Select Page

ডিটেইল সমু চৌধুরী

ডিটেইল সমু চৌধুরী

সমু চৌধুরী..

নব্বই দশকে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের কাছে একটি অতি পরিচিত নাম। মঞ্চের পেশাদার অভিনেতা সমু চৌধুরী। নব্বই দশকের সোনালি দিনগুলোতে ছোটপর্দার পরিচিত মু্খ। অসাধারণ অভিনেতা। মঞ্চ যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড তারা অভিনয়টা হাতে-কলমে রপ্ত করে তবেই আসে। তারা কাজ করতে করতে যেমন শেখে তেমনি কাজ করার আগে নিজেকে ঝালিয়েও নেয়।

জন্ম ৮ জুন, ১৯৬৪। যশোর।

আতিকুল হক চৌধুরী-র ‘সমৃদ্ধ অসীম’ নাটক দিয়ে বিটিভিতে ক্যারিয়ার শুরু করে ১৯৯০ সালে। যশোরে উদীচী করত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। মঞ্চে কাজ করত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে।

সমু-র পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা নাটকেই বেশি। বিশেষ করে অ্যাকশন ঘরানার নাটকে তার জনপ্রিয়তা আছে। এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ হোসেন জেমী-র আলোচিত ‘লোহার চুড়ি’ নাটকের কথা বলা যায় যেখানে টনি ডায়েসের সাথে তাকে অপারেশন করতে যেতে হত।

উল্লেখযোগ্য নাটক: জন্মভূমি, রঙের মানুষ, বিবর্ণ প্রজাপতি, অনেকেই একা, এত কষ্ট কেন ভালোবাসায়, পিঞ্জিরা, হয়তো তোমার জন্য, না, পৃষ্ঠা, মা তুরাগ নদী, সবুজের হলুদ ব্যাধি, দূরের আকাশ, জিনের বাদশা, পাগল মানুষগুলো, নিশিকুটুম্ব, অধিকার, সাতপৌরে কাব্য, কালো জোছনা, সোনালি রোদ্দুরে, উঠোন।

সমু-র পরিচিতি সম্পর্কে তাঁর স্মৃতিচারণে জানা যায় পুলিশ একবার তাঁকে চিনতে পারেনি কিন্তু টোকাইরা তাঁকে চিনতে পেরেছিল এবং পুলিশ পরে তাঁকে সরি বলেছিল। ‘কাইট’ নাটকের শ্যুটিং করতে গিয়ে একটি মেয়ে অটোগ্রাফ চায় হাতে সমু বলেছিল হাতে অটোগ্রাফ দিলে তো মুছে যাবে তখন মেয়েটি বলে আজকে রাতে সে খাবে না। এতে বোঝা যায় সমুর স্টারডম ছিল। বর্তমানেও তাঁকে নাটক, ওয়েব সিরিজে বেছে বেছে কাজ করতে দেখা যায়।

নাটকে কাজ করা প্রসঙ্গে তাঁর পুরনো দিনের অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ। তিনদিন ধরে নাটকের রিহার্সেল হত, আয়নার সামনে এক্সপ্রেশন প্র্যাকটিস করতে হত, রাত জেগে স্ক্রিপ্ট পড়তে হত। তারপরেও ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে ভয় লাগত তাঁর। কতটা পরিশ্রম করতে হত তখনকার সময় নাটকে অভিনয়ের জন্য আজকের দিনের নাটকের শিল্পীরা যা করে না।

প্রথম ছবি: আদরের সন্তান

অন্যান্য: মায়ের অধিকার, দোলন চাঁপা, শত জনমের প্রেম, প্রেমের নাম বেদনা, দেশ দরদী, সুন্দরী বধূ, যাবি কই, মরণ নিয়ে খেলা, জুম্মন কসাই, হৃদয় থেকে পাওয়া।

চলচ্চিত্রে নেগেটিভ রোলে খুবই ভালো ছিল। দু’একটা পজেটিভও করেছে। ‘আদরের সন্তান’ ছবিতে সমু গ্রামের বখাটে চরিত্রে অভিনয় করেছে। সাদেক বাচ্চুর ছেলে থাকে। ইলিয়াস কাঞ্চনের বোনকে রাস্তায় বিরক্ত তার কাজ। বন্ধুবান্ধব মিলে গাছের তলে আড্ডা দেয়া, শিস ফুঁকোনো, ডাবের পানিতে চুমুক দেয়া তার কাজ। কাঞ্চনের বোনের বিয়ের দিন বিয়ে বন্ধ করে অ্যাসিড মারতে যায় সমু। তবে তার বদলে ভুল করে আর একজনকে মারে। কাঞ্চন যখন তার বোনকে বিরক্ত করার জন্য সমুকে সাবধান করে সমু বেয়াদবি করলে কাঞ্চন চড় মারে। তখন সমুর অ্যাঙ্গার এক্সপ্রেশন দুর্দান্ত ছিল। তার চরিত্রের যতটুকু স্পেস ছিল সে মনোযোগী ছিল অভিনয়ে।

‘মায়ের অধিকার’ ছবিতে ছিল কলেজের বখাটে। ‘সুন্দরী বধূ’ ছবিতে নাসিমা খানের ছেলের চরিত্রে ছিল। শাবনূর-রিয়াজের মধ্যে অশান্তি তৈরি করতে চেষ্টা করেছে। ‘মরণ নিয়ে খেলা’ ছবিতে ছিল আহমেদ শরীফের ছেলের চরিত্রে। সেখানেও লিড ভিলেনের সাথে নিজের ভালো অভিনয়টা করে গেছে।

’ দেশ দরদী’ ছবিতে মান্নার ছোটভাইয়ের চরিত্রে ছিল। ঋতুপর্ণাকে অপমান করে, ঋতুর সাথে বিয়ে হয় মান্নার। তখন ঋতু অন্ধ থাকে কিন্তু চোখ ঠিক হওয়ার পর তার নজরে আসে সমু। ঋতু জানায় একটা চক্রের সাথে কাজ করে তার দেবর সমু যাদের কাজ ছিল নগ্ন ভিডিও তৈরি করা। ‘জুম্মন কসাই’ ছবিতেও ছিল।

পজেটিভ রোলে ‘মরণ নিয়ে খেলা’ ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একজন তরুণ উদীয়মান খলনায়ক হিসেবে রেগুলার কাজ করলে সমুর অনেককিছু দেয়ার ছিল চলচ্চিত্রে। সমু চৌধুরীকে আরো অনেক ছবিতে খলনায়কের কাজ করালে নিঃসন্দেহে নতুন কিছু মিলত।

আজকের অভিনয়জগতে যা কিছু সহজ, সস্তা মনে হয় সেগুলোর বিপরীতে অভিনয়কে সাধনা হিসেবে গ্রহণ করতে গেলে একজন সমু চৌধুরী হতে পারে স্টাডি পার্ট।


মন্তব্য করুন