেন্দ্রিক সমাজে এই সিনেমা দর্শককে বলতে চায়, আমাদের আশপাশের সবকিছু নিয়েই আমরা। আশপাশের চাওয়া-পাওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। সিনেমার শেষের দিকে অকপটে হাজির হয় এক বাস্তবতা, ‘জীবন নামে সিনেমায় মেইন ক্যারেক্টার বলে কোনো কথা নাই।’ ‘উৎসব’ এমন অবাস্তব ন্যারেশনে পুরনো সামাজিক বাস্তবতার গল্প বলে, যেখানে আমরা চাইলেও ফিরে যেতে পারব না অনাগত দিনগুলোয়।