Select Page

২০২১: টিভি নাটকে সেরা দশ

২০২১: টিভি নাটকে সেরা দশ

কয়েক বছরে নাটকের দর্শক বাড়ার সঙ্গে অভিযোগও বেড়েছে। স্বনামধন্য নির্মাতাদের অনেকে নাটক নির্মাণ বন্ধ করে দিয়েছেন কিংবা মানের সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার ওটিটির দিকে দর্শকের আগ্রহ বেড়েছে। এত হতাশার মাঝেও কিছু নাটক দেখে দর্শক তৃপ্ত হয়েছে। নবীন নির্মাতারা চেষ্টা করছেন ভালো কিছু করার, এটা বেশ সুখকর ব্যাপার। সেখান থেকে সেরা দশ নাটক—

১. লাবনী: গোবেচারা ছেলে তামিম ফুটপাত থেকে একটা ছেঁড়া বই কিনে আনে, যার মলাট নেই, সব পৃষ্ঠাও নেই। আর আশ্চর্যজনকভাবে বইয়ের গল্পের মতো তার আশপাশে ঘটনা পড়তে থাকে, প্রভাব পড়ে তার জীবনেও। মারুফ রেহমানের উপন্যাস অবলম্বনে বঙ্গ বব আয়োজিত গোলাম কিসলু হায়দার নির্মিত দারুণ এক গল্পের টেলিফিল্ম ‘লাবনী’। উপন্যাসও দারুণ, তবে উপভোগ্য করার জন্য প্রয়োজন যথাযথ চিত্রনাট্য, যা নির্মাতা ভালোভাবেই করেছেন। আবহসংগীত দারুণ, সঙ্গে জীবনানন্দ দাশের ‘লাশ কাটা ঘরে’ কবিতার ব্যবহার টেলিফিল্মকে পরিপূর্ণ করে তুলেছে। নাম ভূমিকায় টয়া থাকলেও  মনোজ প্রামাণিক বেশি গুরুত্ব পেয়েছেন, করেছেন অসাধারণ অভিনয়।  শাহাদাত হোসেন বেশ গুরুত্ব পেয়েছেন, আছেন তাহমিনা মৌ।

২. চিরকাল আজ: বিরল অ্যামনেশিয়ায় আক্রান্ত এক মেয়ের গল্প,  যার জন্য প্রেমিক, বাবা ও মায়ের জীবনে নেমে আছে দুর্বিষহ যন্ত্রণা। ভিকি জাহেদের গল্পটা দারুণ; মেহজাবীন এই নাটক দিয়েই পুরস্কারের আসরে নিঃসন্দেহে সেরা অভিনেত্রী হয়ে যেতে পারেন, ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অভিনয়। আফরান নিশো যোগ্য সঙ্গ দিয়ে গেছেন, সাবেরী আলম নজর কেড়েছেন। আরও আছেন সৈয়দ নাজমুস সাকিব, কায়েস চৌধুরী। বিদ্রোহী দীপনের সিনেমাটোগ্রাফি, ভিকির পরিচালনা মিলিয়ে দারুণ একটি কাজ।

৩. মরণোত্তম: প্রধান শিক্ষক আজিজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশনে বসেছেন স্কুল এমপিও-ভুক্তির দাবিতে, কিন্তু পেছনের ঘটনা অন্য। গ্রাম্য রাজনীতি, দেশপ্রেম, সামাজিক সচেতনতা সব মিলিয়ে দারুণ এক বক্তব্যের টেলিফিল্ম ‘মরণোত্তম। সাদাত হোসাইনের উপন্যাস অবলম্বনে বঙ্গ বব আয়োজিত সঞ্জয় সমদ্দারের নির্মাণে গল্পটা ভীষণ প্রাসঙ্গিক, চিত্রনাট্য করেছেন ইশতিয়াক অয়ন। ইলিয়াস কাঞ্চন, শহীদুজ্জামান সেলিমের অভিনয়ের পাশাপাশি মুগ্ধ করেছে ইমতিয়াজ বর্ষণ। আরও আছেন সুজন হাবিব, মাহিমা, ইফতেখার ইমাজ। এই ধরনের কাজ সব সময় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

৪. যদি কোনোদিন: বহুদিন পর দুজনের দেখা, তবে অনাকাঙ্ক্ষিত। ডা. সানিয়াত ও বীনার এক সময় প্রেম ছিল, সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু একটি মৃত্যু ও ভুল বোঝাবুঝিতে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। আবার তাদের দেখা, হাসপাতালে। আবার সানিয়াতের কাছে বীনার কাছের মানুষের সুস্থ করার দায়িত্ব, কিন্তু বীনা! সানিয়াতেরই বা মনে কেমন ঝড় চলছে? মূলত গল্পটা প্রাক্তনের সঙ্গে আবার দেখা হওয়ার হলেও এসেছে স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসা খাতে দুর্নীতির কথাও। মিজানুর রহমান আরিয়ানের ছিমছাম নাটকটিতে অপূর্বের অভিনয়ের আভিজাত্য বেশ কাজ দিয়েছে, মুখে কোনো সংলাপ নেই, শুধুমাত্র অভিব্যক্তিতে অনুভূতি আদায় করে নিয়েছেন। মেহজাবীনও বেশ ভালো। দুজনেই নীরব অভিব্যক্তিতে দারুণ করেছেন। শেষটাও দারুণ লেগেছে, চিরাচরিত পথে হাঁটেননি। অয়ন চাকলাদারের গান মুগ্ধতা বাড়ায়।

৫. কমলা রঙের রোদ: এক ডাক্তার দম্পতির গল্প, পছন্দের বিয়ে তাদের। কিন্তু বিয়ের তিন বছর পরেও সন্তান না হওয়ায় পারিপার্শ্বিক যে চাপ দিয়ে যেতে হয় সেটার বাজে অভিজ্ঞতা নিয়েই এই নাটক। শিহাব শাহীনের পরিচালনার এই নাটকের গল্প তাদেরই, যারা সন্তানের আকাঙ্খায় অপেক্ষা করছেন বহু বছর। গল্পের শেষে চমকপ্রদ কিছু ঘটেনি, বাস্তবিকই রাখা হয়েছেন। তাসনিয়া ফারিণ ও তাহসান ভালো অভিনয় করেছেন, সঙ্গে আছেন খালেকুজ্জামান, সাবিহা জামান, মিলি বাশার।

৬. পুনর্জন্ম সিরিজ: এই বছরে ভিকি জাহেদ নিজেকেই ছাড়িয়ে গিয়েছেন। দুর্দান্ত লেগেছে প্রথম পর্ব। নির্মাণ ও চিত্রনাট্যে ছিল মুনশিয়ানা। থ্রিলার ধারার এই নাটকের গল্প তোলা থাক, শুরু থেকেই মেহজাবীনের অভিনয় ছিল চোখে পড়ার মতো, তবে রাফসান হক চরিত্রে ছক্কা হাঁকিয়েছেন আফরান নিশো। দ্বিতীয় পর্বে প্রত্যাশা না মিটালেও তৃতীয় পর্বের জন্য আগ্রহ ধরে রেখেছে ভিকি জাহেদ।

৭. আপন: বাবা ও ছেলের গল্প। বাবাকে বেশ মান্য করে ছেলে। তাই প্রেমিকাকে বিয়ে করার কথা বাবাকে বলতে পারেন না, এক সময় বিপত্নীক বাবা নিজেই নিজের বিয়ের কথা বলেন, গল্পের মোড় ঘুরে যায়। কাজল আরেফিন অমির এই টেলিফিল্ম বেশি ভালো লেগেছে সুন্দরভাবে সমাপ্তি টানার জন্য। যদিও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পিরান খানের গানের কণ্ঠ খুব কানে লেগেছে। আফরান নিশো দারুণ, তাকে এমন চরিত্রেই বেশি ভালো লাগে। তারিক আনাম খান ও মনিরা মিঠু বেশ ভালো, তাসনিয়া ফারিণ অবশ্য গুরুত্ব পেয়েছেন কম। আরও আছেন শামীমা নাজনীন ও জিয়াউল হক পলাশ।

৮. অহং: অহং মানে আমিত্ব,অহংকার। এই আমিত্ব যখন মনে দানা বাঁধে তখনই জটিল হয়ে উঠে জীবন। অপূর্ব-তিশা-শিহাব শাহীন ত্রয়ীর প্রত্যাবর্তনের নাটক। সংসারের গল্প, ভালোবাসা ও মান-অভিমানের গল্প। অসাধারণ কিছু না হলেও দেখতে ভালো লেগেছে। আরও আলো ছড়িয়েছে রাশেদ মামুন অপু।

৯. যদি আমি না থাকি: বিশিষ্ট শিল্পপতি মারা গেছেন, পুরো বাড়িতে শোকের আচ্ছন্ন। কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় সম্পত্তির হিসাব। ছেলে, ভাই, কাছের মানুষেরা যেন অন্যরকম হয়ে উঠে। আশিকুর রহমানের পরিচালনার ‘যদি আমি না থাকি’ গল্পের জন্য খুবই প্রশংসিত হয়েছে। মুখ্য ভূমিকায় তারিক আনাম খান সব সময়ই ভালো করেন, মনিরা মিঠুও আছেন। তবে সেরা দুই তারকা হলেন ইরফান সাজ্জাদ ও অপর্ণা ঘোষ। আরও ছিলেন অর্চি, মাসুম বাশার, মিলি বাশার, সমু চৌধুরী, শেলী আহসান। কনক আদিত্যের গাওয়া ‘ধরো যদি আমি না থাকি’ গানটা মন ছুঁয়ে যায়।

গরম ভাতের গন্ধ: মোশাররফ করিম কোনো কিছুতেই ভাত খেতে চায় না, সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী মমর এই নিয়ে বেশ অভিযোগ। তবে একদিন রহস্য জানা যায়, সামনে চলে আসে এক হৃদয় বিদারক কাহিনী। ইসরাত আহমেদের গল্পে সকাল আহমেদের এই নাটক বেশ ভালো লেগেছে। মোশাররফ করিম ও সাবেরী আলম দুর্দান্ত।

১০. বেস্ট ফ্রেন্ড ৩: প্রবীর রায় চৌধুরীর জনপ্রিয় সিরিজ বেস্ট ফ্রেন্ডের সর্বশেষ পর্ব। মূল চরিত্র জোভানকে কেন্দ্র করে ওঠা এই পর্বে এসেছেন প্রথম পর্বের নায়িকা মেহজাবীন। তাদের দুজনের কাছে আসার গল্প এটি। আদর আজাদের পাশাপাশি তাসনিয়া ফারিণ ছিল বিশেষ চরিত্রে। সুন্দর আয়োজন ছিল। পিরান খানের ‘অভিমান’ তো এই বছরের সুপারহিট গান।

বিশেষ মিস্টার কে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক আনামকে প্রায় কিডন্যাপ করেই নিয়ে আসা হয় বিশেষ কাজের জন্য। একজন প্রয়াত শিল্পপতির বিদেশের ব্যাংকের লকারের পাসওয়ার্ড বের করতে হবে। এটা অসম্ভব ব্যাপার, কিন্তু আনামের আছে নিজস্ব  ‘অনুমান বিদ্যা’, যা দিয়ে পাসওয়ার্ড বের করার চেষ্টা চালান। মাহবুব মোর্শেদের ‘নোভা স্কশিয়া’ অবলম্বনে ওয়াহেদ তারেকের নির্মাণ গুনে দারুণ টেলিফিল্ম ‘মিস্টার কে’। ওয়াহেদ তারেকের চিত্রনাট্যে পার্থ বড়ুয়ার অভিনয় প্রাণ দিয়েছে। শাহেদ শরীফ খানকে দেখা গেছে অনেক দিন বাদে, সঙ্গে সুষমা সরকার ও অর্ষা। বঙ্গবব বই থেকে শুরু— এই ধরনের উদ্যোগ নেয়ার জন্য সাধুবাদ।

আরও ভালো লেগেছে: যত্ন, রাত গভীর হয়, রক্ত, সিদ্ধান্ত, শোকসভা, এন্টি হিরো, পারাপার, চরের মাস্টার ও ছন্দপতন।


মন্তব্য করুন