Select Page

২১টি ছবির পরিচালক আমজাদ হোসেন জাতীয় পুরস্কার পান ১৩ বার

২১টি ছবির পরিচালক আমজাদ হোসেন জাতীয় পুরস্কার পান ১৩ বার

আমজাদ হোসেন পরিচালিত বেশির ভাগ ছবিই জিতেছে একাধিক জাতীয় পুরস্কার, তিনি নিজেও পুরস্কার রেকর্ডধারী…

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথিতযশা চলচ্চিত্রকারদের নাম উঠলে যার নাম নিঃসন্দেহে প্রথম সারিতে থাকবে। তিনি শুধু পরিচালকই নন, একজন সফল ঔপন্যাসিক, সংলাপ রচয়িতা, গীতিকার, প্রযোজক, শিল্প নির্দেশক, অভিনয়শিল্পীও। সর্বগুণান্বিত হয়ে একের পর এক কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করে বাংলা চলচ্চিত্রকে করেছেন সমৃদ্ধ, তিনি কিংবদন্তী ‘আমজাদ হোসেন’।

সাহিত্যিক হিসেবে তিনি সুপরিচিত, উপন্যাস-ছোট গল্প ছাড়াও আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থও লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধ পূর্বকালীন যেই সিনেমা স্বাধীনতা আন্দোলনে যে গণজোয়ার এনেছিল সেই কালজয়ী সিনেমা ‘জীবন থেকে নেয়া’র সংলাপ রচয়িতা। গ্রাম বাংলার ভালোবাসার ছবি হিসেবে যে-ই ছবিটি সবচেয়ে বেশি সুপরিচিত, সেই বিখ্যাত সিনেমা ‘সুজন সখি’রও কাহিনীকার, সংলাপ রচয়িতা তিনি।

পৌরাণিক কাহিনী নিয়ে নির্মিত জনপ্রিয় ছবি ‘বেহুলা’র সংলাপ রচনাও তার হাত ধরেই। এ ছাড়া ধারাপাত, আনোয়ারা, আবার তোরা মানুষ হ, জয়যাত্রা, আকাশছোঁয়া ভালোবাসার মতো জনপ্রিয়  ছবির কাহিনিকার তিনি। অভিনেতা আমজাদ হোসেন ‘জীবন থেকে নেয়া’র আলোচিত চরিত্র ‘মধু ভাই’ হয়ে অনবদ্য অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয়ে তিনি গেঁথে আছেন। এ ছাড়া হারানো দিন, আগুন নিয়ে খেলা, বেহুলা, প্রাণের মানুষ, প্রেমী ও প্রেমী’সহ অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘জব্বার আলী’র নাম ভূমিকায় তিনিই অভিনয় করেছেন, ছবিয়ালের ‘২৬ দিন মাত্র’তেও অভিনয় করেন। গোলাপী এখন ট্রেনে, সুন্দরী সিনেমার সেই কালজয়ী গানের সৃষ্টিদাতা তিনি, প্রযোজনা, শিল্প নির্দেশনাও নিজেকে সুপরিচিত করেছেন।

পরিচালক আমজাদ হোসেন: আগুন নিয়ে খেলা (১৯৬৭) ও দুই ভাই (১৯৬৮); এই ছবি দুটি তিনি যৌথভাবে নির্মান করেন। জুলেখা, বাল্যবন্ধু, পিতাপুত্রের পর ১৯৭৬ সালে ‘নয়ন মনি’ নির্মাণ করেন নিজের লেখা উপন্যাস ‘নিরক্ষর স্বর্গে’ অবলম্বনে। ফারুক, ববিতা, আনোয়ার হোসেন, সুলতানা জামান, আনোয়ারা, রওশন জামিল, সৈয়দ হাসান ইমাম, এটিএম শামসুজ্জামান অভিনীত এই ছবিটি ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়, এবং ৩টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে। তিনি নিজেও পুরস্কৃত হন।

১৯৭৮ সালে নির্মাণ করেন ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, নিজের লেখা ‘ধ্রুপদী এখন ট্রেনে’ উপন্যাস অবলম্বনে। ববিতা, ফারুক, আনোয়ারা, রওশন জামিল, আনোয়ার হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, তারানা হালিম, রোজী সামাদ, এটিএম শামসুজ্জামান অভিনীত সেই সময় দারুণ ব্যবসাসফল হয়, সাথে কালজয়ী ছবি হিসেবে এটি স্থান করে নেয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে। ছবিটি ১১টি শাখায় পুরস্কার পেয়ে ভীষন আলোচিত হয়, তিনি নিজেই পাঁচটি পুরস্কার পেয়ে সবাইকে চমকে দেন।

১৯৭৯ সালে নির্মাণ করেন ‘সুন্দরী’। ববিতা, ইলিয়াস কাঞ্চন, আনোয়ারা, সাইফুদ্দিন অভিনীত ছবিটি ৭টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার পায়, তিনি নিজে পান ২টি। ১৯৮০ সালে ববিতা, আলমগীর, রোজিনা, আনোয়ারাকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘কসাই’। ছবিটি ৪টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার পায়।

১৯৮১ সালে ব্যবসাসফল ছবি ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ মুক্তি পায়। অভিনয় করেছিলেন বুলবুল আহমেদ, ববিতা, আনোয়ারা। পরের বছর রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, আনোয়ারা অভিনীত আরেক বিখ্যাত সিনেমা ‘দুই পয়সার আলতা’ মুক্তি পায়। ছবিটি ৪টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার পায়।

১৯৮৪ সালে নির্মাণ করেন নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ছবি ‘ভাত দে’। ইতিহাস বিখ্যাত এই ছবি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথম সারিতে নাম লিখে নিয়েছে। শাবানা, আলমগীর, আনোয়ারা, রাজিব অভিনীত ব্যবসাসফল  ছবিটি ১০টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে, তিনি নিজেই পান ৩টি।

এরপর একে একে নির্মাণ করেন সখিনার যুদ্ধ (১৯৮৪), হীরামতি (১৯৮৮), গোলাপী এখন ঢাকায় (১৯৯৫), আদরের সন্তান (১৯৯৫), সুন্দরী বধূ (২০০২), প্রাণের মানুষ (২০০৩), কাল সকালে (২০০৫) ও গোলাপী এখন বিলাতে (২০১০)। মাঝে শরতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কাশীনাথ’-এর অনুপ্রেরণায় নির্মিত ছবি ‘বড় বাড়ীর মেয়ে’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তিনি যৌথ ও একক মিলিয়ে মোট ২১টি সিনেমা নির্মাণ করেছেন। ক্যারিয়ারে অর্জন করছেন সর্বোচ্চ ১৩টি জাতীয় পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ আরো বহু পুরস্কার।

উনার চার পুত্রের মধ্যে দুজন সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমান নির্মাণ ও অভিনয়ের সাথে যুক্ত।

কিংবদন্তী এই চলচ্চিত্রকার ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। মারা যান ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

চলচ্চিত্র ও নাটক বিষয়ক লেখক

মন্তব্য করুন