Select Page

গল্পই নায়ক

গল্পই নায়ক

আমরা যারা নতুন দিনের ইন্ডাস্ট্রির কথা বলছি, সিনেপ্লেক্সকেন্দ্রিক কনটেন্ট নির্ভর নতুন সময়ের ছবির স্বপ্ন দেখছি যেখানে কনটেন্টের জয়জয়কার হবে সেই ভরসা থেকে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের নতুন ছবি ‘পাপ পুণ্য’ একটা সিঁড়ি। এই সিঁড়ি কনটেন্টের ছবির সম্ভাবনাকে জানান দিচ্ছে যেখানে গল্পই হবে নায়ক। ‘পাপ পুণ্য’-তে তাই ঘটেছে।

গিয়াস উদ্দিন সেলিম ‘মনপুরা’ নির্মাণের দীর্ঘ সময় পর ‘স্বপ্নজাল’ নির্মাণ করেছিলেন। তাঁকে নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছিল না নির্মাণে। ‘স্বপ্নজাল’-এর পর তিনি নিয়মিত হয়েছেন নির্মাণে। টেলিভিশন, ওটিটি কিংবা সিনেমাহল সব মাধ্যমের জন্যই এখন কাজ করছেন। এটা দরকার তাঁর মতো চমৎকার একজন নির্মাতার জন্য। কাজটা চালু থাকলে তাঁর কাছ থেকে আরো মানসম্মত কিছু পাওয়া যাবে।

‘পাপ পুণ্য’ গল্পনির্ভর ছবি। অনেক অভিনয়শিল্পীর সমাবেশ ঘটেছে ছবিতে কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে গল্পই ছবির প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। প্রথমদিকের চেনা গল্পকে শেষের দিকে ধাক্কা দেয়া বা যাকে টুইস্টের মধ্যে ফেলা যায় সেটাই গল্পে প্রধান। নির্মাতা গল্পকে সাবলীল ভঙ্গিতে বলে গেছেন।

চঞ্চল চৌধুরী নামকরা ব্যক্তি এলাকার। তার সামাজিক মর্যাদা আছে। তার বাড়িতে কাজ করে আফসানা মিমি। মিমির ছেলে সিয়ামের সাথে চঞ্চলের মেয়ে শাহনাজ সুমির প্রণয়। তাদের প্রণয়ের মধ্যে একটা বাধা আসে। বাধাটা কী এবং বাধার ফলে যে সমাধানটি হয় তার সাথে নতুন একটা গল্প চলে আসে সামনে। ভালোবাসার গল্পে যে পুণ্য থাকে পাপের একটা থাবা হঠাৎ সেখানে জায়গা করে নেয়, কী সেই পাপ, কার মাধ্যমে ঘটে এবং এর পরিণতি কী এসব মিলিয়েই ছবির গল্প।

গল্পটিকে বলার জন্য গিয়াস উদ্দিন সেলিম ছবির প্রথমার্ধ্বে ধৈর্য ধরানোর মতো কাজ করেছেন আর বিরতির পর গল্পের ধাক্কাটা জায়গামতো দিয়েছেন। টুইস্টের জায়গাটা ছিল একাধিক এবং ছবির মোড় ঘোরানোর জন্য ভালো প্রচেষ্টা।

অনেক অভিনয়শিল্পীর সমাগমে মাল্টিকাস্টিং ছবি হয়েছে ‘পাপ পুণ্য’। চঞ্চল চৌধুরীর লুক প্রথমত বেশি আকর্ষণীয় এবং চরিত্রের গুরুত্বে শীর্ষে অবস্থান করেছে। তার অভিনয়ের গভীরতা বরাবরের মতোই ছিল। চরিত্রটি নিজের নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীর কাজ করেছে এবং চঞ্চল তার সহজাত অভিনয় করেছে। দ্বিতীয় প্রধান আকর্ষণ অবশ্যই সিয়াম আহমেদ। সিয়ামের গল্প নির্বাচনের প্রতি যে সচেতনতা পূর্বের ছবিগুলোতে ছিল এটিও তারই ধারাবাহিকতা ছিল। প্রেমিক সিয়াম তার অভিনয় এবং চরিত্রের আকর্ষণে মনোযোগী অভিনেতার পরিচয়ই দিয়েছে। শাহনাজ সুমি-র প্রথম ছবি হিসেবে ন্যাচারাল অভিনয় ছিল। তার সম্ভাবনাও জানিয়ে দিয়েছে সে চলচ্চিত্রে। আফসানা মিমির মতো বড়মাপের অভিনেত্রীকে চলচ্চিত্রে কেন যে কাজে লাগানো হয় না এই ছবিতে তার অভিনয় দেখলে সে আফসোসই হবে সবার আগে। তার অভিনয় হৃদয় স্পর্শ করে। ফজলুর রহমান বাবু, মামুনুর রশীদ, চুমকী সবাই যার যার চরিত্রে সাবলীল।

ছবির লোকেশনে চাঁদপুর অঞ্চলের সৌন্দর্যটা সেভাবে ফুটে ওঠেনি কালার গ্রেডিং-এর যথার্থ ব্যবহার না হবার কারণে। মফস্বলের সৌন্দর্য তো আছেই কিন্তু পরিপূর্ণ লাগেনি কোথায় যেন কমতি ছিল। গানগুলো ভিন্নস্বাদের সব। বিজিএম ভালো। ওয়াইড স্ক্রিনের বিষয়টা সেলিমের অন্য ছবির মতো এটাতেও ছিল। 

‘পাপ পুণ্য’ কনটেন্টের ছবি। এ ধরনের ছবির নতুন মার্কেট তৈরিতে আমরা যেভাবে অপেক্ষা করছি সে যাত্রার একটা পরিচ্ছন্ন পদক্ষেপ হোক ছবিটি। দেশের বাইরেও পাপ পুণ্য অনেকগুলো থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে এবং আশা করি ছবিটি ভালো ফলাফল করবে। জয় হোক কনটেন্টের ছবির।

রেটিং – ৮/১০


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন