সেন্সরের ‘নাটক না করে’ হিন্দি ছবিকে সরাসরি ছাড়পত্র দেয়ার দাবি!
সেন্সর শোর নাটক না করে হিন্দি ছবিকে সরাসরি সার্টিফিকেট বা ছাড়পত্র দেয়ার দাবি করলেন পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। দৃশ্যত দুপুরে প্রিভিউ করার পরপরই ছাড়পত্র দান ও বিকালে ‘জাওয়ান’ মুক্তি নিয়ে ক্ষোভ ছাড়লেন এ পরিচালক।
অনেকটা ব্যঙ্গের সুরে ‘দুই নয়নের আলো’ নির্মাতা আজ বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) লেখেন, ‘খুব সম্ভবত সেন্সর শোর আগেই সেন্সর সার্টিফিকেট রেডি ছিলো জাওয়ান মুভির। আগামীতে যেসব হিন্দি মুভি আসবে, সেইসব মুভিগুলোকে, সেন্সর শোর নাটক না করে, সরাসরি সার্টিফিকেট দেয়ার দাবি করছি।’
এক সময় ভারতীয় সিনেমা বিশেষ করে হিন্দি সিনেমাবিরোধী অবস্থানে একাট্টা ছিলেন নির্মাতা ও শিল্পীরা। আজকাল সেই অবস্থা অনেকটাই নড়বড়ে। এ কারণেই ভারতের সঙ্গে একইদিনে মুক্তি পেলে শাহরুখ খানের সিনেমা।
সেন্সরের ভূমিকাকে ‘দেশদ্রোহীতা’ মনে করেন খিজির হায়াত খান। এর আগে হিন্দি সিনেমা ‘পাঠান’-এর মুখোমুখি হয় তার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নির্মাণ ‘ওরা ৭ জন’।
খিজির হায়াত খান লেখেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমান চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড একটি নীতি বিবর্জিত প্রতিষ্ঠান। এরা দেশদ্রোহী। দেশের সংস্কৃতি রক্ষার স্বার্থে এদের সবাইকে কারাগারে প্রেরণ করা দরকার বলে আমি মনে করি।’
নির্মাতা কারাগারে পাঠানোর দাবি তুললেও সেটা কার্যকরই বা কীভাবে হবে। এবং কোন আইনে হবে। ৮ সেপ্টেম্বর মুক্তির কথা ছিল দীপংকর দীপনের পরিচালিত ‘অন্তর্জাল’-এর, যার সঙ্গে
যুক্ত সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয়। এছাড়া মুক্তির কথা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব-কৈশোর নিয়ে নির্মিত মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘দুঃসাহসী খোকা’। কিন্তু ‘জাওয়ান’ তোড়ে দুই সিনেমাই পিছিয়ে গেছে। তবে হিন্দি সিনেমা নিয়ে সব সময় প্রতিবাদ জানিয়ে আসা বর্ষীয়ান নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘সুজন মাঝি’ মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার।
এদিকে সেন্সর সনদ পেতে অনেক সময় নির্মাতাদের দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। সেখানে ‘জাওয়ান’-এর দিনে দিনে সনদ পাওয়া ও মুক্তি ক্ষোভ তৈরি করলে তা অসঙ্গত নয়। তেমন অভিজ্ঞতা রয়েছে ‘সাঁতাও’-খ্যাত খন্দকার সুমনের।
তিনি লেখেন, “গত বছর ২৮ আগষ্টে ‘সাঁতাও’ সেন্সর বোর্ডে জমা দেই ৮ সেপ্টেম্বরে প্রিভিউ হয়। আর ১৫ সেপ্টেম্বরে সেন্সর সার্টিফিকেট হাতে পাই। সম্ভবত ৬ সেপ্টম্বর র্যাব প্রযোজিত সিনেমা ‘ব্ল্যাক ওয়ার’ (মিশন এক্সট্রিম ২) জমা পড়ে সেন্সর বোর্ডে। একই দিনে, অর্থ্যাৎ ৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ‘সাঁতাও’-এর পরে সিনেমাটির প্রিভিউ হয়।
১১ সেপ্টেম্বর, রবিবার সকাল ১০টা থেকে আমি সেন্সর বোর্ডে বসে থাকি। দুপুরের দিকে ‘ব্ল্যাক ওয়ার’-এর প্রোডাকশন ম্যানেজার উপস্থিত হলেন। ‘ব্লাক ওয়ার’-এর সেন্সর সার্টিফিকেট আমার সামনে হস্তান্তর করা হলো। কিন্তু ‘সাঁতাও’-এর সেন্সর সার্টিফিকেট দেয়া হলো না।
বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্স বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান সাহেবকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তথ্য সচিব মহদয় ‘সাঁতাও’-এর সার্টিফিকেটে সিগনেচার করতে ভুলে গেছেন। আমি বললাম, সচিব সাহেব র্যাবের সিনেমার সার্টিফিকেট সিগনেচার করতে ভোলেন না কেন?
তিনি মৃদু হেসে বললেন, এগুলো রেগুলার কোর্স। আমাকে সময় দেন আমি দেখছি। এর মধ্যে সেন্সর বোর্ডের ৩য় শ্রেণীর কর্মচারীরা ভয় দেখাতে শুরু করেছে, আপনার ফিল্ম আটকায় গেছে। ততবির করেন। নইলে হয়ত ছাড়বে না।
প্রতিদিন একবার করে ভাইস চেয়ারম্যান সাহেব কে ফোন করি। তিনি আজ কে না, কালকে। কালে না, পরশু। এই বলছেন প্রতিদিন। আমার মানসিক অবস্থা খুব খারাপ। প্রতিদিন মধ্য রাতে বারান্দায় গিয়ে একা একা কাঁদতাম।
১৪ সেপ্টেম্বর সকালে ভাইস চেয়ারম্যান সাহেবকে ফোন দিলাম, স্যার আচ্ছালামু আলাইকুম। আমি কিশোর বয়সে প্রেম করতাম। তখন আমার প্রেমিকার কারণে আমি খুব ভাল চিঠি লেখা শিখেছি। আমি খুব অসহায় মানুষ। মন্ত্রনালয়ে আমার কোন খুঁটির জোড় নাই। আজকের মধ্যে যদি আপনি আমার সার্টিফিকেট না দেন তাহলে আগামীকাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি লিখব।
ভাইস চেয়াম্যান সাহেব ভদ্র মানুষ। তিনি এবারও হেসে বললেন, আপনি একজন মেধাবী নির্মাতা। আমাদের দেশের সম্পদ। এগুলো রেগুলার কোর্স। আপনি একদম চিন্তা করবেন না।
ঐ দিনই বিকেল ৪টায় তিনি ফোন করে বলেন, আপনার ফিল্মের সেন্সর সার্টিফিকেট হয়ে গেছে। আজকে তো অফিস বন্ধ হয়ে যাবে আগামীকাল অর্থ্যাৎ ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে অফিসে এসে নিয়ে যাবেন।
আজকে একটি বিদেশী চলচ্চিত্রের সেন্সর আয়োজন নিয়ে সংবাদ পত্রে পড়লাম। যেদিন ফাইল জমা হলো। সেই দিনই প্রিভিউ হলো আবার একই সময়ে তথ্য সচিব মহোদয় সার্টিফিকেট ইস্যু করলেন বা করবেন। পুরো বাংলাদেশ আজকে ব্যস্ত ছিল চলচ্চিত্রটির সেন্সর সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য।
আমি সবিনয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান স্যারকে বলতে চাই, স্যার এগুলো রেগুলার কোর্স নয়। এইটা রাজা আর প্রজার গল্প।
আমি মর্নিংওয়াক করার সময় একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিব সাহেবের সাথে আড্ডা দেই। তার বক্তব্য হচ্ছে, অবসরে আসার পর তিনি নিজের যাপন দিয়ে অনুধাবন করছেন সাধারণ মানুষের অর্থ্যাৎ প্রজার যাপন কত কষ্টের।
স্যার রেগুলার কোর্সে জন সাধারণকে গুরুত্ব দিন। একদিন আপনিও তো অবসরে যাবেন।”
আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সে প্রদর্শিত হয়েছে ‘জাওয়ান’।
‘জওয়ান’ এর বাংলাদেশের পরিবেশক অ্যাকশনকাট এন্টারটেনমেন্টের অনন্য মামুন। আগেই তিনি বলে আসছিলেন, বৃহস্পতিবার থেকে একযোগে ‘জওয়ান’ বাংলাদেশের ৪১টি সিনেমা হলে চলবে। এছাড়া ছবিটির আন্তর্জাতিক পরিবেশক ইয়াশরাজ ফিল্মস প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের হল তালিকা। অর্থাৎ, বাংলাদেশে এ সিনেমার প্রতিটি পদক্ষেপ ভারতীয় বেনিয়াদের নখদর্পণে রয়েছে।
হল মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে দেশে হিন্দি ছবি চালানোর জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। অন্যদিকে চলচ্চিত্র পরিচালক ও শিল্পী সমিতির অবস্থান ছিল এর বিপক্ষে। পরে চলচ্চিত্রের ১৮টি সংগঠন এক সমঝোতার মাধ্যমে হিন্দি ছবি আমদানিতে সম্মতি দেয়।
গত ১১ এপ্রিল পাঁচ শর্তসাপেক্ষে সরকার দুই বছরের জন্য ১৮টি হিন্দি ছবি আমদানির অনুমতি দেয়। এরই মধ্যে সিনেমা হলে প্রদর্শিত হয়েছে ‘পাঠান’, ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’ ছবি দুটি। সামনে আমদানির তালিকায় রয়েছে ‘টাইগার থ্রি’, ‘সালার’, ‘কেজিএফ থ্রি’, ‘ডানকি’ ইত্যাদি।