Select Page

ঈদুল আজহা ২০২০: উল্লেখযোগ্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র (লিংকসহ)

ঈদুল আজহা ২০২০: উল্লেখযোগ্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র (লিংকসহ)

প্রতি ঈদে আমাদের বিনোদনের অন্যতম আকর্ষণ থাকে টিভি নাটক। চ্যানেল ও নির্মাতাগণও সেরা কাজগুলো জমিয়ে রাখেন ইদের জন্য। করোনার কারণে রোজার ঈদে সেরকম নতুন কাজ না আসলেও এই ঈদে বলার মত বেশ কয়েকটি কাজ এসেছে। যদিও আলোচিত নির্মাতা তারকাদের কাজের সংখ্যা অন্যবারের তুলনায় কম ছিল। সংখ্যায় কম হলেও মান খুব বেশি বেড়েছে সেটা বলা যাবে না।

সব মিলিয়ে কেমন গেল এবারের ঈদের নাটক? এক্ষেত্রে ছোটবেলার একটি গল্প মনে পড়লো। এক রাজা তার প্রজাদের বললেন দুধ দিয়ে পুকুর ভর্তি করবেন। তাই তিনি সবাইকে বললেন পাত্রে করে দুধ নিয়ে আসতে যেন পুকুর ভর্তি করা যায়। তো একজন ভাবলো সবাই তো দুধ দিবে আমি পানি দেই। তো পরদিন দেখা গেল সেই পুকুর পানিতে ভর্তি। কারণ সবাই ঐ ব্যাক্তির মত ভেবেছিল বলে সবাই পানিই দিয়েছে।

ঈদে শত শত কাজ নির্মিত হয়। স্বাভাবিক সেখানেও সব ধরনের কাজের উপস্থিতি দেখতেই পাওয়া যাবে। কিন্তু এবার ঈদ শেষে দেখা গেল আলোচিত কাজগুলোর প্রায় সবগুলোই সিরিয়াস গল্প। হুমায়ূন আহমেদ, সালাউদ্দিন লাভলু কিংবা ছবিয়ালের নির্মিত উপভোগ্য কমেডি নির্ভর নাটকগুলোর মানের কাজ একেবারে পাওয়া যায়নি। সম্ভবত করোনা কেন্দ্রিক গল্প নির্ভর নাটক বেশি হওয়াতে এমনটি হয়েছে।

করোনার সময়কার গল্পে বেশ কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। করোনাতে আমাদের সংবাদ পত্র কিংবা সামাজিক মাধ্যম গুলোতে চোখ রাখা হয়েছে বেশি। স্বাভাবিকভাবেই আলোচিত হৃদয় বিদারক গল্পগুলো সবারই জানা। চেনা গল্পকে উপভোগ্য করতে দরকার ছিল ভালো চিত্রনাট্য। এ জায়গায় অনেক নির্মাতা ব্যর্থ হয়েছেন। এই ব্যর্থতার মাঝেও ভালো কিছু কাজ ছিল। সেগুলোর কয়েকটি নিয়ে থাকছে আজকের পর্বে!

পতঙ্গশিকারী ফুল: আমাদের ‘সমাজ’ মেনে চলতে হয়। সে সমাজ এক অদ্ভুত জিনিস। বিপদে কারও পাশে থাকতে না পারলেও মানুষকে বিপদে ফেলতে সিদ্ধ হস্ত, কারণ সমাজ তো নিয়ন্ত্রণ করে সুযোগসন্ধানীরা। করোনায় আমরা খবরে অনেক অমানবিকতার কথা শুনেছি। নিজেদের কুমতলবের জন্য অনেকে মহামারীকে ব্যাবহার করেছে। তেমনই একটি গল্প নিয়ে আমাদের সবচাইতে প্রতিভাবান নির্মাতাদের একজন নুরুল আলম আতিক বানালেন ‘পতঙ্গশিকারী ফুল’! আতিক করোনার মত মহামারীর সাথে আমাদের সমাজের আরেক মহামারীর খুব সুন্দর মেলবন্ধন করেছেন। শক্তিশালী গল্প, সৃজনশীল নির্মাণ ও দুর্দান্ত অভিনয় মিলিয়ে ঈদের অন্যতম সেরা কাজ।

দ্য লাস্ট অর্ডার: একজন মানুষের প্রফেশন শুধুমাত্র তার অন্ন যোগায় এমন না। তার ভালবাসা ও প্যাশনেরও অংশ। এক শেফ কাজ হারিয়েও সেই প্যাশনের কারণে আরও একবার অর্ডার নিতে চায়, আরও একবার সার্ভ করতে চায়। সেটা তার পরিবারের সদস্যদের। খুব সহজ সাধারণ গল্প কিন্তু দুর্দান্ত উপস্থাপনা আপনাকে থ্রিলারের ফিল দিবে। শেষ পর্যন্ত ভাবাবে কি হতে যাচ্ছে। দৈর্ঘে ছোট হলেও মনকে বিষন্ন করে দেয়। শাফায়াত মনসুর রানার সুন্দর চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় বেশ কয়েকজন গুণী অভিনয় শিল্পীর অভিনয়ে দ্যা লাস্ট অর্ডার বাধিয়ে রাখার মত একটি কাজ।

 

অযান্ত্রিক: করোনায় স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুরু করেছে অনলাইন ক্লাস। এই টার্মের সাথে বেশিরভাগ শিক্ষক পরিচিত নন। সেজন্য তাদের প্রয়োজনীয় ট্রেনিংও ছিল না। সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বয়স্কদের। শিক্ষকতায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা শ্রম সবকিছু ফিকে হয়ে যায় প্রযুক্তির সাথে তাল মেলাতে না পারার কারণে৷ সমসাময়িক গল্প নিয়ে নির্মাণ করতে আশফাক নিপুণ বরাবরই সিদ্ধহস্ত। তিনি করোনা নিয়ে নির্মাণের জন্য বেশ ভাল একটি গল্প নির্বাচন করেছেন। কেন্দ্রীয় চরিত্রে সোলাইমান খোকার সুন্দর অভিনয় কাজটিকে সমৃদ্ধ করেছে।

অক্সিজেন: রায়হান রাফী এখন বড় পর্দার মানুষ। স্বল্পদৈর্ঘ্যর জন্য তিনি বেছে নিলেন বড় পর্দার জনপ্রিয় নায়িকা মাহিকে। মাহিও সম্ভবত তার সেরাটা জমিয়ে রেখেছিলেন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের জন্য। বাবাকে নিয়ে মেয়ের খুনসুটিময় সুখের সংসার। সুন্দর এ জীবনে অভিশাপ হিসেবে নেমে এলো করোনা। করোনায় বাবাকে হাসপাতালে ভর্তির সংগ্রাম ও সমাজের কিছু সুযোগসন্ধানীদের নিয়ে গল্প এগিয়েছে। দৈর্ঘ্যে স্বল্প হলেও যত্নের সাথে করা কাজটি দেখে তৃপ্ত হওয়া গেছে।

মানুষগুলো অন্যরকম: আমাদের সমাজের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মানুষ বৃদ্ধরা। করোনা তাদের আরও অনেক একা করে দিয়েছে। তেমনি এক বৃদ্ধ পিতা ও তার একমাত্র ডাক্তার মেয়ের করোনা সংগ্রামের গল্প ‘মানুষগুলো অন্যরকম’! একেবারে বাস্তবিক কাহিনীতে খুব গুছানো কাজ। শরাফ আহমেদ জীবনের পরিচালনায় প্রতিথযশা অভিনেতা মামুনুর রশীদ ছিলেন অনবদ্য।

ছায়া: প্রতিটি মানুষের মধ্যে দুটি আত্মা বাস করে। একটি ভালো আত্মা একটি খারাপ। কোন খারাপ কাজ করতে গেলে অবচেতন মনে নিজের তাদের দ্বন্ধ তৈরি হয়। তেমনই দ্বন্ধকে করোনার সাথে অদ্ভুতভাবে মিলিয়েছেন দীপংকর দীপন। আজাদ আবুল কালামের পরকিয়া প্রেমের জন্য নিজের স্ত্রীর প্রতি অহেতুক অবহেলা ও তাকে কেন্দ্র করে সংঘাতের সৃষ্টি হয়। তখন তিনি এক অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার সম্মুখীন হন। সেটা কি স্বপ্নে নাকি বাস্তবে? সে ঘটনা কি পারবে তার মনের অন্যায়গুলো দূর করতে? জানতে হলে দেখতে হবে ‘ছায়া’! এমন আগ্রহ জাগানিয়া গল্পে অভিনয় করেছেন আশীষ খন্দকার ও আজাদ আবুল কালামের মত শক্তিশালী অভিনেতা। চিত্রনাট্য নিয়ে আরেকটু কাজ করলে কন্টেন্টটি আরও অনেক উপভোগ্য হতে পারত।

দায়িত্ব: করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন চিকিৎসক ও ডাক্তাররা। আমরা যেন নিজেরা নিরাপদে থাকতে পারি সেজন্য নিজেরা ঝুঁকিতে থেকেছেন। কিন্তু তাদেরও তো পরিবার ও আপনজন আছে। করোনায় কেমন ছিল তাদের পারিবারিক জীবন? সেটি নিয়ে মাবরুর রশীদ বান্নাহর নির্মাণ দায়িত্ব। এ নাটকের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক ছিল সংলাপ।

করোনা বলে কিছু নেই: ধর্ম কখনো সুরক্ষায় থাকতে নিষেধ করেনি। তবে আমরা আমাদের অন্ধবিশ্বাসে মহামারীতেও নিজেরা নিরাপদে থাকতে রাজি নই। তেমনি এক বৃদ্ধ ও তার বিজ্ঞানমনস্ক সচেতন মেয়ের মধ্যে এ নিয়ে চলে কোল্ড ওয়ার। মেয়ে কি শেষ পর্যন্ত তার অসচেতন বাবাকে মহামারী থেকে নিরাপদ রাখতে পারবে কিনা তা নিয়ে শিহাব শাহীন নির্মাণ করেছেন ‘করোনা বলে কিছু নেই’! একেবারে ছোট গল্প হলেও বাবা মায়ের অভিনয়ের কারণে কাজটি ভাল লেগেছে।

টু লেট: করোনায় চাকরি হারানোয় কিংবা ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে শহর ছাড়ছেন অনেকে। তাই টু লেটের সংখ্যা বাড়ছে। তবে দীর্ঘদিন এই শহরে থাকায় মায়ার যে শিকড় গজিয়েছে সেটাকে উপড়ে ফেলে চলে আসার হৃদয় বিদারক গল্প নিয়ে নাটকটি নির্মিত হয়েছে। সহজ সাধারণ কিন্তু ভাল গল্প এবং অনিমেষ আইচের ভালো নির্মাণ টু লেট।

বি.দ্র.:  কাজগুলোতে আলাদা করে নায়ক নায়িকার নাম দেইনি। কারণ, আমার কাছে মনে হয়েছে এগুলোর মূল নায়ক ছিল গল্প।


মন্তব্য করুন