Select Page

সেই পুরানো বস্তাপচা সিনেমা নাকি ডুগডুগির বদলে ঢোল?

সেই পুরানো বস্তাপচা সিনেমা নাকি ডুগডুগির বদলে ঢোল?

খুব ছোটবেলা থেকেই একটা কথা শুনেছি “প্রচারেই প্রসার”। কেন বললাম কথাটি তার মানে হয়তো কিছু মানুষ বুঝেছেন আবার কেউ বুঝতে চেষ্টা করতেছেন। হ্যাঁ বলছিলাম, পরিচালক ‘মালেক আফসারি’র কথা। সত্যি বলতে আমি তার অতিরঞ্জিত কথা গুলো শুনেই ‘পাসওয়ার্ড’ দেখতে গিয়েছিলাম, যদিও আমার পুরো প্ল্যান ছিলো আমি ‘নোলক’ দেখবো!

এটার জন্য মালেক আফসারি সাহেব কিঞ্চিত বাহবা পেতেই পারেন, গ্রেট মার্কেটিং স্ট্রাটেজি ? আসলে সত্যি কথা কী হলে সিনেমা না চললেই বেশি খারাপ লাগে। টুকটাক অতিরঞ্জিত কথা বলে যদি হলে লোক নেওয়া যায় তাতে খারাপ কী। এখন অনেকেই বলবেন হলে গিয়ে বস্তাপচা কিছু দেখবো নাকি! দেখবেন নাকি দেখবেন না ঠিক সেটার জন্যই আজ আপনাদের মাঝে অনেক অনেক শব্দ নিয়ে চলে আসলাম।

প্রায় ৫ বছর (সঠিক সময় জানা নেই) কিংবা তার বেশি দিন পরে শাকিব খান প্রযোজনায় এসেছেন, আমি বলবো এটা অনেক অনেক ভালো দিক। বর্তমান সিনেমা পাড়ার যা অবস্থা তাতে আরো অনেকের এগিয়ে আসা উচিৎ, অবশ্যই ভালো সিনেমা নিয়ে। কিছুদিন আগে শাকিব খানকে এই সিনেমা নিয়ে বেশ গর্ব করতে দেখা গিয়েছে। আসলেই কি সিনেমাটি বিশ্বমানের সিনেমা? আমার মতে তেমনটা না তবে চেষ্টা বেশ আশানুরূপ ছিলো। হয়তোবা পরের চেষ্টায় বিশ্বমান খেতাবটা লেগে গেলেও লেগে যেতে পারে। এখন কথা হলো বিশ্বমান বলতে আপনি কি বুঝেন। এখন বিশ্বমান বলতে যদি অ্যাভেঞ্জার্সের মতো সিনেমার কথা চিন্তা করেন তাহলে কবি নীরব ?

আপনার বিলিভ করতে হয়তো কষ্ট হতে পারে! তবে এটাই সত্যি শাকিব খান তার সিনেমা নিয়ে বেশ ভেবেছেন, বেশ চিন্তা ভাবনা করে দারুণ লোকেশন সিলেক্ট করেছেন, বেছে বেছে ভালো মানের চিত্রগ্রাহক এবং সম্পাদক নির্বাচন করেছেন আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশ খুশি এটা ভেবে যে শাকিব খান চাইলেই নিজের রুচির পরিবর্তন করতে পারেন, আরো খুশি হবো যখন তিনি সব-সময়ের জন্য নিজের রুচির পরিবর্তন করে ফেলবেন।

পরিচালনা এবং বাদবাকি?

সত্যি কথা বলতে কি আমি ‘মালেক আফসারী’কে পছন্দ করি তার বানানো ‘ক্ষতিপূরণ’, ‘এই ঘর এই সংসার’ সিনেমা গুলো দেখেই। আমার খুব আক্ষেপ আমি অন্তরজ্বালা দেখার সুযোগ পাইনি। কারণ সে যেভাবে নিজের সিনেমা নিয়ে তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে দেন এতে করে না দেখলে মিস’ই বলা যায়। হ্যাঁ, সব সময় ব্যাটে বলে মেলে না তবে বেশ কয়েকটা ভালো সিনেমা তিনি বানিয়েছেন। এখন আসি পাসওয়ার্ড কেমন বানালেন।

মেকিং আসলেই দারুণ, গল্প যেমন তেমন মেকিং দারুণ এটা যারা বর্তমানের সিনেমা গুলো দেখেছেন তারা বেশ ভালো বুঝবেন। কেনো বলছি দারুণ! সিনেমার কিছু কিছু শট আমার বেশ ভালোই লেগেছে (অনেকেই বলবেন জোড়াতালি মারা নকল, যদি তাইও হয় তবে এই নকল একদম বুদ্ধিদীপ্ত নকল)। ফিল্মের সিনেমাটোগ্রাফিও দৃষ্টিনন্দন ছিলো, বড় পর্দায় আরো বেশি লাগবে আশা করছি। এছাড়া ইমন সাহা তাঁর আবহসঙ্গীতের মাধ্যমে সিনেমায় অসাধারণ শব্দটা অনায়াসে জুড়ে দিয়েছেন। ইউটিউবে সিনেমার গানের কেমন কালার গ্রেডিং দেখেছেন বা কীভাবে দেখেছেন বা কি ডিভাইসে দেখেছেন তা জানি না তবে বড় পর্দায় কালার গ্রেডিং চোখের প্রশান্তি জোগাবে (অবশ্যই ভালো পর্দায় দেখতে হবে যেমনঃ শাহিন সিনেমা হল কিংবা বলাকা সিনেমা হল)। আর হ্যা ভালো খবর এটা যে, আপনি যদি শাকিব খানের শিকারি কিংবা ভাইজান এলোরে কিংবা নবাব সিনেমা দেখে থাকেন তাহলে এই সিনেমা আপনাকে ভালোই বিনোদিত করবে। তবে মালেক সাহেব একটু কম কম করে হাউকাউ করলেই মনে হয় ভালো হয়, যদি ভালো কিছু বানিয়েই ফেলেন তবে কাজ দিয়েই জবাব দিবেন এতো হাউকাউ করেই বা লাভ কি। সর্বসাকুল্যে চিন্তা করলে মেকিং মোটেও বস্তাপচা না এবং বিরক্তিকরও না। গল্প দিয়ে আপনাকে হলে ধরে না রাখতে পারলেও মেকিং দিয়ে এই সিনেমা অবশ্যই আপনাকে ১৩৭ মিনিট বসিয়ে রাখবে।

অভিনয়সংক্ষেপ?

?মিশা সওদাগর
বরাবরের মতো অভিনয় বেশ ভালোই। তবে তাঁর এন্ট্রি একদম ইউনিক লাগলো, এটার জন্য পরিচালক ধন্যবাদ পেতেই পারেন। মিশার ডায়লগে ছিলো না কোনো অতিরঞ্জিত গা গুলানো বাক্য, এটা সবচেয়ে দারুণ লেগেছে। ইংলিশের প্রনাউনসিয়েশন গুলো বেশ স্পষ্ট ছিলো। ওভারল ভালোই, অবনতি হয়নি আর কি।

?বুবলি
প্রথমবারের মতো বুবলির অভিনয় দেখা হলো। বিভিন্ন কাটপিস কিংবা ট্রেইলারে বুবলিকে দেখে তাঁর সিনেমা দেখবো এটা আমি ভাবি’ই নাই। তবে প্রথমবার তাঁর সিনেমা দেখে আমার একবারে যে খারাপ লেগেছে তাও কিন্তু না, বুবলির সবচেয়ে ভালো দিক বুবলির ভরাট কন্ঠ এবং উচ্চারণ। ভালোভাবে কাজে লাগালে কমার্শিয়াল সিনেমায় এই কন্ঠ এবং উচ্চারণ তাঁকে অনেকদূর নিয়ে যাবে। তবে বুবলির এক্সপ্রেশন খুব একটা আশানুরূপ ছিলো না, আসলে আশাও করি নাই এক্সপ্রেশন নিয়ে। খুব বেশি বিরক্ত লেগেছে আইটেম গানে বুবলির অযাচিত এক্সপ্রেশন গুলো যা একদমই তার ফেসের সাথে যাচ্ছিলো না। আমার মনে হয় বুবলি শুধু মাত্র নিজের ফিটনেস এবং এক্সপ্রেশনের জন্য ওয়ার্কআউট করলে ভালো কিছুই হবে। সব মিলিয়ে বুবলিকে মোটামুটি বলা চলে।

?অমিত হাসান
‘আমি পাথরে ফুল ফোঁটাবো শুধু ভালোবাসা দিয়ে’ খুব পছন্দের গান মিস করি আগের অমিত হাসানকে। যাই হোক পজেটিভ রোলে এবার বেশ চলনসই ছিলেন তিনি। উচ্চারণগত দিক কিংবা এক্সপ্রেশনেও বেশ ভালোই উন্নতি হয়েছে।

?ইমন
এই সিনেমার সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং রোলে ছিলেন ইমন। ইমন চাইলেই এই চরিত্রের মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ারকে আরেকবার নাড়া দিতে পারতেন, খুব একটা যে ভালো করেছেন তাও না আবার খুব একটা খারাপ করেছেন তাও না। চেষ্টা ভালো ছিলো এটা মানতে বাধ্য হবেন যখন ইমনের অভিনয় দেখবেন।

?শাকিব খান
আমি আশা করে গিয়েছিলাম বেশ দারুণ একটা লুক দেখবো। কিন্তু আশাহত হলাম! এই সিনেমার জন্য সাকিবের উচিৎ ছিলো আরো কিছু মেদ কমিয়ে শিকারি সিনেমার মতো একটা লুক তৈরি করার, কিন্তু কেনো সে এভাবেই থাকলো আসলেই আমার বোধগম্য না! অভিনয় গতানুগতিক ভালো ছিলো, উচ্চারণ বাংলা ইংলিশ সব ক্ষেত্রেই ভালো ছিলো, এক কথায় বিরক্তবোধ করি নি। শাকিব খান এই সিনেমায় এক্সট্রাঅর্ডিনারি কোনো অভিনয় করে নি তবে একদম ফেলে দেবার মতোও করে নি। সব মিলিয়ে চলনসই বিরক্তি আসবে না কারোই।

কাহিনীসংক্ষেপ?

মিষ্টি সকাল ছিলো কিন্তু ঘুম থেকে উঠে রুদ্রর (শাকিব খান) সকালটা আর মিষ্টি রইলো না! ছোট ভাই রুশো (ইমন) টয়লেট লাগিয়ে বসে আছে! বের হতেই চাচ্ছে না! রুশো রুদ্রর প্রতিবন্ধী ভাই, অনেক কিছুই তার বোধশক্তির বাহিরে থাকে। একবার রুশোর সামনে একলোক পরে যায়, কিন্তু কোথা থেকে যেন কিছু লোক এসে তাঁকে সার্চ করে চলে যায়! তো রুশো সেখানে থাকার কারণে একটা পেনড্রাইভ দেখতে পায়, যেহেতু রুশো প্রতিবন্ধী তাই কৌতুহলবশত সেটা সে নিয়ে যায় আর এখান থেকেই শুরু হয় রুশো এবং রুদ্রর বিপত্তি। হালকা থ্রিলের মাধ্যমে ভালো ভাবেই সিনেমাটি গড়ে উঠে, মনে হয় না কারো বোরিং লাগবে।

✔পরিশেষ পাসওয়ার্ড কোনো বস্তাপচা সিনেমা নয়, যে কেউ এই সিনেমা ভালোই উপভোগ করতে পারবেন। ভালো সিনেমা হোক এটাই চাই, হল গুলোতে ভীড় লেগে থাকুক এটাই চাই। দর্শক যখন শাকিবের গান দেখে উৎফুল্লতা প্রকাশ করছিলো সত্যিই খুব ভালো লেগেছিলো। আমি গ্রামের এক অজো পাড়াগাঁয়ে (রুনা সিনেমা হল, চালাকচর) এই সিনেমাটি দেখেছি, শুধু এই সিনেমা না আমি আরো অনেক বাংলা সিনেমাই এই হলে দেখেছি, বাংলা সিনেমা নিয়ে এদের যে কি পরিমাণ ভালোবাসা তা হয়তো আমাদের মতো ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল মানুষেরা বুঝবে না, সত্যিই বুঝবে না! হল টিকে থাকুক বাংলা সিনেমা টিকে থাকুক। জয় হোক বাংলা সিনেমা, ফিরে আসুক সেই সোনালি দিন ❤

এক নজরে পাসওয়ার্ড,
পরিচালকঃ মালেক আফসারি
রচয়িতাঃ মালেক আফসারি
প্রযোজনাঃ এসকে ফিল্মস
শ্রেষ্ঠাংশেঃ শাকিব খান,বুবলি,অমিত হাসান,ইমন,মিশা সওদাগর সহ আরো অনেকে।
ধরণঃ অ্যাকশন, থ্রিলার।
মিউজিকঃ ইমন সাহা
ব্যাপ্তিকালঃ ১৩৭ মিনিট
মুক্তিসালঃ ৫ই জুন,২০১৯ইং
দেশঃ বাংলাদেশ
ভাষাঃ বাংলা
ব্যক্তিগত মতামতঃ ৭.৫/১০
বাজেটঃ ৫কোটি ৪০লাখ


মন্তব্য করুন