Select Page

আমাদের গল্পে আমাদের সিনেমা

একটা সিনেমা একটা সমাজের দর্পণ। কোন একটা দেশকে জানার সহজ উপায় হল সেই দেশের সিনেমা দেখা। কারন একটা সিনেমার মাঝেই দেখা যায় সেই দেশের লোকেশন, সংস্কৃতি, ধর্ম, জীবনধারা। আমি ইরানের বিখ্যাত পরিচালক মাজিদ মাজিদির একটা সিনেমা দেখেছিলাম বারান। সেই সিনেমায় দেখা যায় একটি মেয়ে ছেলে সেজে কাজ করে। কারন তার বাবা কর্মক্ষম ছিলনা। তাই বাধ্য মেয়েকে পাঠিয়েছিলেন কাজে। সেই মেয়ে বিল্ডিং  নির্মাণ কাজে যা একটা মেয়ের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যাই হোক এই সিনেমার মাধ্যমে আমরা সেই দেশের সমাজ বাস্তবতাকে জানতে পেরেছি। একই ভাবে যদি আমরা যদি তামিল, তেলেগু, মালায়লাম কিংবা হিন্দি ভাষার ছবির দিকে তাকাই তাহলে খুব ভাল ভাবেই লক্ষ্য করতে পারবো যে একই দেশ হওয়া স্বত্তেও এক একটা ভাষার সিনেমা এক একটা জন গোষ্ঠীকে আমাদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। আবার যদি আমরা চীন,  কোরিয়ান কিংবা ইংরেজি ভাষার হলিউডের সিনেমা দেখি তাহলেও কিন্তু আমরা বিভিন্ন দেশ  ও তাদের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হব।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

যদি আমরা বাংলাদেশের সত্তর কিংবা আশির দশকের দিকের সিনেমার দিকে তাকাই তাহলে কিন্তু আমরা বাংলাদেশকে দেখতে পাব , দেখতে পাব বাংলাদেশের সময়সাময়িক বিষয়কে। কিন্তু নব্বই দশক থেকে বাংলা সিনেমায় ছন্দপতন ঘটেছে। তখন বাংলাদেশের পরিচালকরা কপি সিনেমায় আগ্রহী বেশী হল আর আমরা হারাতে লাগলাম আমাদের বাংলাদেশকে।

বর্তমানের প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে আমরা দেখি যে বাংলাদেশের বেশিরভাগ সিনেমা হয়তো তামিল, তেলেগু, হলিউড কিংবা কোরিয়ান সিনেমার কপি। মৌলিক গল্পের ছবি নাই বললেই চললে। আবার কিছু কিছু মৌলিক গল্পের সিনেমায় থিম কপি কিংবা চিত্রনাট্যে বেশ কিছু বিদেশী ছবির ছাপ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে কেন মৌলিক গল্পের  সিনেমা হচ্ছেনা ? 

এক. ঝুকিমুক্ত থাকা

বর্তমানে আমাদের দেশীয় প্রযোজকরা ঝুকি মুক্ত থাকতে চান। তাই তারা একটা হিট তামিল কিংবা তেলেগু সিনেমা দেখে নকল করে একটা সিনেমা বানান যাতে ব্যবসায়ীক সফলতা নিশ্চিত হয়। কিন্তু সমস্যা হল এই ছবি গুলো বস্তাপচা তামিল, তেলেগু থেকে কপি করা হয়। ভাল ও উন্নত মানের তামিল, তেলেগু ছবি  তামিল, তেলেগু সিনেমা অফিসিয়ালি রিমেক করে দেশীয় প্রেক্ষাপটে  নির্মাণ করলেও একটা কথা ছিল। ছবিগুলো তারাই দেখে যারা দক্ষিন ভারতীয় ছবি  তেমন একটা দেখেনা।

দুই. শিল্পবোধের অভাব

এখনকার প্রযোজক, পরিচালকদের মাঝে শিল্পবোধের প্রচুর অভাব আছে। অনেক পরিচালকের ইচ্ছা থাকলেও প্রয়োজকের অনিহার কারনে তারা শিল্পের দিকে ঝুঁকতে পারেন না।

তিন. রুচিবোধের অভাব

এখন রুচিশীল প্রযোজক নাই বললেই চলে। অখাদ্য বানানোর জন্য আমাদের এখনকার প্রযোজকরা খুবই দক্ষ। বিশেষ করে ছবিতে একটা অশ্লীল, অখাদ্য আইটেম গান দিতেই হবে যেন দিতেই হবে  সেটা গল্পে ডিমান্ড করুক আর না করুক।  না হলে ব্যবসায় হবে যে!

চার. শিক্ষার অভাব

বাংলাদেশে এখন অশিক্ষিত প্রযোজকরা রাজত্ব করছে। এমনও প্রযোজক আছে যারা আগে সিনেমা হলের চেকার ছিল কিংবা বুকিং এজেন্ট ছিল ।কিংবা একাডেমিক শিক্ষা থাকলেও সিনেমা বিষয়ক কোন শিক্ষা নেই। এমনকি তারা সিনেমায় নামার আগে যথেষ্ট মার্কেট রিসার্চ করেনা। পরিচালকরাও প্রযোজকদের মত অশিক্ষিত না হলে তারা দর্শকদের অশিক্ষিত মনে করে সিনেমা বানায়। এমনও অনেক পরিচালক আছে যারা এইচ এস সি পাস না। সম্প্রতি একটি সিনেমার  একজন সহকারী পরিচালককে দেখা গেছে যার কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই এমনকি সিনেমা বিষয়ক কোন জ্ঞান নেই। শুধু মাত্র পরিচালকের সাথে সুসম্পর্ক থাকার কারনে সে সহকারী পরিচালক হয়েছে। সে যখন পরিচালক হবে তখন তার কাছ থেকে আমরা কি আশা করতে পারি? এমনকি বর্তমানের এমন অনেক পরিচালক আছে যারা পরিচালকদের সহকারী থেকেছেন সুপরিচিতি থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতায় না।

পাঁচ. শিক্ষিত ও রুচিশীল দর্শকের অভাব

বাংলাদেশের বেশিরভাগ রুচিশীল ও শিক্ষিত দর্শক সিনেমা হলমুখী নয়। যার কারনে একটি ভাল গল্পের সিনেমাও ফ্লপ হয়। দর্শকদের কাছ থেকে এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে যে তারা সিনেমার গল্প বুঝতে পারছে না। বাংলাদেশের দর্শকের কাছে এখনও সাইকো থ্রিলার বিষয়টি পরিস্কার নয়।সায়েন্স ফিকশন মুভির কথা নাই বললাম। আর ছবিটি ভাল লাগা বা মন্দ লাগা তো পরের বিষয়।

ছয়. অনুকরণ প্রীতি

বিদেশী জিনিসকে আদর্শ মেনে কিছু করাটাই যেন আমাদের বদ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অথচ যদি সত্তর কিংবা আশির দশকের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো যে তাদের চিন্তাধারা কত উন্নত ছিল। তাদের অনুকরণ করতে বিদেশীরা। কিন্তু এখন আমরা মনে করছি যে ইন্ডিয়া এইভাবে করছে তার মানে এটাও আমাদের করতে হবে। যদিও তাদের থেকে আমাদের এখন শিক্ষার অনেক কিছুই আছে কিন্তু যখন গল্পের কথা চিন্তা করবো তখন অবশ্যই দেশীয় ধাচের কথা চিন্তা করতে হবে।

সাত. ভাল লেখকের দুষ্প্রাপ্যতা

আমাদের সিনেমা শিল্পে ভাল লেখক তো দুরের কথা লেখকই নেই বললে চলে। মাত্র দুইজন অনুবাদক আছেন। একজন আবদুল্লাহ জহির বাবু ও আরেকজন কাশেম আলি দুলাল। যাদের কাছে তামিল, তেলেগু সিনেমার অনুবাদ করে চিত্রনাট্য তৈরি করা আর নির্লজ্জের মত কাহিনীকার হিসেবে নিজেদের নাম দেয়া। যদিও শুনেছি বাবু সাহেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞাণে স্নাতক করেছেন। অনেকের ধারনা উনি পরিবার চালাতে ও প্রযোজকের ইচ্ছায় এমনটা করছেন।

আট. সুপারস্টারদের আগ্রহের ঘাটতি

আমাদের  দেশের বর্তমানের একমাত্র সুপারস্টার শাকিব খানের মৌলিক গল্পে আগ্রহের ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। দেখা গেছে উনার মৌলিক গল্পের সিনেমা  সত্তা দুই বছর ধরে এখনো শুটিং শেষ করতে পারেনি। এমনকি এইতো প্রেম ছবিটি প্রায় পাঁচ বছর সময় লেগেছে মুক্তি কাজ শেষ হয়ে মুক্তি পেতে। অথচ শিকারি ও বসগিরি উনি ঈদ উপলক্ষে মুক্তি দেয়ার জন্য টানা কাজ করে দুই মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে দিয়েছেন।

নয়. পেশাদার প্রযোজকের অভাব

এখন যারা সিনেমা প্রযোজনায় আছেন তাদের বেশির ভাগ প্রযোজক আসলে পেশাদার প্রযোজক নয়, বেশিরভাগ বিনিয়োগকারি। বেশিরভাগ প্রযোজক টাকা  খরচ করে শুধু পরিচালকের হাতে ছেড়ে দিচ্ছেন। প্রযোজনা সংক্রান্ত তাদের বিশেষ কোন জ্ঞান নেই। তাই গল্পে তাদের মনোযোগ নেই। যদিও জাজ মাল্টিমিডিয়া ,হার্টবিট প্রডাকশন ভালো প্রযোজনা সংস্থাও মৌলিক গল্পের পিছনে টাকা খরচ করেন না। অনেকে শুধু শখের বসে প্রযোজক হচ্ছেন নায়িকাদের সাথে মেলামেশা করার জন্য কিংবা নিজের পরিচিত বাড়ানোর জন্য।

দশ. স্বল্প সময়ে সিনেমা নির্মাণ

একটা ছবি কেন ঈদেই মুক্তি দিতে হবে ? কেন পহেলা  বৈশাখেই মুক্তি দিতে হবে ? কেন ভালবাসা দিবসেই মুক্তি দিতে হবে ? কেন আমরা তাড়াহুড়া করে ছবি নির্মান করছি ? তাড়াহুড়া করে ছবি নির্মান করতে গিয়ে মৌলিক গল্প নিয়ে চিন্তা করতে পাড়ছেন না তারা।

এগারো. সেন্সর বোর্ডের নীতিমালায় সমস্যা

বাংলাদেশে পুলিশকে খারাপ দেখিয়ে কোন সিনেমা নির্মাণ করা যাবে না। ক্রিকেট নিয়ে সিনেমা নির্মান করলে বিসিবির লোগো ব্যবহার করা যাবে না। ব্যাট দিয়ে মারামারি দেখানো যাবে না (যদিও ব্যাট দিয়ে মারামারি শোভা পায় না তবুও পরিস্থিতি অনেক কিছু করতে বাধ্য করে সেটাকে যুক্তি সঙ্গত ভাবে দেখালেই হয়) এরকম নানাবিধ সমস্যা থাকার কারনেও অনেকে মৌলিক গল্প নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করতে সাহস পাচ্ছেনা।

বার. গল্প নিয়ে গবেষণা না করা

একটা ভাল গল্প কিভাবে তৈরি করা যেতে পারে, কোথা থেকে গল্প নেয়া যেতে পারে কিংবা কোন প্রেক্ষাপটে গল্প বানানো যেতে পারে সেটা নিয়ে গবেষণা না করে সবাই তামিল আর তেলেগুর বস্তাপচা ছবিকেই গল্পের উৎস মনে করছে।

তের. স্বল্প বাজেট

অনেক গল্পই অনেক বাজেট ডিমান্ড করে কিন্তু তাই বলে স্বল্প বাজেটে সিনেমা বানানো যাবেনা এটা একটা অজুহাত মাত্র। মুলত পরিচালকের মেধার ঘাটতিই এজন্য দায়ী।

চৌদ্দ. যুগের সাথে তাল মিলাতে না পারা

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কথা যদি চিন্তা করি তাহলে দেখি সেখানের সিনিয়র ও অভিজ্ঞ পরিচালকরা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সিনেমা বানাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের দেশের গুণী পরিচালকরা আগের দিনেই পড়ে আছেন। তাদের চিন্তাধারা আগের মতই রয়ে গেছে। শুনেছি পরিচালক জাকির হোসেন রাজুর ইমেইল আইডি নেই, এমনকি উনি নিজে ফেসবুক ব্যবহার করতে পারেন না। অথচ সময়কে ধারন করতে হলে ফেসবুক, টুইটার, মেইল এগুলো বুঝতে হবে। এখনকার তরুণরা কি পছন্দ করতে সেটা ধরতে হবে। তাহলেই তারা বুঝবেন এখনকার গল্প কেমন হওয়া উচিত।

পনেরো. গল্প মৌলিক কিন্তু চিত্রনাট্য ও সংলাপ দুর্বল

বাংলাদেশের পরিচালকদের একটা কমন অভিযোগ মৌলিক গল্পের ছবি চলেনা, দর্শক নকল গল্পের ছবি বেশি পছন্দ করে। কিন্তু মুল সমস্যা হল মৌলিক গল্প হলেও সংলাপ ও চিত্রনাট্য দুর্বল, গতিহীন দর্শক কেন দেখবে?

বাংলাদেশের সিনেমার দর্শকেরা কেমন গল্প চান ?

ঢাকা শহবের মাল্টিপ্লেক্স কিংবা সিঙ্গেল স্ক্রিন  প্রায় সব হলে সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে। সিনেমা দেখার সময় পতিক্রিয়া ও  দর্শকদের কাছে জিজ্ঞাসা করে কিছু ফ্যাক্ট খুজে পেয়েছি এবং তাতে শ্রেণিভেদে ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে। যদিও ব্যক্তিগতভাবে মানুষের শ্রেনিভেদ করতে পছন্দ করিনা তবুও শ্রেণিভেদে মানুষের রুচির ভিন্নতা পাওয়ায় আমি শ্রেণিভেদ করতে বাধ্য হলাম।

নিন্মবিত্তঃ এই শ্রেণীর দর্শকদের কিছু কমন চাহিদা রয়েছে যেমন-

১. গল্পে একশন থাকতেই হবে না হলে ছবিকে তারা নাটক মনে করবে।

২. গল্পে প্রেম থাকতেই হবে। মানে নায়ক নায়িকা থাকতেই হবে।

৩. গল্পে গান পাঁচটাই থাকতে হবে না হলে ছবি ভাল না ।গান গুলোর মধ্যে আবার রোমান্টিক, বিরহ , কমেডি , ডান্স নাম্বার থাকলে ভাল হয় ।আইটেম গান থাকলে আরও ভাল।

৪. গল্পে নায়ককে মারা যাবে না তাহলে ছবি ভুয়া।

৫. গল্পে কমেডি থাকতেই হবে না হলে ছবিতে মজা নাই আর দেখুম না।

৬. গল্প সহজ সরল হতে হবে না হলে তারা ছবি বুঝবে না।

সত্যি বলতে কি বাংলাদেশে শতকরা ৮০ ভাগ দর্শক এখন এই শ্রেনীর ।তাদের মন যোগাতেই পরিচালকরা সিনেমার গল্প নির্বাচন করছেন।কারন তারাই ইন্ড্রাস্ট্রি বাচিয়ে রেখেছে।

মধ্যবিত্তঃ এই শ্রেণীর দর্শকদের কিছু কমন চাহিদা রয়েছে যেমন-

১. গল্প মৌলিক হতে হবে।

২. চিত্রনাট্য ও সংলাপ রুচিশীল ও আধুনিক হতে হবে।

৩. নতুন নতুন কনসেপ্ট নিয়ে গল্প বানাতে হবে।

৪. দেশীয় প্রেক্ষাপট থাকাটা জরুরী।

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দর্শক শতকরা ১৯ ভাগ। এই শ্রেনীর বেশির ভাগ মানুষ হল বিমুখ ভাল গল্পের অভাবে। এই শ্রেনীর মানুষ বাংলা সিনেমা দেখলেও কারো সাথে আলোচনা করতে পারেনা ক্ষেত উপাধি পাওয়ার ভয়ে। তাদের বন্ধু মহলে , অফিসে ,ভার্সিটিতে কোথাও বাংলা সিনেমা নিয়ে আলোচনা করতে পারেনা। বাংলা সিনেমা তাদের কাছে হাসির পাত্র।

উচ্চবিত্তঃ এই শ্রেণীর দর্শকরা কালে ভদ্রে সিনেমা হলে এসে থাকে। তাদের বেশিরভাগের নিজস্ব হোম থিয়েটার থাকে। তাদের একটাই চাহিদা থাকে বাংলাদেশের সিনেমা হলিউড মানের মত হবে। এই শ্রেনীর দর্শক মাত্র ১ ভাগ।

বাংলাদেশের সিনেমার গল্প কেমন হওয়া উচিত ? 

বাংলাদেশি সিনেমার গল্প কেমন হবে তা উপরের আলোচনা থেকে কিছুটা আন্দাজ করা গেলেও এখানে কিছুটা বিস্তারিত আলোচনা করছি।

গল্পের উপাদানঃ সব শ্রেনীর কথা চিন্তা করে সিনেমা বানালে আমাদের গল্পে কমেডি, একশন(কম করে হলেও দুই একটা ), গান (পাঁচটা না হলেও চলবে) ,নায়ক ,নায়িকা অবশ্যই থাকতে হবে।

গল্পের স্থানঃ গল্পের স্থান অবশ্যই বাংলাদেশ হতে হবে। তবে গল্পের প্রয়োজনে দেশের বাইরে যাওয়া যেতে পারে। তবে শুধু গানের জন্য দেশের বাইরে যাওয়াকে আমি সাপোর্ট করিনা। গত ঈদে মুক্তি প্রাপ্ত যৌথ প্রজ্জোজনার সিনেমা রক্ত কোন গল্পের স্থান কোনটি তা বোঝা যায়না। এটা থেকে বেরিয়ে আসেতে হবে।

গল্পের বিষয়বস্তুঃ গল্পের বিষয় বস্তু বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সমসাময়িক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ঘটনার উপর ভিত্তি করে হতে পারে, কিংবা হতে পারে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে। হতে পারে ভাষা আন্দোলন কিংবা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিংবা হতে পারে নিটোল প্রেমের গল্প নিয়ে। তবে প্রেমের গল্পের ক্ষেত্রে ধনি গরিবের প্রেম বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়া উচিত। তবে সব কিছুতেই বাংলার মাটির গন্ধ থাকা চাই। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে তুলে ধরা চাই। যাতে ভিনদেশি কেউ দেখেই বুঝতে পারে এটা বাংলাদেশের সিনেমা, যেন তারা বাংলা ছবি দেখে বাংলাদেশ ভ্রমণের আগ্রহ দেখায়। বাংলাদেশিরা যেন সিনেমায় নিজেদের খুঁজে পায়। নিজেদের দুঃখ, কষ্ট, বেদনা যেন সিনেমায় দেখতে পায়। বাংলাদেশ কিভাবে এগিয়ে যেতে পারে সেটা যেন সিনেমায় চলে আসে। তাহলেই দেখবেন আমাদের ছবি গুলো সর্বজনীন হবে।

গল্পের সময়ঃ অতীত কিংবা ভবিষৎ ঘটনা নিয়ে সিনেমা হতে পারে পারে তবে সিনেমাতে বর্তমানকেই বেশী করতে আনতে হবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সিনেমার গল্প বানাতে হবে। এখনাকার দর্শকরা কিভাবে গল্পকে দেখতে পছন্দ করে সেটাও মাথায় রাখতে হবে।

ভাল গল্পের ও চিত্রনাট্যের  জন্য লেখক কিভাবে পাওয়া যাবে ?

পরিচালক, প্রযোজক, নায়ক-নায়িকাদের কমন অভিযোগ যে ভাল গল্প পাচ্ছিনা ভাল লেখকের অভাবে। তবে আমি এখানে কিছু সমাধান দিতে পারি যদি কাজে লাগাতে পারেন তবে মন্দ হবে না।

এক. জনপ্রিয় লেখকদের দিয়ে গল্প লেখানো

বাংলাদেশের ইমদাদুল হক মিলন, জাফর ইকবাল, কাজী আনোয়ার হোসেন দিয়ে গল্প লেখানো যেতে পারে কিংবা তাদের লেখা কোন উপন্যাস থেকে সেটাকে সিনেমা উপযোগী করে চিত্রনাট্য তৈরি করা যেতে পারে।

দুই. দেশি বিদেশী সাহিত্য থেকে

কাজী নজরুল  ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শীর্ষেন্দু মুখার্জি, শরত চন্দ্র, সমরেশ মজুমদার সহ দেশি বিদেশী বিভিন্ন লেখকের সাহিত্য থেকে গল্প ও চিত্রনাট্য তৈরি করা যেতে পারে।

তিন. বর্তমান লেখকদের মৌলিক গল্প লিখতে উৎসাহ দিয়ে 

বর্তমান লেখকদের দিয়েও মৌলিক গল্প লেখানো যেতে পারে সেক্ষেত্রে দুই  সপ্তাহ কিংবা দুই মাস সময় না দিয়ে কমপক্ষে ৬ মাস সময় দিন একটা ভালো গল্প ও চিত্রনাট্যের পিছনে। আর হ্যাঁ পারিশ্রমিকটাও বাড়িয়ে দিন না হলে ভাল গল্প পাবেন না।

চার. লেখক অন্বেষণ

নায়ক ,নায়িকা অন্বেষণ না করে লেখক অন্বেষণ করুন । ফেসবুকে অনেকেই দেখি ভাল গল্প লিখে তাদেরকে সুযোগ দিন । গল্প লেখার প্রতিযোগিতা করুন । সারা বাংলাদেশ থেকে এই প্রতিযোগিতা করুন দেখবেন অনেক ভাল লেখক বের হয়ে আসছে ।

পাঁচ. নাট্যকারদের সুযোগ দিন

নাটকের অনেকেই ভাল গল্প লিখে তাদের মধ্যে কেউ কেউ যেমন মাসুম রেজা সিনেমার জন্যও লিখেছেন। অনেকেই সিনেমার জন্য লিখতে আগ্রহী হবে তাদেরকে সুযোগ দিন।

পাঁচ. সমসাময়িক রাজনৈতিক ,অর্থনৈতিক ,সামাজিক , প্রাকিতিক ঘটনার দিকে লক্ষ্য রাখা 

সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনা,  অর্থনৈতিক বিপর্যয়, সামাজিক অবক্ষয় কিংবা  প্রাকিতিক দুর্যোগ গুলোকে বিশ্লেষণ করুন। দেখুন সিনেমায় এটাকে আনা যায় কিনা।

ছয়. ট্রেন্ড ফলো করা

বর্তমানের বেশিরভাগ মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটাচ্ছে বেশী। তাদের এক্টিভিটিজ গুলো বিশ্লেষণ করুন, ফেসবুক, টুইটারে তাদের  ট্রেন্ড ফলো করুন। এখান থেকেও বেরিয়ে আসতে পারে কোন অসাধারণ গল্প!

সাত. কল্পনা করুন

মানুষের কল্পনার দুনিয়াটা অনেক বড়। সেখানে মানুষ অনেক কিছুই করতে পারে । সেই কল্পনার জগতকে বাস্তবে নিয়ে আসুন ,মানে সিনেমার গল্পে। আমি আমার কল্পনায় সাতটি সিনেমার গল্প লিখেছি যার কিছু দক্ষিন ভারতের সিনেমায় ইমপ্লিমেন্ট হয়েছে। হয়তো তাদের সাথে আমার কল্পনা মিলে গেছে।

আজ এ পর্যন্তই। আগামীতে নতুন কোন বিষয় নিয়ে হাজির হব। উপরের লেখায় কেউ অপমানিত হলে নিজ গুনে আমাকে ক্ষমা করবেন।

 

 

 


মন্তব্য করুন