হিন্দি সিনেমা আমদানি নিয়ে ডিপজলের ভোলবদল
ক্ষমতায় যাওয়ার আগে অনেক বিপ্লবী কথা বললেও ক্ষমতা পাওয়ার পর পাল্টে যাওয়া নতুন কোনো ঘটনায় নয়। এই যেমন দেশীয় সিনেমা বাঁচাতে হিন্দি সিনেমা আমদানি ঠেকানোর চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছিলেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসের ডিপজল। নিজের সেই বক্তব্য থেকে সরে আসলেন তিনি। জানালেন হল বাঁচানোর জন্য হিন্দি সিনেমা দেশে আসলে অসুবিধা নেই।
সম্প্রতি রাজধানীর নয়াপল্টনের একটি হোটেলে প্রদর্শক সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা ও সংগঠনের ওয়েবসাইট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হিন্দি সিনেমা আমদানির পক্ষে মতামত দেন ডিপজল।
গত এপ্রিলে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পর ডিপজল জানিয়েছিলেন হিন্দি সিনেমা আমদানি ঠেকানোর চেষ্টা করবেন তিনি। ডিপজল বলেছিলেন, ‘আমরা তো হিন্দি সিনেমা আমদানির পক্ষে না। হিন্দি সিনেমা যেন আমদানি না হয় সেই চেষ্টা করব। হিন্দি সংস্কৃতি আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির জন্য খারাপ। হিন্দি সিনেমার আমদানি অব্যাহত থাকলে মুখ থুবড়ে পড়বে দেশীয় চলচ্চিত্র। যারা বলছেন হিন্দি সিনেমা হল সচল রাখে, তারা সঠিক বলছেন না। নিয়ম করে দেশীয় সিনেমা মুক্তি দিলে হল এমনিতেই সচল থাকবে।’
তিন মাস না ঘুরতেই নিজের সেই বক্তব্য থেকে সরে আসলেন ডিপজল। জানালেন হল বাঁচানোর জন্য হিন্দি সিনেমা দেশে আসলে অসুবিধা নেই। আজ শনিবার প্রদর্শক সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় হিন্দি সিনেমার আমদানি নিয়ে প্রসঙ্গে ডিপজল বলেন, ‘ভারতের বাংলা সিনেমা আমদানি করলে আমাদের অসুবিধা নেই। আমরা বাংলা সিনেমার সঙ্গে ফাইট করতে প্রস্তুত। কিন্তু হিন্দি সিনেমা আমদানি করলে আমাদের ক্ষতি। তবে আমাদের সিনেমা হল বাঁচানোর জন্য হিন্দি আসলেও অসুবিধা নেই।’
৮ জুন প্রদর্শক সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় ডিপজল বলেন, ‘আমি সব সময় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কথা ভাবি। বাংলা সিনেমা আমদানি করলে করুক, আমরা ফাইট দেব। তবে হিন্দি সিনেমা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু হলও তো বাঁচাতে হবে। এ জন্য আপাতত আপনাদের সবার সঙ্গে একমত আমি, হিন্দি সিনেমা আসুক।’
একই সঙ্গে নিজেদের ভালো মানের সিনেমা নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই বলেও জানান অভিনেতা। তিনি আরও বলেন, ‘৮০টি সিনেমা হল দিয়ে আমাদের চলবে না। আমরা সবাই মিলে সিনেমা হল যদি করি। সবাই মিলে উদ্যোগ নিলে তিন শ–সাড়ে তিন শ সিনেমা হল করা যাবে। এ জন্য আমি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এর মধ্যে হেমায়েতপুরে মাল্টিস্টেরয়েড বিল্ডিং হবে, সেখানে মাল্টিপ্লেক্স চালু হবে। দ্রুতই এর কাজ শুরু করা হবে। পাশাপাশি “পর্বত” ভেঙে ফেলা হয়েছে, সেখানে তিনটি স্ক্রিন হবে। আর দুই বা তিন বছর পর “এশিয়া”ও ভেঙে ফেলব, সেখানে মাল্টিপ্লেক্স চালুর জন্য পরিকল্পনা রয়েছে। সব মিলিয়ে হলের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। তবে শুধু সিনেমা হল হলেই হবে না, ছবিও বানাতে হবে।’
এদিকে ডিপজলের মুখে এমন কথা শুনে চিত্রনায়িকা নিপুণ ও শিল্পী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জানালেন, ডিপজলের হিন্দি সিনেমা আমদানির পক্ষে অবস্থানের এই সিদ্ধান্ত তাঁর জন্মদিনের উপহার।
যে কারণে হিন্দি সিনেমা আমদানির পক্ষে মত দিলেন ডিপজল, এমন একটি খবরের লিংক নিজের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘আমার জন্মদিনের উপহার। শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে আমাদের প্রেক্ষাগৃহ বাঁচাতে হিন্দি সিনেমা প্রদর্শনের প্রস্তাব করেছিলাম।’
গত বছর ১১ এপ্রিল চলচ্চিত্রের ১৯ সংগঠনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের প্রেক্ষাগৃহে উপমহাদেশীয় সিনেমা প্রদর্শনের অনুমতি দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। সে সময় থেকে হিন্দি সিনেমা আমদানির বিপক্ষে ছিলেন ডিপজল।