Select Page

আলোচিত ধর্ষণ কাহিনীতে সিনেমার ঘোষণার পর মামলার হুমকি

আলোচিত ধর্ষণ কাহিনীতে সিনেমার ঘোষণার পর মামলার হুমকি

২০০১ সালের ৮ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার দেলয়া গ্রামের অনিল কুমার শীলের বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। হামলাকারীরা অনিল কুমারের ছোট মেয়ে পূর্ণিমাকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে। সেসময় দশম শ্রেণিতে পড়তেন তিনি। পাশবিক অত্যাচারের পর প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন পূর্ণিমা।

২০১১ সালের ৪ মে এই ধর্ষণের ঘটনায় ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করে আদালত।

এই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হতে যাচ্ছে। চলচ্চিত্রের নাম বুবুজান। এই ছবিতে চুক্তি বদ্ধ হলেন মিসওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের রানার্স আপ নিশাত নাওয়ার সালওয়া। তার বিপরীতে অভিনয় করবেন শান্ত খান। আর পূর্ণিমা রাণী শীলের চরিত্রে কে অভিনয় করছেন তা নিশ্চিত নয়। ছবিটি নির্মাণ করবেন শামীম আহমেদ রনী।

নিশাত নাওয়ার সালওয়া এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি ছবির গল্প শুনেছি। আমার বিপরীতে রয়েছে শান্ত খান। ওর সাথে কথা বলেই মূলত ছবিটিতে কাজ করার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ওর বুবুজানকে ঘিরেই এই চলচ্চিত্রের কাহিনি। এখানে আমার চরিত্রটি সত্য ঘটনাকে মাঝখানে রেখে আবর্তিত হবে।’

ছবিতে আরও আছেন মাহিয়া মাহি। ‘বুবুজান’ প্রযোজনা করছে শাপলা মিডিয়া।

২০১৮ সালে তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন পূর্ণিমা রাণী শীলকে। তবে পরে তারানা হালিম মন্ত্রণালয় হারানোর পর চাকরিটিও হারান পূর্ণিমা।

তবে এ ব্যাপারে ভিন্ন বক্তব্য পূর্ণিমার। তিনি জানান, ছবিটি নিয়ে কিছু জানেন না। মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

পূর্ণিমা রাণী শীল সারাবাংলাকে জানান, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরটি দেখেছেন তিনি এবং হঠাৎ এ খবরটি দেখে বেশ অবাকই হয়েছেন। কারণ তার প্রতি ঘটে যাওয়া যৌন সহিংসতার ঘটনাকে উপজীব্য করে তৈরির ঘোষণা দেওয়া এই চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি তাকে।

তিনি বলেন, “শুধু মিডিয়ায় খবরটি দেখেছি। প্রথমে ভেবেছিলাম ‘বাঁশের কেল্লা’ জাতীয় কারো কাজ। পরে শুনি সত্যি সত্যি আমাকে নিয়ে ছবি হচ্ছে। কিন্তু এই বিষয়ে আমার কাছ থেকে কেউ লিখিত বা মৌখিক কোন অনুমতি নেয়নি। এমনকি কেউ যোগাযোগও করেনি। আমার মনে হয়েছে এটা অনৈতিক। এভাবে তারা আমার অনুমতি ব্যতিরেকে আমার কোনো ঘটনা নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরির ঘোষণা দিতে পারেন না। তাই আমি বিষয়টি সমাধানে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

পূর্ণিমা  বলেন, ‘এটা যদি সরকারি কোন ছবি হতো তাহলে ভিন্ন কথা। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মা। উনি আমার ক্ষতির জন্য কিছু করবেন না, এ বিশ্বাস আমার রয়েছে।’

‘বুবুজান’ ছবিটি প্রযোজনা করছে শাপলা মিডিয়া। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সেলিম খানকে ছবিটির ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার ছবির পরিচালক কথা বলবেন। আমি কিছুই বলতে পারবো না।’

এ বিষয়ে ‘বুবুজান’-এর পরিচালক শামীম আহমেদ রনী বলেন, “প্রথমতও এটা বলতে চাই পূর্ণিমা রানী শীলের জীবনে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনা থেকে ‘বুবুজান’ নির্মিত হচ্ছে না। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা গল্পে নির্মিত হচ্ছে। এখানে কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।”

এ পর্যায়ে সারাবাংলা থেকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় পূর্ণিমা শীলের মর্মান্তিক ঘটনা অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণের ঘোষণার কথা। তখন নির্মাতা রনী বলেন, ‘হ্যাঁ এটা সত্য দেড় বছর আগে আমরা যখন ছবিটি নির্মাণের প্রথম ঘোষণা দেই, তখন এ ধরনের চিন্তা ছিল। পরবর্তীতে আমরা সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসি। এখন এ নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কোন কারণ নেই।’

‘আমরা পূর্ণিমা আপার সঙ্গে কথা বলে ওনার ভুল ভাঙ্গাবো। আশা করি উনি ব্যাপারটা বুঝবেন’— বলেন রনী।

তিনি জানান, বুবুজান ছবিতে ‘ধর্ষণ’ সম্পর্কিত কিছু ঘটনা রয়েছে। তবে সেটা কোনোভাবেই পূর্ণিমা রাণী শীলের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।


মন্তব্য করুন