![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
অতঃপর ভয়ংকর সুন্দর
(জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান ‘ভয়ংকর সুন্দর‘ সিনেমার রিভিউ করেছেন। লেখাটি প্রকাশ হয় তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে। সেখান থেকে বিএমডিবি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।)
গত কদিন ধরে বেশ আক্রমণাত্মক লেখা পড়ছিলাম অনিমেষ আইচের ‘ভয়ংকর সুন্দর’ নিয়ে। লেখাগুলো পড়ে ‘ভয়ংকর সুন্দর’ দেখার তীব্র আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ছবিটি আমি একবারেই দর্শক সিটে বসে দেখেছি এবং দর্শক হয়ে ছবিটি উপভোগ করেছি। দর্শক একই জায়গায় হাসছে, রিয়্যাক্ট করছে, আবার পুরো হল পিনড্রপ সাইলেন্ট হয়ে যাচ্ছে। দর্শক কমিউনিকেট করতে পারছে। কম্প্যাক্ট একটি সিনেমা। অনিমেষের প্রথম সিনেমা ‘জিরো ডিগ্রি’তে আমি কাজ করেছিলাম। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় ‘ভয়ংকর সুন্দর’ ‘জিরো ডিগ্রি’র চেয়েও পরিণত। ‘জিরো ডিগ্রি’ দেখার পর কিছু জায়গা আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছিল কিন্তু এই ছবিটির ক্ষেত্রে তা হয়নি।
অনিমেষ বরাবরই একজন মেধাবী, শক্তিশালী নির্মাতা। সবসময়ই সে শক্তিশালী গল্প বলার সাহস রাখে। এই ছবির মুল নায়ক বা সঞ্চালক ছবিটির গল্প। পানিবিহীন একটি দিন কল্পনা করে দেখুন তো। প্রচলিত বিষয়গুলো এড়িয়ে পানির মতো একটি বিষয়কে উপজীব্য করে ছবি তৈরির সাহস কিন্তু তিনি দেখিয়েছেন। প্রচলিত গল্প বলার ধরণ থেকে আলাদা করে গল্প বলার চেষ্টাও আছে ছবিটিতে। একেকজন নির্মাতার আদর্শ, চিন্তা, গল্প বলার ঢং আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক। এই ছবিতেও আলাদা করে গল্প বলার চেষ্টা আছে। এক্ষেত্রে নির্মাতা সফল। নতুন কোনো কিছুকে বুঝতে না পারার দায় নির্মাতার নয়। দর্শকেরও নতুনকে গ্রহণের প্রস্তুতি থাকতে হবে।
অভিনয়ের সুর, তাল, লয় সব ভালো ছিল। ভাবনা নয়নতারা চরিত্রে কনভিন্সিং। পরমের চরিত্রটা ভীষণ মায়াময় লেগেছে। পরমকে একজন আদর্শ হোটেল বয়ের মতোই লেগেছে। দুজনের কেমিস্ট্রি ভালো লেগেছে। অন্যরাও যে যার জায়গায় ভালো করেছে। লাইট, ক্যামেরা মোটামুটি। তবে টেকনিক্যালি বলতে গেলে কালার কারেকশন কনভিন্সিং নয়। আর ভালো লাগেনি অনলাইন প্রচারণা। পোস্টার-প্রচারণা আরেকটু ভালো হতে পারত। অনিমেষের কাছে থেকে এটুকু আশা করতেই পারি। ছবিটির প্রথমার্ধ নিয়ে কিছু অবজারভেশন আছে কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধ অবশ্যই আকাঙ্খা তৈরি করে।
আমাদের দেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ কতটা কষ্টসাধ্য তা নির্মাতা বা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিমাত্রই জানেন। এখানে জুতা সেলাই থেকে চণ্ডিপাঠ একজন ডিরেক্টরকেই করতে হয়। নানামুখী বাধা পেরিয়ে ছবিটা আলোর মুখ দেখে। বাহির থেকে নিন্দা-আক্রমণাত্মক কথা বলা এখানে যতটা সহজ সিনেমা নির্মাণ করা ততটাই কঠিন একটি প্রক্রিয়া। প্রতি বছর দুর্বল গল্প-অভিনয়-রিমেক গল্পের চিত্রনাট্যে প্রচুর সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু সেসব সিনেমা নিয়ে কাউকে তেমন কিছু বলতে দেখা গেল না। কিন্তু অনিমেষের এই ‘ভয়ংকর সুন্দর’ নিয়ে এমন আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া আমাকে অবাক করেছে। বুঝতে পারিনি সগোত্রীয়দের এই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কারণ কী?
‘ভয়ংকর সুন্দর’-এর প্রডিউসরও অনিমেষ আইচ। একই সাথে অর্থলগ্নি ও পরিচালনা করা একটি দুঃসাহসিক কাজ। অর দ্বিতীয় ছবি বানাতে অনিমেষের তিনবছর লেগে গেল। নানা প্রতিকূলতার মাঝে দাঁড়িয়েও কিন্তু নিজের মতো করে গল্পটা বলতে পেরেছে, যেখানে আমরা অনিমেষ আইচকে খুঁজে পাই। চলচ্চিত্রের এই দুর্দিনে অনিমেষ আইচের এমন পদক্ষেপের জন্য বাহবা পেতে পারে। কিন্তু তা না করে নেগেটিভ প্রতিক্রিয়ার সংস্কৃতি চালু হলো। এটা যদি অব্যাহত থাকে— তাহলে কী প্রডিউসরশিপ দাঁড়াবে? তবে সময়ই সবচেয়ে বড় বিচারক। আমি মনে করি, সময়ের বিচারে ‘ভয়ংকর সুন্দর’ হারিয়ে যাবার সিনেমা নয়।