আরো ভালোবাসবো তোমায় – যেখানে মুগ্ধতা ও হতাশা হাঁটবে হাত ধরাধরি করে
সুপারস্টার শাকিব খানের সাথে মোবাইলে আলাপ হয় তাঁর ভক্ত পরীমণির। আর সেই থেকে প্রেম। পরীমণির আবদারে সাধারণ মানুষের মত ট্রেনে চেপে সিলেটে রওনা দেয় শাকিব। সামনাসামনি দেখা হয় দুজনের, প্রেম হয় আরও গভীর। ভাই সোহেল রানাকে নিয়ে পরীমণির বাবা সাদেক বাচ্চুর কাছে বিয়ের প্রস্তাব আনে শাকিব। কিন্তু সেই প্রস্তাবে নারাজ সাদেক বাচ্চু। তাহলে কি হবে শাকিব – পরীর প্রেমের পরিণতি?
এমনই কাহিনী নিয়ে আরো ভালোবাসবো তোমায়। গভীর আক্ষেপের সাথে জানাতে হচ্ছে, ছবির কাহিনী মোটেই মন ভরাতে পারেনি আমার। যারা কাহিনীসংক্ষেপ পড়েছেন, তারাও বুকে হাত রেখে অনেস্ট অপিনিয়ন দিন তো, কাহিনীতে কোন নতুনত্ব কি আপনাদের চোখে পড়েছে? মোবাইলের মাধ্যমে আলাপ, তারপর প্রেম, নায়ক নায়িকার ভালোবাসায় কোন একজনের বাবার বাগড়া, আর শেষে ..……………….., এর কোনটাই কি আপনাদের কাছে খুব একটা অপরিচিত। তারপর আরও একটা বিষয়, কাহিনীতে যে সামান্য পরিমাণ নভেলটি ছিল, সেটুকুও পরিচালক পুরোপুরি উন্মোচিত করে দিয়েছেন আগেই, ট্রেইলারের মাধ্যমে। তাই দুঃখজনক হলেও সত্য, কাহিনী এই ছবির দুর্বলতম দিক।
এবার আসি চিত্রনাট্যে। যে ছবির কাহিনী দুর্বল, তার চিত্রনাট্য খুব ভাল হওয়া হত বিরল বিষয়। এবং তা হয়ও নি। চিত্রনাট্য খুবই ধীরগতির। মূল কাহিনী খুবই ছোট, সেটাকেই নানা এঙ্গেল থেকে বড় করার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। আর তা করতে গিয়ে চিত্রনাট্য যেমন হয়েছে স্লো, তেমনি রিপিটিটিভও। মূল কাহিনী শুরু হয় সেকেন্ড হাফে। তার আগ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ঘটনার অবতারণা খুব কমই ঘটেছে।
তবে সংলাপ বেশ ভাল। খুব স্মরণীয় কোন সংলাপ নেই কিন্তু রোমান্টিক সিনের সংলাপগুলো সুন্দর। গড়পড়তা প্রেমের সংলাপ নয়। তাই শিক্ষিত দর্শকদের ভাল লাগতে পারে। এছাড়া ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবাই যে ভাল না, এ বিষয় সম্পর্কে সোহেল রানার সংলাপটাও ছবির অন্যতম প্রধান একটা দিক। সবমিলিয়ে সংলাপের জন্য অলিক সাহেব প্রশংসার দাবিদার।
পরিচালক প্রশংসা পাবেন তাঁর মূল দায়িত্ব তথা পরিচালনার জন্যেও। সুন্দর, স্মার্ট ডিরেকশন। এইক্ষেত্রে তাঁর ভুলত্রুটি সামান্যই। বরং আগের চেয়ে যে অনেক উন্নতি করেছেন তা স্বীকার করতেই হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তির পরিমিত কিন্তু যথাযথ প্রয়োগ করেছেন তিনি। তাঁর নির্মাণ নিয়ে কোন কথা হবে না। দেশীয় লোকেশনে উপভোগ্য চিত্রায়নে আবারও মুনশিয়ানা দেখালেন তিনি। নায়ক নায়িকা দুজনের থেকেই সম্ভাব্য সেরাটা বের করে আনতে পারার কৃতিত্বও তাঁরই। সবমিলিয়ে পরিচালক হিসেবে অলিক সাহেব সফল। কিন্তু এটাও সত্য যে দুর্বল কাহিনীর কাহিনীকার হওয়ার দায় তিনি এড়াতে পারেন না।
ছবির সবগুলো গানই শ্রুতিমধুর। মনের দুয়ার বাদে বাকি গানগুলোর পিকচারাইজেশনও সুন্দর। মনের দুয়ারের পিকচারাইজেশন খুব যে খারাপ তা নয় তবে এত সুন্দর গান এমন মিডিওকার পিকচারাইজেশন ডিজার্ভ করে না। এছাড়া ছবিতে গানের সংখ্যা দুই একটি কমলেও বোধহয় ভাল হত। তবে পরিচালককে ধন্যবাদ যে প্রতিটি গানই বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যবহার করেছেন। কাহিনীর সাথে সবগুলো গানেরই সামঞ্জস্যতা ছিল।
এবার অভিনয়। শাকিব খান অসাধারণ। অসাধারণ বললেও কম বলা হবে। ইংরেজিতে বলা যায়, He lived the character. হিরোসুলভ শো অফ করার জায়গাগুলো বাদে অন্য সবখানেই তিনি নিজের চরিত্রের সাথে একাত্ম ছিলেন। তাঁর অভিনয় এই ছবির একটা প্রধান সম্পদ। কমেডি, রোমান্টিক, ইমোশনাল, সিরিয়াস সব ধরণের সিনেই তিনি দারুণ। নিজের অভিনয় জীবনের অন্যতম সেরা কাজটা তিনি দেখিয়েছেন এ ছবিতে।
পরীমণিও দারুণ। তাঁর অভিনয় ও ডায়লগ ডেলিভারি সম্পর্কে অন্য কোন ছবিতে ভুল ধরা যেতে পারে, কিন্তু এ ছবিতে তিনি একেবারে নিঁখুত। তাঁকে গোটা ছবিতেই অসাধারণ সুন্দর লেগেছে। কিন্তু তাই বলে তিনি চেহারাসর্বস্ব নায়িকা হয়ে থাকেননি। একঝাঁক মাস্টার অভিনেতাদের পাশেও তাঁর অভিনয়কে বিন্দুমাত্র অনুজ্জ্বল লাগেনি। তিনি প্রমাণ করেছেন, সমসাময়িক নায়িকাদের তুলনায় তিনি কোন অংশে কম না। এই ছবি দিয়ে পরীমনি আরও প্রমাণ করলেন যে শালীন পোশাক পরে ও ক্লিভেজ না দেখিয়েও দর্শকদের মন জয় করা যায়।
পরীর বাবার চরিত্রে সাদেক বাচ্চু ভাল ছিলেন। তাঁর চরিত্রে ভাল মন্দ দুই দিকই ছিল এবং দুটিতেই তিনি সফল। সোহেল রানা খুব কম দৃশ্যে ছিলেন। কিন্তু যে কয় দৃশ্যে ছিলেন, সবগুলোকেই যেন নিজের করে নিয়েছিলেন। চম্পার অভিনয় অতটা মন কাড়ে নাই। তাঁর অভিনয়কে হাফ হার্টেনড এফোর্ট মনে হয়েছে।
সবমিলিয়ে সুন্দর পরিচালনা, সুন্দর নির্মাণ, সুন্দর কাস্টিং ও সুন্দর অভিনয়ের মিশেলে আরো ভালোবাসবো তোমায় চমৎকার একটি ছবি। এ ছবি দেখে একটা নির্দিষ্ট শ্রেণির দর্শক হয়ত কাহিনী নিয়ে হতাশ হবেন তবে ছবির অন্যান্য দিক তাদের মুগ্ধও করবে। শাকিবের সেরা ছবির একটি হয়ত এটা নয়, কিন্তু সেরা ছবি যে শীঘ্রই আসছে তার একটা আভাস কিন্তু ঠিকই পাওয়া গেল!