![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
অভিনয়ে আচ্ছন্ন করা নায়ক আলমগীর
আলমগীরের অভিনয়ে আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম। সিনেমার একটা গান আটকে গেলো মাথায়। ‘মায়েরই কথা, স্নেহ মমতা, আছে গানে গানে, রেখো মনে মনে’। সেই শুরু …
১৯৯০ সাল থেকে শুরু হয় পালিয়ে সিনেমা দেখার জীবন। তার আগে দেখেছি নাসু কাকার সাথে, মজনু ভাইর সাথে। নিজে নিজে একা সিনেমা দেখার শুরু নব্বই সালেই। ঈদের সিনেমা মানেই আমাদের পারিবারিক আনন্দের অংশ। সিনেমা হলে গিয়ে সবাই মিলে একসাথে বসে তা উপভোগ করা। কিন্তু আমার বেলায় ছিল কঠোর শাসন। গোপালপুর থানা শহরে ফুপুর বাসা। সেখানে বেড়াবার নাম করে সিনেমা দেখা যেতো। কিন্তু অন্য সময় কী করব? কী করব ভাবতে গিয়ে আমার সঙ্গী জুটে যায় নবগ্রামের টিটো ও রিপন। উভয়েই আমার চাচাত ভাই।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/04/alamgir_bmdb_image.jpg?resize=1024%2C588&ssl=1)
নব্বই সালের ঈদে কাকলী হলে যে ছবি এসেছিল, সেটার নাম – ‘অর্জন’। শিবলী সাদিক পরিচালিত ‘অর্জন’। আলমগীর, অঞ্জু, রুবেল, কবিতা, শওকত আকবর, রোজী আফসারী ও ড্যানি সিডাক অভিনীত অর্জন। সঙ্গীত আলাউদ্দীন আলী। শিল্পী এন্ড্রু কিশোর, সাবিনা ইয়াসমিন। এই সিনেমা কীভাবে দেখব? টাকা কোথায় পাব? শেষ পর্যন্ত বাড়ির সুপারি গাছে উঠলাম রাতের অন্ধকারে। সেই সুপারি বিক্রি করলাম মোড়ের দোকানে। পরের দিন চলে গেলাম গোপালপুর। যেতে হয়েছিল পায়ে হেঁটে। পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা।
দেখলাম ‘অর্জন’ সিনেমা। নায়ক আলমগীরের অভিনয়ে আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম। সিনেমার একটা গান আটকে গেলো মাথায়। ‘মায়েরই কথা, স্নেহ মমতা, আছে গানে গানে, রেখো মনে মনে’। সেই শুরু। তারপর দেখলাম ‘দোলনা’। সেটাও শিবলী সাদিকের সিনেমা। নেপালের পাহাড় পর্বতের রঙিন দৃশ্য। নায়িকা রোজিনার সাথে আলমগীরের সে কী অভিনয়। একটা গান আমাদের মগজে ঢুকে গেলো। ‘তুমি আমার কত চেনা’। গেয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর ও সাবিনা ইয়াসমিন। এই গান সারাদিন গুনগুন করতে করতেই আব্বার কাছে ধরা খেয়ে গেলাম। কিন্তু সিনেমার নেশা তখন উদ্ভ্রান্ত করে দিয়েছে। একানব্বই সালে যত সিনেমা দেখেছি, তারমধ্যে সবচে বেশি পছন্দের ছবিগুলোর মধ্যে নায়ক আলমগীরের সিনেমাই বেশি। ‘অচেনা’, ‘পিতা মাতা সন্তান’, ‘সান্ত্বনা’। এই ছবিগুলো দেখার সময় সিনেমা হলের মধ্যে কতজনকে যে হু হু করে কাঁদতে দেখেছি, হিসেব নেই। শাবানা আলমগীর মানেই আমাদের কাছে অন্যরকম গল্প। অনন্য অভিনয়। সেসময়ই দেখেছিলাম ‘ন্যায় অন্যায়’। নায়ক জসিম আর আলমগীর।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/04/arjon_alamgir_anju_dildar_bmdb_image.jpg?resize=775%2C549&ssl=1)
‘অর্জন’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে আলমগীর, অঞ্জু ঘোষ ও দিলদার
গোপালপুরের কাকলী আর নন্দনপুরের মানসী। দুই হলে পাল্লা দিয়ে সিনেমা দেখার পাশাপাশি বাইসাইকেল জীবনে যোগ হয় মধুপুরের কল্লোল আর মাধবী হল। মনে পড়ে কল্লোল সিনেমায় গিয়ে দেখে এসেছিলাম ‘অন্ধবিশ্বাস’। সেটার নায়কও আলমগীর। মধুপুরে গিয়েই দেখেছিলাম দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘জজ ব্যারিস্টার’। হুমায়ূন ফরীদির সঙ্গে ছিলেন আলমগীর, শাবানা, বাপ্পারাজ ও লিমা। এখনও সিনেমার প্রতিটা দৃশ্য আর সংলাপ ঠিক মনে আছে। দেখেছিলাম ‘গৃহবধূ’, ‘ননদভাবী’, ‘সমর’ ‘ক্ষতিপূরণ’, ‘নিষ্পাপ’, ‘অপেক্ষা’, ‘অজান্তে’, ‘ভরসা’ ‘নির্মম’।
ততদিনে রুবেল আর জসিমের পাশাপাশি নায়ক মান্না প্রিয় হয়ে উঠেছেন আমাদের কাছে। আলমগীর-রুবেল, আলমগীর-জসিম জুটির পর মান্নাকে পেয়ে গেলাম আমরা কাজী হায়াৎ এর সিনেমা দেশপ্রেমিকে।
আমাদের সিনেমা জীবনে তখন সালমান শাহ্। আমরা তখন উত্তাল তারুণ্যে। সালমান শাহ্কে সাথে নিয়ে আলমগীর পর্দা কাঁপালেন কন্যাদান, স্নেহ, মায়ের অধিকার । এসব সিনেমায় সালমান শাহ্ আর হুমায়ূন ফরিদি ছিলেন আলমগীরের সাথে। সালমান শাহ্র মৃত্যুর পর সবচে আলোচিত সিনেমায় পুরো হল স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল শাবানা, আলমগীরের সেই সিনেমায় ‘সত্যের মৃত্যু নেই’।
তারপর আর আমাদের সেভাবে সিনেমা দেখা হয়নি। আমরা চলে গেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এক জীবনে যে নায়ক অথবা অভিনেতাদের অভিনয় আমাদের হৃদয়ে ছাপ ফেলে গেছে, তাদের মধ্যে আলমগীর অন্যতম। তবে সব সময় আমার প্রিয় অভিনেতা তিনিই।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/04/sotter_mittu_nei_alamgir_shabana_bmdb_image.jpg?resize=762%2C472&ssl=1)
‘সত্যের মৃত্যু নেই’ চলচ্চিত্রে আলমগীর ও শাবানা
আজ তিন এপ্রিল। আমার প্রিয় নায়কের জন্মদিন। অনেক বছর আগে এফডিসির সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছি কাউকে এক নজর দেখার জন্য। একদিন এক পলক তাকে দেখে গ্রামে গিয়ে সে কি বানিয়ে বানিয়ে বাড়তি কথার গপ্প আমাদের।
এখন খুব কাছে থেকে দেখি, তবে কাছে যাই না। ঘোর এখনও লেগে আছে, থাকুক। সবার সাথে ছবি তোলা হয়, তবে কয়েকজন বাদে। যারা আমাদের চিরকালের নায়ক। আমার প্রযোজিত অনুষ্ঠানে এক সময় দেশের কিংবদন্তি অভিনেতা অভিনেত্রীরা আসতেন। আমি তাঁদের সাথে ছবি তুলি নাই। ঘোর লেগে আছে এখনও যাদের অভিনয়ে, তাঁদের মধ্যে শীর্ষে আমার প্রিয় নায়ক আলমগীর।