হুব্বা: ১৪৩০ আসনের সিনেমা হলে ৪০-৫০ জন দর্শক
‘হুব্বা’র সেল-দর্শক কিছুই নাই। ১৪৩০ আসনে যদি ৪০-৫০ জন দর্শক হয়, তাহলে সিনেমা কেমন চলছে এটা নিয়ে আর কী বলবো?— এ কথা বললেন যশোরের মনিহারের ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন।
সম্প্রতি বেশ কয়েকবার ভারতীয় সিনেমা আমদানি করতে চেয়ে ব্যর্থ হয় জাজ মাল্টিমিডিয়া। মোশাররফ করিমের ভারতীয় বাংলা ছবি ‘হুব্বা’ এনেছে তারা। কিন্তু সিনেমাটি একদমই ব্যবসা করতে পারছে না বাংলাদেশে। সে তথ্য বিস্তারিত জানা গেছে চ্যানেল আই অনলাইনের এক প্রতিবেদনে।
কলকাতার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অভিনেতা, নির্দেশক ও এমপি ব্রাত্য বসুর পরিচালনায় ‘হুব্বা’ গত ১৯ জানুয়ারি আমদানি করে প্রায় ৬৩টি সিনেমা মুক্তি দিয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়া।
প্রচার-প্রচারণাতেও বেশ তৎপর দেখা গেছে ছবি সংশ্লিষ্টদের! কিন্তু প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তির পর ঠিক যেন উল্টো কিছু ঘটলো!
২২ জানুয়ারি বিকেলে ‘হুব্বা’ প্রদর্শন হচ্ছে এমন অন্তত দশটি প্রেক্ষাগৃহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে চ্যানেল আই অনলাইন। তার মধ্যে ছিল সিঙ্গেল স্ক্রিন থেকে শুরু করে মাল্টিপ্লেক্স, শহর থেকে মফস্বলের প্রেক্ষাগৃহ।
দেশের সর্বাধুনিক সিনে থিয়েটার স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রায় সবগুলো ব্রাঞ্চে চলছে ‘হুব্বা’। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র মিডিয়া ম্যানেজার ও বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন শুরুতেই বলেন, সিনেপ্লেক্সে ‘হুব্বা’র অবস্থা একেবারে ডিজাস্টার। এই রেজাল্ট একেবারে অপ্রত্যাশিত। শুক্রবার মোটামুটি চলেছে, শনিবার বিকেলেও মোটামুটি ছিলো, কিন্তু রবি-সোমবার যে অবস্থা তা আর বলতে চাই না। এই ছবি নিয়ে আমাদের সবার হাই-এক্সপেকটেশন ছিল।
“মোশাররফ সাহেবের পূর্বের একাধিক ছবি ভালো চলছে। কিন্তু ‘হুব্বা’র দুর্ভাগ্য, সিনেপ্লেক্সের কোনো ব্রাঞ্চে বলার মতো দর্শক পাচ্ছে না। মুক্তির আগে আমাদের প্ল্যান ছিল হয়তো ‘হুব্বা’ মুক্তির দুদিন পরে শো সংখ্যা বাড়াতে হবে। কিন্তু দর্শকদের যে উপস্থিতি, এতে তো এটা একেবারে অসম্ভব।”
রাজধানীর ব্লকবাস্টার সিনেমাসের সহকারী মার্কেটিং ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান বলেন, এভারেজও যাচ্ছে না ‘হুব্বা’। আমাদের এখানে প্রিমিয়ার হয়েছিল, তারা প্রমোশনের চেষ্টা করেও চোখে পড়ার মতো দর্শক ‘হুব্বা’ দেখতে আসেনি। আমরা যেটা আশা করেছিলাম সেটা তো একেবারেই নাই, যেটা কল্পনাও করি নাই সেটাই হয়েছে। দর্শকদের এই উপস্থিতি একেবারে বিলো এভারেজ, যা ৩০ পারসেন্টের নিচে।
রাজধানীর মতিঝিলের ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা সিনেমা হলে ‘হুব্বা’র অবস্থা ‘নাজুক’ উল্লেখ করে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ও হলটির কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন,“প্রথমদিন (শুক্রবার) ইভিনিং শো-তে ১২ হাজার টাকা সেল হয়েছে, আর কী জানতে চান? গত কয়েকদিনে গড়ে ১৮/২০ হাজার টাকা গ্রস সেল হচ্ছে। তাহলে বোঝেন নেট সেল কত আসে? এখনও ভাগ্য ভালো যে নাইট শো বন্ধ হয়ে যায়নি। ব্যক্তিগতভাবে আমি এই ছবি মধুমিতায় ভালো চলবে আগে থেকে প্রত্যাশা রাখিনি।”
কেরানিগঞ্জের লায়ন্স সিনেমাসের বায়েজীদ শাওন জানান, “আমাদের এখানে ‘হুব্বা’ যেমনটা প্রত্যাশা করেছিলাম তেমনটা চলছে না। তবে অন্য সিনেমা থেকে দর্শক উপস্থিতি কিছুটা আছে।”
চট্টগ্রামের দর্শকদের হলে আনতে ব্যর্থ হয়েছে মোশাররফ করিমের ‘হুব্বা’। নগরীর কাজীর দেউড়ীর সুবিশাল সুগন্ধা হলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাদত হোসেন বলেন, যে আশা ছিল তেমন রেসপন্স নেই। মুক্তির আগে হান্ড্রেডে হান্ড্রেড প্রত্যাশা ছিল। সেই তুলনায় ৪০ পারসেন্ট প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না। মোশাররফ করিমের যে ফ্যান ফলোয়ার সেই হিসেবে তারা সিনেমা হলে আসেনি। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, দর্শক সিনেমা হলে না আসার আরেকটি কারণ হতে পারে শীতের তীব্রতা। আগামী সপ্তাহে ‘ফাইটার’ আসবে শুনছি। এরপর আবার হয়তো ঈদের সিনেমায় ব্যবসা হবে।
বগুড়ায় মধুবন সিনেপ্লেক্সের স্বত্বাধিকারী রোকনুজ্জামান ইউনূস বলেন, মধুবনে হুব্বা’র যে সেল যাচ্ছে এটাকে ভালো বলা যাবে না। তবে সব শোতেই কিছু দর্শক আসছে এবং ছবি দেখছে। ব্যক্তিগতভাবে ‘হুব্বা’ আমার কাছে বিরতির পর দুর্দান্ত মনে হয়েছে। বগুড়ায় গত দু’সপ্তাহ হলো সিনেমা হলে দর্শক নেই। কারণ হিসাবে মনে হচ্ছে, অতিরিক্ত শৈত প্রবাহের কারণে মানুষ খুব একটা ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
‘হুব্বা’ প্রদর্শন হচ্ছে সিরাজগঞ্জের রুটস সিনেক্লাবেও। সেখানকার চেয়ারম্যান সামিনা ইসলামের ভাষ্য, শুক্রবার ও শনিবার এভারেজ দর্শক ছিল। এরপর থেকে ‘হুব্বা’ অনলাইনে (পাইরেসি) পাওয়া যাচ্ছে। সত্যি কথা বলতে, দৈনিক চারটি করে শো চললেও একেবারেই আশানুরূপ রেসপন্স নেই।
শীতের প্রকোপে নীলফামারীর সৈয়দপুরের প্রাচীন সিনেমা হল তামান্না-তে ‘হুব্বা’র অবস্থা একেবারেই ডাউন! এর শো অপারেটর ও টেকনিক্যাল ক্রু সায়েখ রহমান বলেন, শীতে মানুষ হলে আসছে না। আর অনলাইনে এই ছবির রিভিউও ভালো না। দর্শক ছবি না দেখার এটিও একটি কারণ। এতে করে দৈনিক কোনো না কোনো শো দর্শক শূন্যতায় বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার দুপুরের শোতে মাত্র ১২ জন দর্শক ছিল। ভালো লাগছে না বলে হল থেকে কয়েকজন বেরিয়ে চলে যায়!