Select Page

সৃজনশীলতার অপব্যবহার

সৃজনশীলতার অপব্যবহার

আসমানী
ধরন : মিউজিক্যাল স্যাটায়ার ড্রামা
পরিচালক : এম সাখাওয়াত হোসেন
কাস্ট : বাপ্পী চৌধুরী (আসমান/ আজাদ), সুস্মি রহমান (চাঁদমূখী/ পুষ্প/ আসমানী), জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় (বায়েজীদ), শম্পা রেজা (মারিয়া), শতাব্দী ওয়াদুদ (প্রিন্স), অরুণা বিশ্বাস (রাণী ম্যাডাম), সিরাজ হায়দার (গ্রামের মাতবর) প্রমুখ।
প্রযোজনা : ঘাসফড়িং ছবিঘর
শুভমুক্তি : ২ নভেম্বর, ২০১৮

নামকরণ : একদল চলচ্চিত্রকর্মী ‘আসমানী’ নামক একটি সিনেমা বানানোর জন্য প্রায় ১ বছর ধরে প্রি-প্রডাকশনের কাজ করছিলেন। সেখান থেকেই নামটি নেওয়া হয়েছে। যা মানানসই লেগেছে।

কাহিনী, চিত্রনাট্য সংলাপ : পল্লীকবি জসিমউদ্দিনের বিখ্যাত কবিতা ‘আসমানী’র ছায়া অবলম্বনে ছবিটি নির্মিত হয়েছে। জানি না কার কী অভিমত, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে গল্পের শেষাংশ অনেকটাই সত্য ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত মনে হয়েছে।

যাই হোক, মূল কথায় আসি। এফডিসির একদল মুক্তমনা চলচ্চিত্রকর্মী তাদের নতুন প্রজেক্টের জন্য একজোড়া নতুন মুখ খুঁজছিলেন। চরিত্রে যেন ন্যাচারাল ভাব পাওয়া যায় এজন্য তারা পাত্র-পাত্রী হিসেবে এক সুঠামদেহী রিক্সাওয়ালা ও এক দীর্ঘকেশী পতিতাকে প্রধান চরিত্রের জন্য নির্বাচিত করেন। গল্পের মাধ্যমে সেই রিক্সাওয়ালা ও পতিতার সুখস্মৃতিময় অতীত এবং বর্তমান জীবনযন্ত্রণার চিত্র ফুটে উঠে; এবং পরিশেষে ‘আসমানী’ নামক সিনেমাটির ভবিষ্যৎ কি হয় তা দেখা যায়।

আইডিয়া যতটা ভালো ছিল, এর চিত্রনাট্য ছিল ততটাই অগোছালো; ততটাই ক্লিশে, ততটাই বাজে! যতরকমের খারাপ বিশেষণ দেওয়া যায় তার সবকিছুই এ ছবির চিত্রনাট্যের সাথে জুড়ে দেওয়া যাবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার ছিল গল্প বলার ধরনে। চিত্রনাট্যকার না কমার্শিয়াল গতিতে ছুটেছেন না আর্ট গতিতে। দুটো মিক্স করতে গিয়ে পুরো ব্যাপারটাই জগাখিচুড়ি ও বিরক্তিকর করে ফেলেছেন।

চিত্রনাট্যের তুলনায় ছবির সংলাপগুলো ভালো ছিল। উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ভাষা বেশ ভালোভাবেই ব্যবহার করা হয়েছে।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৪০।

অভিনয় : ঢাকায় বসবাসরত  সহজসরল ‘মফিজ’ টাইপ রিক্সাওয়ালার চরিত্রে বাপ্পী চৌধুরীকে মোটামুটি ভালো মানিয়েছে। ছবিতে তার ডাবিং নেওয়া হয়নি, তবে যিনি ডাবিং করেছেন তার কাজ বেশ ভালো হয়েছে। সমস্যা ছিল বাপ্পীর পোশাক-আশাক এবং জীবনাচরণে। যা দেখানো হয়েছে, ওরকম লাইফস্টাইল ঢাকার ব্যাচেলর ছেলেরা পালন করে, কোনো রিক্সাওয়ালা না! ঢাকার রিক্সাওয়ালাদের অবস্থা এর চেয়েও করুণ। তারা সারা বছরেও এমন চেক শার্ট, নতুন প্যান্ট কিংবা খাটে ঘুমানোর সুযোগ পায় না।

নবাগত সুস্মি রহমানের পারফরমেন্সের ওপর এছবি অনেকাংশেই নির্ভরশীল। তাই এমন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে উচিত ছিল তাকে আরো বেশি গ্রুমিং করিয়ে নেওয়া। তার অভিনয়, এক্সপ্রেশন যথেষ্ট পরিমাণে দূর্বল। কিছু কিছু সিনে মনে হচ্ছিল তাকে জোর করে সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে, কোনোরকম প্রশিক্ষণ ছাড়া।

বিরক্তির আরেকটা জায়গা হলো শম্পা রেজা’র অতিঅভিনয়। ছোটবেলা থেকেই ছোটপর্দা/ বড়পর্দায় তাকে দেখি, কিন্তু কখনোই আমার এমনটা মনে হয়নি যতটা না আজ মনে হলো। তার বাজে অভিনয় হরহামেশা দেখা যায় না।

ছবির নেগেটিভ চরিত্রে আছেন শতাব্দী ওয়াদুদ ও অরুণা বিশ্বাস। চিত্রনাট্যে তাদের দেখানোর মতো তেমন কিছু নেই; তারা স্বভাবসুলভ পারফরমেন্স দিয়েছেন। জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ও প্রয়াত সিরাজ হায়দার তাদের স্বাভাবিক পারফরম্যান্স দিয়েছেন।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৪০।

কারিগরি এই অংশের কাজ দেখে মনে হয়েছে আমি ২০১২/১৩ সালের কোনো ছবি দেখছি। তখন আমাদের ইন্ডাস্ট্রি সবেমাত্র ডিজিটাল যুগে পা দিয়েছিল। সিনেমাটোগ্রাফারের ডিজিটাল ক্যামেরা চালাতে অসুবিধা হতো; যেনতেনভাবে এডিটিং হতো; ঝকঝকে পর্দায় আদিমকালের কোরিওগ্রাফি দেখা যেতো; জোড়াতালি দিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক তৈরি করা হতো; সবমিলিয়ে কোনোরকমে ছবি বানিয়ে মুক্তি দেওয়া হতো। এক্ষেত্রেও ঠিক তাই!

২০১৮ তে এসে এগুলো কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না, যেখানে এফডিসির ডিরেক্টররাও তাদের ভুলগুলো বুঝে শোধরানোর চেষ্টায় আছে।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ১০।

বিনোদন : ছবিতে গান ছাড়া বিনোদন পাওয়ার মতো আর তেমন কিছু খুজেঁ পাইনি। মোট ৬ টি গান রয়েছে। বিখ্যাত গীতিকার মুজিব পরদেশী ও শাহ আব্দুল করিমের বিখ্যাত দুইটি গান যথাক্রমে ‘আমার সোনা বন্ধুরে’ ও ‘আমি কূলহারা কলঙ্কিনৗ’ নতুনকরে এ ছবিতে সংযোজন করা হয়েছে। ইমরান ও মমতাজের গাওয়া গান দুটি মন ছুঁয়েছে। এছাড়াও উত্তরবঙ্গের একটি জনপ্রিয় লোকসংগীত ব্যবহার করা হয়েছে। আছে অন্বেষা এবং চিরকুটের একটি করে গান; একটি আইটেম সং ও রয়েছে! আইটেম সং বাদে সবগুলো গানই হৃদয়ে প্রশান্তি এনেছে। তবে একমাত্র ‘আমি কূলহারা কলঙ্কিনী’ ছাড়া আর কোনো গানই ছবিতে সঠিকভাবে সংযোজন হয়নি। হুটহাট করেই একেকটি গান এসে পড়ছিল, যার কারণে ক্লিশে ভাব চলে আসছিলো।

ছবিতে টুইস্ট, সাসপেন্স, এ্যকটিং, কোনটাই মন ভরাতে পারেনি।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৪০।

ব্যক্তিগত : ছবিটি দেখতে গিয়েছিলাম মূলত তিনটি কারণে- নতুন পরিচালক,. বাপ্পীর অন্যরকমের কাজ ও পল্লীকবির সৃষ্টির অনুপ্রেরণা।

ডিজিটাল যুগে এসে যেখানে নতুন পরিচালকেরা চমক দেখাচ্ছে, এফডিসির পরিচালকদের টেক্কা দিচ্ছে, সেখানে এম. সাখাওয়াত হোসেন হতাশই করলো। আর পল্লীকবি’র সৃষ্টিশৗল কর্মের এমন বাজে ব্যবহার একদমই আশা করি। প্রথম অর্ধেকেই গল্প একদম বিরক্তিকর পর্যায়ে চলে গিয়েছিল, হলের দর্শকরা শুধু আটকে ছিলেন সুমিষ্ট গানগুলোর কারণে।

রেটিং : ৩/১০

ছবিটি কেন দেখবেন : বাপ্পী চৌধুরীর ফ্যানেরা এছবিটি একবার দেখতে পারেন। এছাড়া ছবির গানগুলো উপভোগ্য। গান ছাড়া এ ছবিতে কিছু নেই, কিছুই নেই!


মন্তব্য করুন