Select Page

এইতো ভালোবাসা

এইতো ভালোবাসা

eitoসিনেমার মধ্যাহ্নে বিরতির ঠিক আগের দৃশ্যে রাণীর বাবার কাছে একটা ফোন এল, কথা বলতে বলতে তিনি চমকে উঠলেন, তার সাথে সাথে দর্শকের উৎকন্ঠাও বাড়ল – কারণ, রাণীর বাবার কথোপকথনের কিছুই দর্শক শুনতে পায় নি। ফোন রাখার সাথে সাথেই পর্দায় লেখা উঠল – বিরতি। বিরতির পরে কাহিনী কোন দিকে কড়া বাঁক নিতে পারে তা নিয়ে যখন ভাবছি – তখন শিমুল কানে কানে জিজ্ঞেস করল – ভাই, ট্রেলার দেখেই শেষে কি হবে বুঝে ফেলেছি, আপনাকে বলবো? ছবির ট্রেলার আমি দেখি নি, কিন্তু শিমুলের কাছ থেকেও শুনে সিনেমার মজা নষ্ট করতে চাই নি বলে জিজ্ঞেস করা হয় নি, কিন্তু আমি নিশ্চিত শিমুল সিনেমার শেষটা সম্পর্কে সঠিক ধারনা করতে পারে নি। শাহীন কবির টুটুল পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘এইতো ভালোবাসা’র সমাপ্তি এতটা অযৌক্তিক এবং সামঞ্জস্যহীন যে কোন দর্শক আগে থেকে তা ভেবে রাখতে পারবে না।

তিন বন্ধু – ঢাকা শহরে নিজেদের অবস্থানকে শক্ত করার জন্য একই সাথে রাজ্য এবং রাজকন্যা দখলের উদ্যোগ নেয়। এক প্রকার সহায় সম্বলহীন এই তিনবন্ধু উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য নানা ফন্দি ফিকিরের আশ্রয় নেয় এবং তাদের এই কর্মকান্ডই ‘এইতো ভালোবাসা’র মূল বিষয়। এদের একজন ইমন, একজন নিরব এবং তৃতীয়জন ‘পুব দিক না, উত্তর দিক না, পশ্চিম দিক না, দক্ষিন দিক না, তাহলে কোন দিক? সিদ্দিক’ – সিনেমার প্রধান আকর্ষন। ছোট পর্দায় কমেডি চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জনকারীর সিদ্দিকের নাম ও অভিনয়কেই পুঁজি করেছেন প্রযোজক এবং পরিচালক। ইমন ও নিরব চরিত্রের প্রয়োজন অনেকআ সিদ্দিকের চরিত্রকে পূর্ণতা দানের উদ্দেশ্যে । রাহুল খানের কাহিনীতে এই সিনেমার সংলাপও লিখেছেন সিদ্দিক। সিদ্দিকের সংলাপে সিদ্দিক সহ ইমন, নিরব এবং ডোন্ট অ’রি লন্ড্রির ফারুকের অভিনয়সিনেমার তিন চতুর্থাংশ সময় দর্শককে হাসিমুখে থাকতে বাধ্য করেছে। কিন্তু গল্পের বিচারে ‘এইতো ভালোবাসা’ কতটুকু সিনেমা হয়ে উঠে সে প্রশ্ন বেশ জোড়ালোভাবে করা সম্ভব।

সিনেমার কাহিনী শুরু হয়েছিল রাজ্যসহ রাজকন্যা জয়ের উদ্দেশ্যে, কাহিনীর অগ্রগতিও উদ্দেশ্যের সাথে সম্পৃক্ত কিন্তু কাহিনীর সমাপ্তি সিনেমার নামের সাথে খাপ খায় না। বরং, হাস্যকরভাবে ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ শেষের এক চতুর্থাংশকে মেনে নিতে হলে ছবির নাম পাল্টে ‘তিন বন্ধু’ রাখতে হবে।

শাহীন কবির টুটুলের এটা প্রথম চলচ্চিত্র। এর আগে ছোটপর্দায় নাটক বানিয়েছেন তিনি। চলচ্চিত্র নির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করে তিনি যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তার জন্য অভিনন্দন। কিন্তু কিছুক্ষন পর পর কাহিনীর ‘লংজাম্প’ বন্ধে তিনি আরও সচেতন হতে পারতেন। কাহিনীকার রাহুল খানের সাথে মিলে রাণীকে ঘিরেই চলচ্চিত্রকে সমাপ্তির দিকে টানতে পারতেন। এতে করে সমাপ্তিটা হয়তো দর্শকের ধারনার সাথে মিলে যেতো কিন্তু তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ, সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বক্তব্য সম্বলিত গল্প দিয়ে দর্শককে তৃপ্ত করতে পারতেন।

ডিজিটাল চলচ্চিত্র ‘এইতো ভালোবাসা’র প্রতিটি দৃশ্যে ডিজিটালাইজেশন স্পষ্ট। কালার কারেকশন এবং স্পেশাল ইফেক্ট দৃশ্যগুলোকে অনেকক্ষেত্রে দৃষ্টিকটু করে তুলেছে। চিত্রগ্রাহক লাল মোহাম্মদের অপুটত্ব নাকি সিনেমার দুর্বল প্রিন্ট জানি না, পুরো সিনেমাই অত্যধিক মাত্রার উজ্জ্বলতা দর্শককে সত্যিকারের রঙ থেকে বঞ্চিত করেছে।

চলচ্চিত্রে অভিনয় নিয়ে বেশী কিছু বলার নেই। সিদ্দিক একাই দর্শককে মাতিয়ে রাখলেও নিরব, ইমন বা ফারুক আহম্মেদ কিংবা নিপুন অযোগ্যতার পরিচয় দেননি কোথাও। বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের নায়িকা নিপুণের অঙ্গসজ্জা এবং অভিনয়যোগ্যতার কারনে ভিন্নধারার চলচ্চিত্র পরিচালকরা নতুন করে ভাবতে পারেন। চলচ্চিত্রের আবহসঙ্গীত সামঞ্জস্যপূর্ণ, গানগুলোর কয়েকটি নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় তবে শ্রুতিমধুর।

১২৬ মিনিটের চলচ্চিত্র ‘এইতো ভালোবাসা’ কতটুকু চলচ্চিত্র হয়ে উঠল সেটা চলচ্চিত্রবোদ্ধারা বিচার করবেন, কিন্তু সিদ্দিক কিংবা ফারুক আহম্মেদকে নির্ভর করে দুই ঘন্টার বিনোদনমূলক সিনেমা একই সাথে আশাবাদী ও শঙ্কিত করে তোলে। আশাবাদী করে কারণ সামাজিক অ্যাকশন সিনেমার বাইরে দুই ঘন্টা মন খুলে হাসার মত বিনোদন দেয়ার জন্য কমেডি চলচ্চিত্র নির্মান হচ্ছে। শঙ্কিত করে, কারণ সিদ্দিকের মত জনপ্রিয় অভিনেতাদের পুঁজি করে অল্প বাজেটে সিনেমা নির্মনের প্রবণতা তৈরী হলে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের উর্দ্ধগতির যে রেখা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা প্রকৃতপক্ষে অধঃপাতে নিয়ে যাবে। নির্মাতা শাহীন কবির টুটুল তার প্রথম চলচ্চিত্রের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দ্রুতই আরও মজবুত গল্পের চলচ্চিত্র নির্মানে উদ্যোগী হবেন সেই বিশ্বাসে শঙ্কাকে দূরে ঠেলে আশাবাদী হই।

এই তো ভালোবাসা
পরিচালকঃ শাহীন কবির টুটুল
অভিনয়েঃ নিরব, ইমন, সিদ্দিক, নিপুণ, ফারুক আহম্মেদ, মিজু আহমেদ প্রমুখ
কাহিনীঃ রাহুল খান
সংলাপঃ সিদ্দিকুর রহমান
রেটিঙঃ ৩/৫


মন্তব্য করুন