Select Page

স্টাইলিশ জুটি সালমান শাহ-মৌসুমী

স্টাইলিশ জুটি সালমান শাহ-মৌসুমী

নব্বই দশকে বাণিজ্যিক ছবির নতুন বাজার শুরু হয় নাঈম-শাবনাজ জুটি দিয়ে। এ জুটি তরুণ প্রজন্মের কাছে ক্রেজ সৃষ্টি করে। সেই ক্রেজের মধ্যে খুব সময়ের মধ্যেই ভাগ বসায় সালমান শাহমৌসুমী জুটি। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মধ্য দিয়ে দেশের তরুণ প্রজন্মের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এ জুটি।

সালমান শাহ-মৌসুমী জুটির ভিন্ন একটা বৈশিষ্ট্য ছিল সেটা হলো তারা দুজনই স্টাইলিশ ছিল। তাদেরকে দেখতেও সিনেমাটিক লাগত। ফটোজেনিক ফেস তো অবশ্যই সেই সাথে তরুণ প্রজন্মের ভালো লেগে যাবে এমন একটা বৈশিষ্ট্য ছিল। একটা গর্জিয়াস ব্যাপার ছিল জুটিটিতে।

সালমান-মৌসুমীর ছবি মাত্র ৪ টি। সালমান বেঁচে থাকলে আরো ছবি হত। মৃত্যুর কিছুদিন আগেও সালমান পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান-কে বলেছিল আবার ছবি করতে চায়। মৌসুমীর কথামতে পরিচালক ইস্পাহানি আরিফ জাহান সালমানের বিপরীতে মৌসুমীকে নেয়ার চিন্তা করেছিল কিন্তু তা আর হয় নি।

এ জুটির ৪ টি ছবি – কেয়ামত থেকে কেয়ামত, অন্তরে অন্তরে, দেন মোহর ও স্নেহ।

প্রথম ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দুজনেরই প্রথম ছবি ছিল। দুজনের ব্রেকের মধ্য দিয়ে ঢালিউডে নতুন সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল। ছবিটি ব্লকবাস্টার হয়েছিল। গানগুলো দর্শকের মনে গেঁথে যায়। হিন্দি ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’-এর রিমেক ছিল ছবিটি। বাংলাদেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী এ জুটির উপস্থাপন দর্শক সানন্দে গ্রহণ করেছিল যার জন্য ছবিটি ব্যাপকভাবে সফল হয়। গানগুলোর জনপ্রিয়তাও ছিল অনেক। গানগুলোতে সালমান-মৌসুমীর রসায়ন ও লুক ছিল অনবদ্য। তাকিয়ে থাকার মতো একটা বিষয় ছিল। বিশেষ করে নব্বই দশকে প্রচলিত ভিউকার্ড সবচেয়ে বেশি প্রকাশ হয়েছিল এ ছবির।

দ্বিতীয় ছবি ‘অন্তরে অন্তরে’ ফুল প্যাকেজ কমার্শিয়াল ছবি। গল্পে, গানে, অভিনয়ে সবদিক থেকে মসলাদার বাণিজ্যিক ছবি ছিল। গানগুলো সমানভাবে জনপ্রিয় হয় বিশেষ করে ‘কাল তো ছিলাম ভালো’ গানটি রেডিওতে ‘অনুরোধের আসর গানের ডালি’ অনুষ্ঠানে প্রায় প্রতিদিনই বাজানো হত।

পরের ছবি ‘দেন মোহর’ রাজ পরিবারের গল্পে জমজমাট ছবি ছিল। এ ছবির আয়োজন ছিল দারুণ। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’-এর মতোই মাল্টিকাস্টিং ছবি ছিল। সালমান-মৌসুমীর প্রেম ও বিয়ের পর সালমানের বাবা রাজিবের দেয়া শর্তে মৌসুমীকে শ্বশুরবাড়ি ছাড়তে হয়। দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব মাথায় নিয়েই সালমান-মৌসুমী নিজেদের প্রেমকে টিকিয়ে রাখে এবং সন্তান জন্মের পর এ দ্বন্দ্ব মেটে। ছবির ‘শুধু একবার বলো ভালোবাসি’ গানটি দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

‘স্নেহ’ ছবিটি তুলনামূলক কিছুটা পিছিয়ে ছিল ঐ তিনটি ছবির থেকে। শাবানা-আলমগীরের ড্রামাটিক অবস্থানের বিপরীতে সালমান শাহ-মৌসুমীর প্রেম দিয়ে সম্পর্কের শীতলতা মিটে যায়। সালমান-মৌসুমীর ‘তুমি যেখানেই থাকো’ গানটি দারুণ রোমান্টিক।

এ জুটির কোনো এক ছবির শুটিং চলাকালে রুম বরাদ্দ নিয়ে একটা ভুল বোঝাবুঝির পরে সালমান-মৌসুমীর মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়। তারা আর একসাথে ছবি করেনি তবে সালমানের মৃত্যুর আগে আবার ছবি করার পরিকল্পনা হয়েছিল কারণ ততদিনে দূরত্ব ঘুচে গিয়েছিল। এ জুটির আরো ছবি হলে দর্শকই লাভবান হত। কম ছবিতেই সালমান শাহ-মৌসুমী জুটির যে স্টাইলিশ উপস্থিতি পাওয়া গেছে আরো ছবি হলে সেটা অন্যরকম কিছু হত।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন