ঝগড়া মেটানোর পূর্বপ্রস্তুতি ছিল ‘হাওয়া’ টিমে!
গভীর সমুদ্রে হয় মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’ সিনেমার শুটিং। এ সময় পুরো টিম ছিল নৌকার ভেতরে। এমন একটা পরিবেশ ঝগড়া-ঝাঁটি স্বাভাবিক বলেই মনে করেন মনোবিদরা। তাই এ নিয়ে আগাম প্রস্তুতি নিয়েছিলেন নির্মাতারা।
সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছেন ‘হাওয়া’র নির্বাহী প্রযোজক শিমুল চন্দ্র বিশ্বাস, যিনি এর আগে অনম বিশ্বাসের ‘দেবী’তে একই ডিপার্টমেন্ট সামলেছিলেন।
‘হাওয়া’র ক্ষেত্রে আপনার চ্যালেঞ্জ কী ছিল? লোকেশন নাকি সমুদ্রে কাজ করাটা? এমন প্রশ্নের ঢাকা ট্রিবিউনকে শিমুল বলছিলেন, ‘না, হাওয়ার ক্ষেত্রে লোকেশনের চ্যালেঞ্জ ছিল না। কারণ আমরা জানতাম যে সমুদ্রে শ্যুট করবো। আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল অনেকগুলো। বছরের কোন সময়টা সাগর শান্ত থাকে সেটা খুঁজে বের করা, কোন সময়টাতে মাছ ধরা নিষেধ, তা জানা। কারণ মাছ ধরা যখন নিষেধ থাকে তখন বোটের ভাড়া কম থাকে। আবার বোটের ভাড়া যখন কম থাকে তখন মাঝি পাওয়া যায় না। এইসব হিসেব মেলাতে হয়েছিল। সব মিলিয়ে দেখা গেলো অক্টোবর-নভেম্বরের সময়টা আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। নৌকা খুঁজে বের করাটা আমাদের জন্য বেশ ঝামেলার ছিল। নৌকার জন্য আমরা ছয় থেকে আট মাস বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন টিম নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি। আমি নিজে গিয়েছি বরিশাল, পটুয়াখালী, চর কুকরি-মুকরি ওই দিকটায়। বাবলু মামা, শিবলু ভাই এরা গিয়েছেন সুন্দরবন, খুলনার দিকে। নৌকা পেতেই আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।’
নৌকার জন্য এত ঘোরাঘুরি কেন করতে হয়েছিল? ‘আমাদের এমন একটা নৌকা দরকার ছিল যাতে ১০০ জন মানুষ একসাথে থাকতে পারে। নৌকাটা ভারি হতে হবে, যাতে দৌড়াদৌড়ি করা যায়। আবার নৌকাটা আমাদের মতো করে মোডিফাই করতে হবে। সব মালিক তো নৌকা মোডিফাই করতে দেয় না। এত বড় নৌকা পাওয়া যায় না। আমাদের আবার কাঠের বডির নৌকাই লাগবে। এসব হিসাব-নিকাশ করেই নৌকাটা খুঁজে বের করতে হয়েছে।’
আরো জানান, শুটিংয়ের মূল নৌকার সঙ্গে কয়েকটি সাপোর্টিং বোট ছিল। পাশে একটা ছোট বোটে রান্নাবান্না হতো। আরেকটি সার্ভিস ট্রলার কলাকুশলীদের তীর থেকে আনা-নেয়া করতো। মোটামুটি তিনটা বোটেই আমাদের কাজ হয়ে গেছে।
‘হাওয়া’র প্রি-প্রোডাকশন চ্যালেঞ্জিং ছিল উল্লেখ করে শিমুল বলেন, ‘আমাদের কোন রেফারেন্স ছিল না। সমুদ্রে আমরা আগেও শ্যুট করেছি কিন্তু সেটা ছিল তীরের আশেপাশে। মাঝ সমুদ্রে শ্যুট করলে কি হতে পারে সেটা নিয়ে আমাদের আইডিয়া ছিল না। আমাদের প্রত্যেককেই প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়েছে। আমাদের কয়েকজন ডাক্তার বন্ধুবান্ধবের সাথে পরামর্শ করে নেই যে স্বাস্থ্যগত কী কী ঝুঁকি থাকতে পারে। ওরা বললো যে মাথাব্যথা হতে পারে, কারো কারো বমি হতে পারে। সেগুলো আমরা নোট করে কী কী ওষুধ লাগবে সেগুলো নিয়ে নিছি।’
এরপরই মজার তথ্য দেন ১০ বছর ধরে মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত শিমুল। তিনি বলেন, ‘আমাদের একজন সাইক্রিয়াটিস্ট বন্ধু ছিল। ওর সাথে পরামর্শ করলাম। সে বললো যে আপনারা যেহেতু অনেকদিন একসাথে থাকবেন এতগুলো লোক একটা জায়গায়, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই আপনাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হবে। এটা খুব স্বাভাবিক। তো ঝগড়া থামাতে মাঝখানে কাউকে এগিয়ে আসতে হবে। তো আপনারা গ্রুপ ভাগ করে ফেলেন, কোন গ্রুপে ঝগড়া হলে কে এগিয়ে যাবেন। আমরা জানতাম গ্রুপ “এ” তে ঝগড়া হলে সেখানে আমি যাব, গ্রুপ “বি”তে শিবলু ভাই, গ্রুপ সি-তে হলে আনিকা যাবে। আমরা এভাবে ভাগ করেই নিয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে ঝগড়া লাগবেই আমরা নিশ্চিত ছিলাম এবং সেটা হয়েছেও। কিন্তু সেটার জন্য আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি ছিল।’
সেই সাইক্রিয়াটিস্টের পরামর্শ মেনে ১০ দিন পর পর সেন্টমার্টিনে নতুন কাউকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। শিমুল বলেন, ‘ফ্রেশ কোনো ফেইস। যারা আমাদের পরিচিত, যাদের দেখে নতুন করে কথা বলার আগ্রহ জাগে। তো আমরা শোয়েব ভাই, রুশো ভাই, স্নেহাদ্রি, টিটু ভাইকে বলে রেখেছিলাম আসতে। তবে একসাথে না, ভাগে ভাগে। ওনারা যখন আসতেন তখন পরিবেশটা পাল্টে যেত। ঈদের সময় বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন এলে যেরকম খুশি লাগে সেরকম লাগতো। শুটিং শেষে রাতভর আড্ডা হতো।’
সেন্টমার্টিনে টানা ৪৫ দিন ছিল ‘হাওয়া’ টিম। শুটিং হয়েছে ৩৩ দিন। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের জন্য শুটিং ছয় দিন বন্ধ ছিল। আর প্রতি ছয় দিন পর পর সাপ্তাহিক ছুটির মতো একটা বিরতি থাকত।
গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় চঞ্চল চৌধুরী, নাজিফা তুষি ও শরিফুল রাজ অভিনীত ‘হাওয়া’। ছবিটি ইতিমধ্যে দেশের প্রেক্ষাগৃহে ৮০ দিন পার করেছে। দেশের মতো বিদেশেও দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছে। উত্তর আমেরিকার বাজার থেকে তুলে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা।