Select Page

সালতামামি ২০২৫: ঈদনির্ভর চলচ্চিত্রের বছর

সালতামামি ২০২৫: ঈদনির্ভর চলচ্চিত্রের বছর

শেষ হল আরেকটি বছর। সারা বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৪৬টি হলেও বিগত বছরগুলোর মত এ বছরও উল্লেখ করার মত চলচ্চিত্রের সংখ্যা গুটিকয়েক। দুই ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত মাত্র ৫টি চলচ্চিত্র বাণিজ্যিক সফলতার মুখ দেখেছে। ঈদ-উৎসব ব্যতীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রায় সবকয়টি চলচ্চিত্রই ব্যবসায়িক দিক থেকে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বছর বিকল্পধারার চলচ্চিত্রগুলোও আলোচনায় থাকলেও এ বছরে মুক্তিপাপ্ত বিকল্পধারার চলচ্চিত্রগুলো আলোচনায় আসতে পারেনি।

সালতামামি ২০২৫ (ছবি কোলাজ: বাংলা মুভি ডেটাবেজ)

এক নজরে ২০২৫

বছরের প্রথম সপ্তাহে মুক্তি পায় নবীন পরিচালক তানভীর হাসানের ‘মধ্যবিত্ত’। শিশির সরদার ও এলিনা শাম্মী অভিনীত ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়। এরপর মুক্তি পায় অনন্য মামুনের ‘মেকআপ’ ও আব্দুল মান্নানের ‘কিশোর গ্যাং’। ২০২১ সালে নির্মিত হলেও চলচ্চিত্র অঙ্গনকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের জন্য ‘মেকআপ’ ছবিটিকে ২০২১ ও ২০২৪ সালে দুইবার নিষিদ্ধ করা হয়। অবশেষে ১ মিনিটের দৃশ্য কর্তনের পর সার্টিফিকেশন বোর্ড থেকে “ইউ” গ্রেড পেয়ে ছবিটি মুক্তির উপযোগী হয়। নির্মাণ থেকে শুরু করে মুক্তি পর্যন্ত দীর্ঘদিন আলোচনায় থাকার পরও ছবিটি বাণিজ্যিক সফলতার মুখ দেখতে পারেনি। এছাড়া সারাদেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করা কিশোর অপরাধ নিয়ে নির্মিত ‘কিশোর গ্যাং’ ছবিটিও প্রেক্ষাগৃহে সাড়া জাগাতে পারেনি। মাসের শেষভাগে মুক্তি পাওয়া অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘রিকশা গার্ল’ নান্দনিক দৃশ্যসম্বলিত ও গল্পসমৃদ্ধ হলেও প্রেক্ষাগৃহে দর্শক খরা কাটাতে পারেনি।

ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে বদিউল আলম খোকনের ‘দায়মুক্তি’ ও নবাগত পরিচালক ইকবাল হোসাইন চৌধুরীর ‘বলী’ মুক্তি পায়। চট্টগ্রামের বিখ্যাত জব্বারে বলীখেলা নিয়ে নির্মিত ‘বলী’ ছবিটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রে উৎসবে অংশগ্রহণের কল্যাণে কিছুটা আলোচনায় আসে, কিন্তু দুটি ছবির কোনটিই ব্যবসা সফলতার মুখ দেখেনি। ভালোবাসা দিবসে মুক্তিপ্রাপ্ত অরুণ চৌধুরী পরিচালিত ‘জলে জ্বলে তারা’ ও মনজুরুল ইসলাম মেঘ পরিচালিত ‘ময়না’ মুক্তি পায়। মিথিলা ও এফ এস নাঈম অভিনীত ‘জলে জ্বলে তারা’ আলোচনায় আসলেও আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেনি, অন্যদিকে রাজ রিপা ও কায়েস আরজু অভিনীত ‘ময়না’ দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়।

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ৬টি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এর মধ্যে আলোচনার শীর্ষে ছিল মেহেদী হাসান হৃদয় পরিচালিত ‘বরবাদ’। প্রেম আর সহিংসতার মিশেলে নির্মিত ছবিটি দিয়ে শাকিব খান তার জনপ্রিয়তাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যান। বড় আয়োজনের এই ছবিটির পরিচালনা, অভিনয়, সঙ্গীত, চিত্রগ্রহণ, মারপিটের দৃশ্য – প্রায় সব বিভাগেই পয়সা উসুল। ছবিটিও সুপারহিট ব্যবসা করে। ‘বরবাদ’-এর পাশাপাশি আলোচনায় ছিল ও ব্যবসাসফল হয় শিহাব শাহীনের ‘দাগি’ ও এম রাহিমের ‘জংলি’। ‘দাগি’ দিয়ে ‘সুড়ঙ্গ’-এর পর আবারও জুটি বাঁধেন আফরান নিশো ও তমা মির্জা। বিগত বছরের মত এ বছরও দর্শক এই জুটিকে গ্রহণ করে। অন্যদিকে, ‘জংলি’ এক মানবিক সম্পর্কের গল্প। ছবিতে সিয়াম আর তার আশ্রিত কন্যা চরিত্রে অভিনয় করা ছোট্ট মেয়ে নৈঋতার রসায়ন ও আবেগী দৃশ্যগুলো দর্শকদের ধরে রাখার কাজ করে গেছে। ঈদের অন্য ছবিগুলোর মধ্যে শরাফ আহমেদ জীবনের ‘চক্কর ৩০২’ এর উপস্থাপনা ও অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হয়। অন্যদিকে, শাকিব খানের আরেকটি চলচ্চিত্র ‘অন্তরাত্মা’ ও সজল-নুসরাত ফারিয়ার ‘জ্বীন ৩’ বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।

এপ্রিলে নতুন কোন ছবি মুক্তি পায়নি। বরং ঈদের ছবিগুলো দিয়েই প্রেক্ষাগৃহ জমজমাট ছিল। মে মাসে মুক্তি পায় করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘জয়া আর শারমিন’। জয়া আহসান অভিনীত ছবিটি দর্শকের সাড়া পায়নি। একই মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত আরেক চলচ্চিত্র ‘আন্তঃনগর’ এক সপ্তাহের পূর্বেই প্রেক্ষাগৃহ থেকে নেমে যায়।

ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে মুক্তি পায় ৬টি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে আলোচিত ও ব্যবসাসফল হয় রায়হান রাফী পরিচালিত ‘তাণ্ডব’। জিম্মি অবস্থা, শাকিব খানের অভিনয় আর গলার স্বরের চমকে দেওয়া পরিবর্তন, টানটান উত্তেজনাপূর্ণ গল্প আর সিয়াম-নিশোর ক্যামিও চরিত্র মিলে ফুল প্যাকেজ ছিল ছবিটি। আলোচনায় ছিল সানী সানোয়ারের মার্ডার-মিস্ট্রি ঘরানার ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ এবং সঞ্জয় সমাদ্দারের ‘ইনসাফ’। চলচ্চিত্র দুটি মাঝারি মানের ব্যবসা করে। আলোক হাসান পরিচালিত ‘টগর’ এবং ধারাবাহিকভাবে তরুণীদের খুন নিয়ে নির্মিত আরেক মার্ডার-মিস্ট্রি ছবি ‘নীলচক্র’ ব্যবসায়িকভাবে ফ্লপ হয়। তবে ঈদ উৎসবকে উৎসবমুখর করে রাখে তানিম নূরের ‘উৎসব’। চার্লস ডিকেন্সের ‘আ ক্রিসমাস ক্যারল’ এর ছায়া অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি একই সাথে প্রেম, রসবোধ, রোস্টিং ও আবেগঘন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করেছে দর্শকদের।

জুলাই ও আগস্ট মাসে দুটি করে চারটি ছবি মুক্তি পায়। জুলাইয়ে মুক্তিপ্রাপ্ত কামার আহমাদ সাইমনের ‘অন্যদিন…’ ও বিপ্লব হায়দারের ‘আলী’ এবং আগস্টে মুক্তিপ্রাপ্ত জোবায়দুর রহমানের ‘উড়াল’ ও কবিরুল ইসলাম রানার ‘জলরঙ’ – কোনটিই সফলতার মুখ দেখেনি। সেপ্টেম্বরে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা বাড়লেও দর্শক টানতে ব্যর্থ হয় সবকয়টি ছবি। মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো ছিল কাজী মোহাম্মদ ইসলাম মিয়ার ‘আমার শেষ কথা’, বড়ুয়া সুনন্দা কাঁকনের ‘ডট’, সোয়াইবুর রহমান রাসেলের ‘নন্দিনী’, লীসা গাজীর ‘বাড়ির নাম শাহানা’, মুর্তজা আতশ জমজমের ‘ফেরেশতে’, শফিউল আযমের ‘উদীয়মান সূর্য’, মাকসুদ হোসাইনের ‘সাবা’ ও মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’। মেহজাবীন চৌধুরীর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘সাবা’ একাধিক সপ্তাহ সিনেপ্লেক্সগুলোতে চললেও ব্যবসায়িক সাফল্যের মুখ দেখেনি।

অক্টোবরে মুক্তির দৌড়ে ছিল সুজন বড়ুয়ার ‘বান্ধব’, নাসিম সাহনিকের ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ’, আনোয়ার সিরাজীর ‘অন্ধকারে আলো’, আমিন খান-পপির কামব্যাক ছবি ‘ডাইরেক্ট অ্যাটাক’, টিভি সিরিয়াল থেকে চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত ‘সাত ভাই চম্পা (আদি পর্ব)’, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম খানের ‘কন্যা’ ও সবুজ খান প্রিন্সের ‘বেহুলা দরদী’। কিন্তু সব কয়টিই এক সপ্তাহের মধ্যে প্রেক্ষাগৃহ থেকে নেমে যায়। নভেম্বর মাসের শুরুতে ‘শাটিকাপ’ ও ‘সিনপাট’ ওয়েব সিরিজ দিয়ে আলোচনায় আসা মোহাম্মদ তাওকীর ইসলামের ‘দেলুপি’ মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটি এর বিষয়বস্তুর জন্য আলোচনায় আসে, কিন্তু অল্প সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ায় সর্বস্তরের দর্শকের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। নভেম্বরে মুক্তিপ্রাপ্ত অন্য দুই চলচ্চিত্র মোসাঃ আয়েশা সিদ্দিকার ‘মন যে বোঝে না’ ও সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ইমন সাহার ‘সাইলেন্স: আ মিউজিক্যাল জার্নি‘ আলোচনায় জায়গা করে নিতে পারেনি। ডিসেম্বরে মুক্তিপ্রাপ্ত রকিবুল আলম রকিবের ‘গোয়ার’ ও মোঃ শফিউল্লাহর ‘খিলাড়ি’ কেবল মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যাই বাড়িয়েছে, সাথে বাড়িয়েছে হতাশা।

সেরা পাঁচ

এ বছর আয়ের দিক থেকে সেরা পাঁচ চলচ্চিত্র হল-

১. ‘বরবাদ’

২. ‘তাণ্ডব’

৩. ‘উৎসব’

. ‘দাগি’

৫. ‘জংলি’

আলোচিত ঘটনাবলি

ঈদের ছবি ‘বরবাদ’ এ অতিরিক্ত ভায়োলেন্সের দৃশ্যের জন্য চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড আপত্তি জানিয়ে সংশোধনী দেয়। এতে করে শাকিব খানের ভক্তরা ছবিটি আনকাট মুক্তি দেওয়ার জন্য চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের সামনে মানববন্ধন করে। পরবর্তীতে সংশোধন সাপেক্ষে ছবিটি ইউ সার্টিফিকেট নিয়ে ছাড়পত্র পায়।

ঈদুল আযহায় মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তাণ্ডব’ ছবিটি মুক্তির পর যখন বক্স অফিসে খুব সাফল্যের মুখ দেখছিল, তখন মুক্তির মাত্র দুই সপ্তাহের মাথা ছবিটির পাইরেটেড ভার্সন এইচডি কপি- প্রফেশনাল সাউন্ডসহ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। প্রচলিত পাইরেসির মত এর হল প্রিন্ট বা ক্যামেরা প্রিন্ট নয় বরং সরাসরি প্রদর্শনের কপিই লিক হয়, যা ছবিটির ব্যবসায়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

প্রযোজক হিসেবে ‘মায়া’ নামের একটি ছবির জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৫ লাখ টাকার অনুদান পেয়েছিলেন শাকিব খান। ২০২২ সালের ২১ আগস্ট তিনি অনুদানের প্রথম কিস্তি হিসেবে ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা চেক গ্রহণ করেন। এর ৩ বছর পরও ছবিটির কাজ শুরু হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী চেক পাওয়ার ৯ মাসের মধ্যে ছবির কাজ শুরু না হওয়ায় মন্ত্রণালয় থেকে শাকিব খানকে চিঠি পাঠায়। কয়েক দফায় চিঠি পাটানোর পর শাকিব খান তথ্য মন্ত্রণালয়ে প্রথম কিস্তির টাকা ফেরত দেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব অভিনেত্রীদের নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠের ‘কাজ নেই, ফেসবুকে খই ভাজছেন তারকারা’ সংবাদের প্রেক্ষিতে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। শোবিজের একাধিক অভিনেত্রীকে তাদের ফেসবুকে এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও মানহানিকর সংবাদের প্রতিবাদ করতে দেখা যায়।

বাংলা চলচ্চিত্র ও ওয়েব কনটেন্টকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছে পুরস্কারের ট্রেন্ড। পুরস্কার কাজের অনুপ্রেরণা এবং ভালো কাজের প্রতি শিল্পীর আগ্রহ সৃষ্টি করে। গুটি কয়েক আলোচিত কাজের বিপরীতে একাধিক আয়োজক পুরস্কার আয়োজন করছেন এবং সেসব পুরস্কারে জাঁকজমকের কমতি নেই। ভিন্ন-ভিন্ন শাখা সৃষ্টি করে শিল্পী-কলাকুশলীদের একাধিক পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। আবার কিছু আয়োজক পুরস্কৃত শিল্পীরা তাদের কোন কাজের জন্য পুরস্কার পাচ্ছে তাও স্পষ্ট করছেন না। যেখানে চলচ্চিত্রগুলো দর্শকই টানতে পারছে না, সেখানে জনপ্রিয় বিভাগে যেসব পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে তা কতটা জনপ্রিয় এই বিষয় নিয়েও দর্শকদের মনে প্রশ্ন জাগছে।

শ্রদ্ধাঞ্জলি

এ বছর চলচ্চিত্রাঙ্গন হারিয়েছে সোনালি যুগের দুই শিল্পীকে। তারা হলেন অঞ্জনা ও প্রবীর মিত্র। এছাড়াও মৃত্যুবরণ করেছেন অভিনেত্রী ও গীতিকার জাহানারা ভূঁইয়া এবং পরিচালক শেখ নজরুল ইসলাম।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অঞ্জনা ৪ জানুয়ারি রাত ১টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অঞ্জনার অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। তবে তার অভিনীত ও একই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ‘দস্যু বনহুর’। আলমগীর কবির পরিচালিত ‘পরিণীতা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে অঞ্জনা সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ও ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রগুলো হল ‘মাটির মায়া’, ‘অশিক্ষিত’, ‘চোখের মণি’, ‘সুখের সংসার’, ‘জিঞ্জির’, ‘অংশীদার’,‘আনারকলি’, ‘বিচারপতি’, ‘আলাদীন আলীবাবা সিন্দাবাদ’, ‘অভিযান’, ‘মহান’ ও ‘রাজার রাজা’, ‘বিস্ফোরণ’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘রাম রহিম জন’ প্রভৃতি।

বর্ষীয়ান অভিনেতা প্রবীর মিত্র ৫ জানুয়ারি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরলোকগমন করেন। শুরুটা প্রধান নায়ক চরিত্রে শুরু করলেও চরিত্রাভিনেতার দিকে মনোযোগী হয়ে ওঠেন তিনি। প্রধান নায়ক হিসেবে তিনি ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চাবুক’সহ বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। সর্বশেষ নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছিলেন ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিতে। রাজ্জাকের সাথে ‘বড় ভালো লোক ছিল’ ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করে পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়া ‘সীমার’ ও ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেও দুইবার বাচসাস পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। তার অভিনীত আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয়–পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’ প্রভৃতি।

সত্তর ও আশির দশকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি গীতিকার, নির্মাতা এবং প্রযোজক হিসেবেও পরিচিত জাহানারা ভূঁইয়া ২০২৫ সালের ২৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। ডায়াবেটিসের কারণে তাঁর দুটি কিডনিই অচল হয়ে গিয়েছিল। তাকে অধিকাংশ ছবিতে মাতৃস্থানীয় চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যেত। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল ‘মহানায়ক’, ‘দোলা’, ‘কালিয়া’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘দোস্ত আমার’, ‘চিরশত্রু’ প্রভৃতি। তিনি ‘নিমাই সন্ন্যাসী’, ‘দোস্ত আমার’, ‘জীবন সংসার’, ‘স্নেহের প্রতিদান’, ‘সুলতান’ প্রভৃতি ছবির গানের গীত লিখেছেন।

‘চাঁদের আলো’ খ্যাত পরিচালক শেখ নজরুল ইসলাম ২২ নভেম্বর ঢাকার ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘চাবুক’। তার পরিচালিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হল ‘নদের চাঁদ’, ‘এতিম’, ‘নাগিন’, ‘মাসুম’, ‘ঈদ মোবারক’, ‘আশা’, ‘পরিবর্তন’, ‘নতুন পৃথিবী’, ‘স্ত্রীর পাওনা’, ‘চাঁদের হাসি’, ‘মা বড় না বউ বড়’ প্রভৃতি। তিনি ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ (অসমাপ্ত) ছবিতে জহির রায়হানের সহকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন এবং এতে একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন।

সামগ্রিকভাবে ২০২৫ ছিল বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য আরেকটি হতাশার বছর। দুই ঈদের বাইরে কোন চলচ্চিত্রই দর্শক টানতে পারেনি। ফলে বাংলা চলচ্চিত্র এ বছর ঈদ নির্ভর হয়ে পড়েছে। ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রগুলো সহিংসতা ও মারপিট নির্ভর, কিন্তু ঢালিউডের তথাকথিত ফর্মুলার বাইরে, নতুন গল্পে ও নতুন আঙ্গিকে। ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ‘উৎসব’, এটি হাস্যরসাত্মক, ভৌতিক, আবেগঘন ও ভালো লাগার মত চলচ্চিত্র। ঈদের বাঈরে বাকি ছবিগুলো দর্শক টানতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয় এবং দর্শক সংকটে অধিকাংশ ছবিই এক সপ্তাহের মধ্যে প্রেক্ষাগৃহ থেকে নেমে যায়।


Leave a reply