Select Page

খরার মাঝে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ একপশলা বৃষ্টি

খরার মাঝে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ একপশলা বৃষ্টি

একসময় আমি খুব সিনেমা দেখতাম। খুব সিনেমা দেখতাম। সত্তর দশক, আশি দশক এবং নব্বই দশকে ৯৬-৯৭ সাল পর্যন্ত যত ছবি মুক্তি পেয়েছে; আমি তার ৯০ শতাংশ ছবি দেখেছি। ৯৭-৯৮ সালের পর থেকে ছবি দেখা কমিয়ে দেই। কারণ অশ্লীলতা ও অতিমাত্রায় অ্যাকশন।

আমি অ্যাকশন ছবি অপছন্দ করি তা কিন্তু নয়! রংবাজ, প্রতিহিংসা, ক্ষতিপূরণ, ঘৃণা, দিনমজুর, বিপ্লব, সন্ত্রাস, লড়াকু, লোভ লালসা, রকি, জনি, দোস্ত দুশমন, আসামী হাজির, ওস্তাদ সাগরেদসহ অনেক অ্যাকশনধর্মী ছবি আমার পছন্দের তালিকায়।

কিন্তু ১৯৯৭-৯৮ এর পর অ্যাকশন এতো অতিমাত্রায় প্রবেশ করেছে যে অ্যাকশনের কাছে ছবির কাহিনী অসহায় হয়ে পড়ে। তারপর নায়ক- ভিলেনের চেঁচামেচি, গলাবাজি, গালাগালি সব মিলিয়ে কেমন যেন জগাখিচুড়ী অবস্থা। সিনেমার নামগুলোও কেমন যেন সৌন্দর্য হারায়। আর অশ্লীলতার কথা কী আর বলবো!

ঠিক সেই সময় চলচ্চিত্র অঙ্গনে খরার মাঝে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ একপশলা বৃষ্টি হয়ে এলো আমার জন্য। আমাদের জন্য। আমরা যারা সত্তর-আশি ও নব্বইয়ের প্রথমভাগের সিনেমার দর্শক।

হুমায়ূন আহমেদের একই নামের উপন্যাসের চলচ্চিত্র রূপায়ণ ‌‘শ্রাবণ মেঘের দিন’। জাহিদ হাসান গ্রামীণ গায়ক। একই গ্রামের শাওন তাকে মনে মনে ভালোবাসে। শাওন গান পছন্দ করে। নিজেও একটুআধটু গায়, গলাও ভালো। সে সবসময় স্বপ্ন দেখে জাহিদ হাসানকে নিয়ে একটা গানের দল করে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াবে।

কুসুমের বাবা উজান অঞ্চল থেকে মাহফুজ আহমেদকে নিয়ে আসে মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার জন্য। মাহফুজও চমৎকার গায়। একদিন তার গান শুনে মুগ্ধ হয় জাহিদ।

এ দিকে ছবির অবতারণা হয়েছিল, ঢাকা থেকে আসে গ্রামের সাবেক জমিদার গোলাম মুস্তফার নাতনি মুক্তিকে ঘিরে। জাহিদ হাসান পছন্দ করে মুক্তিকে। মুক্তিও জাহিদ হাসানের গানের ভক্ত।

ছবির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ডা. এজাজের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। বাচ্চা উল্টে আছে। মুক্তি গাইনিবিদ্যা সম্পর্কে জানে কিন্ত বাস্তবে কখনো চর্চা করেনি। সাহস করে ইজাজের স্ত্রীর ডেলিভারি সম্পূর্ণ করে এবং মুক্তি সফল হয়।

গোলাম মুস্তফাকে গ্রামবাসী ঘৃণা করে। মুক্তিযুদ্ধে তার বিতর্কিত ভূমিকা এর কারণে। তবে নাতনি মুক্তির কারণে সবাই একটু একটু পছন্দ করতে থাকে তাকে।

কুসুমের বিয়ের আয়োজন চলে তখন জমিদারের নাতনিরা ঢাকায় ফিরে যায় জমিদারসহ। জমিদার পাকিস্তানি মিলিটারিদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছিলো। গ্রামের সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে তার জমিদার বাড়ি একটি হাসপাতালের জন্য দান করে বিদায় নেয়। গ্রামের প্রায় সবাই চলে আসে তাদের বিদায় জানাতে।

এমন সময়ে শাওন বিষ পান করে, মা আনোয়ারা সবাইকে ডাকে এবং তাকে নিয়ে জাহিদ আর মাহফুজ নৌকায় ছোটে ডাক্তার মুক্তিকে ধরতে, কিন্তু মাঝপথেই শাওন মারা যায়।

কাহিনী যদিও ত্রিভূজ প্রেমের। কিন্তু কাহিনীর মূল বক্তব্য একজন স্বাধীনতা বিরোধীর ক্ষমা চাওয়া। আমার কাছে মনে হয়েছে স্বাধীনতা বিরোধীকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার একটি বার্তা প্রেরণ করতেই উপন্যাসে বা সিনেমার অন্যকাহিনী সৃষ্টি হয়েছে। সত্যি হুমায়ূন আহমেদ একজন মেধাবী গল্পকার ও চলচ্চিত্রকার।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

আকবর খসরু

চলচ্চিত্রপ্রেমী ও লেখক

মন্তব্য করুন