হিন্দি সিনেমা প্রসঙ্গে ঋত্বিক চক্রবর্তী, ‘নিজেদের জায়গাটা রেখেই যা করার করতে হবে’
বাংলাদেশ ও ভারতে ২৪ ফেব্রুয়ারি একসঙ্গে মুক্তি পাচ্ছে ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী পরিচালিত যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘মায়ার জঞ্জাল’। এ উপলক্ষে ঢাকায় এসেছিলেন কলকাতার অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী, ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন অপি করিম।
ঋত্বিকের ঢাকা সফরে তার সঙ্গে কথা বলেন আজকের পত্রিকার খায়রুল বাসার নির্ঝর। সেখান থেকে যৌথ প্রযোজনা ও ভারতীয় সিনেমা আমদানি প্রসঙ্গে প্রশ্ন ও উত্তর তুলে ধরা হলো।
‘মায়ার জঞ্জাল’ যৌথ প্রযোজনার সিনেমা। যৌথ প্রযোজনার বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন? এটা নিয়ে নানা সময়ে নানা রকম নীতিগত পরিবর্তন হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা এসেছে…
নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি হলো রাষ্ট্রের ব্যাপার। তার মধ্যে না ঢুকে আমি বলতে পারি, যৌথ প্রযোজনার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। আমরা ভাষাগতভাবে এক তো বটেই, কালচারালিও এক। এ দুই অঞ্চলে প্রচুর গুণী মানুষ ছিলেন ও আছেন, শুধু সিনেমার নয়, পুরো সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেই। এটার একটা আদান প্রদানের প্রয়োজন আছে। এবং তাতে আমাদের লাভ বৈ ক্ষতি নেই। দর্শকের ক্ষেত্রে বুঝতে পারি, যেমন আমার কথা বলি, আমার কাজ এখানকার মানুষ দেখেন, পছন্দ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে আমরা তো বুঝতে পারি, অনেকের সঙ্গে কথাও হয়, সেখান থেকে বুঝতে পারি যে, মানুষ পছন্দ করেন। আমাদের ওখানেও বাংলাদেশের অনেকের কাজ প্রচুর মানুষ দেখছেন। ওটিটির কারণেই বেশি দেখছেন। এটা বাড়লে তো বাংলা ছবিরও ভালো, সব কিছুরই ভালো বলেই মনে হয়।
বলিউডের ছবি নিয়ে কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিকে অনেক ভুগতে হয়। বাংলাদেশেও বলিউডের সিনেমা মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তো আপনার অভিজ্ঞতা থেকে বলুন, বাংলাদেশে বলিউডের সিনেমা এলে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?
এটা ঠিক যে, বলিউড একটা বিরাট শক্তিধর ব্যাপার। খুবই জোর তার। সম্প্রতি আমাদের বাংলা ছবিকে হল থেকে চলে যেতে হয়েছে ‘পাঠান’-এর কারণে। কারণ ওদের প্রাথমিক শর্তই ছিল যে, সিঙ্গেল স্ক্রিনের সব শো পাঠানের চাই। স্বাভাবিকভাবেই এক্সিবিউটররা চাইবে পাঠান চালাতে। সেটাও কোনো একভাবে ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভালো, কারণ এক্সিবিটররা ইন্ডাস্ট্রির বাইরের কেউ নন। তারা লাভবান হলেও এক ধরনের লাভ হয়। সব ছবি প্রচুর পয়সা দিতে পারে না। পাঠান দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ইনিশিয়ালি একটা বিরাট পয়সা দিয়ে দেবে। সেটাকেও উপেক্ষা করা যায় না। পাশাপাশি এটাও ঠিক, আমরা যারা ছোট ইন্ডাস্ট্রি, তাদের নিজেদের সংরক্ষণের কথা নিজেদেরকেই ভাবতে হবে। কারণ জায়গা পুরোপুরি ছেড়ে দিলে দখলও হয়ে যেতে পারে। অতএব নিজেদের জায়গাটা রেখেই যা করার করতে হবে।
গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে মসলাদার বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমা অনেকটাই কোণঠাসা। তার বদলে দর্শক বরং কিছুটা ভিন্ন ধারার কাজ বেশি দেখছেন। এ বিষয়টি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
হয়তো এখন ওইভাবে কমার্শিয়াল ছবি চলছে না। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির একজন ইনসাইডার হিসেবে আমি মনে করি, কমার্শিয়াল ছবি বাঁচিয়েও রাখে ইন্ডাস্ট্রিকে। আমি নাচগানের ছবি করি না মানে এই নয় যে, আমি সেটা চাই না। বরং আমি চাই, নাচগানের ছবি হোক এবং সেটা মানুষ হুড়মুড় করে দেখুক। কারণ ওটা বেশি সংখ্যক মানুষকে ইনভলভ করে, ইন্ডাস্ট্রির লাভই হয়। তবে মানুষের তো স্বাদ বদলাচ্ছে। দেখাটা তো ভীষণ বেড়ে গেছে। আমরা এত কিছু দেখছি, আমাদের ভিজ্যুয়াল এক্সপেরিয়েন্সটা বদলে গেছে। আমরা অডিও ভিজ্যুয়াল এভাবে দেখতাম না, এখন যেভাবে দেখি। ফলে দেখার ব্যাপারে মানুষ বেছে নিচ্ছেন বেশি। আগে যেমন কিছু পেলেই দেখতেন, এখন সেটা একটু কমে গেছে।