Select Page

দায়সারা মাল বানিয়ে টাকার শ্রাদ্ধ করেছেন শ্যাম বেনেগাল

দায়সারা মাল বানিয়ে টাকার শ্রাদ্ধ করেছেন শ্যাম বেনেগাল

শ্যাম বেনেগাল আমার প্রিয় ফিল্মমেকারদের একজন। তার বেশিরভাগ সিনেমাই আমার দেখা। ইন্ডিয়ার গ্রেট ফিল্মমেকারদের একজন নিঃসন্দেহে। কিন্তু গতকাল রাত্রিবেলা তিনি ‘মুজিব- একটি জাতির রূপকার’ সিনেমার ট্রেলার দিয়ে আমাকে এতটাই হতাশ করেছেন যে কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না। শুরুতেই যা ভাবছিলাম তা-ই হয়েছে।

ট্রেইলারের চমকে অনেক আজে বাজে সিনেমাও আমি দেখেছি। কিন্তু মুজিবের ট্রেইলারের অবস্থাই যদি এমন হয়, তাহলে গোডাউনের মান কেমন তা সহজেই আন্দাজ করা যায়।

শ্যাম এর আগেও দুটো বায়োপিক বানিয়েছেন। গাঁধি আর নেতাজির বায়োপিক। ভালোই হয়েছে। তেমন কোনো সমস্যা হয় নাই দেখতে। কিন্তু মুজিবের বায়োপিকের যে অবস্থা হতে যাচ্ছে তার সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ হতে পারে।

১. এর আগে খুব সম্ভবত তিনি কখনো কোনো বাঙলা সিনেমা বানান নাই।
২. তিনি বাঙালি ফিল্মমেকার নন।
৩. সময় নিয়েছেন কিন্তু কোনো গবেষণা করেন নাই।
৪. তার বয়স প্রায় নব্বইয়ের কাছে। অবশ্য বয়স কোনো বিষয় নয়, তার উদাহরণ সত্যজিৎ।
৫. বাঙলাদেশি জিনিশ বলে দায়সারা মাল বানিয়ে টাকার শ্রাদ্ধ করেছেন।
৬. ইত্যাদি আরো কতিপয় কারণ থাকতে পারে।

তবে সব থেকে তার বড় ভুল মুজিব চরিত্রে বাঙলাদেশি সিনেমা থেকে সিক্সপ্যাকের প্যাঁক প্যাঁক করে কান্নাকাটি করা একটা নাবালককে নিয়েছেন। যার অভিনয়ের কোনো মা-বাপ নাই, যে কেবল ফিগারের কারণে সিনেমার নায়ক। থিয়েটার থেকে যে কাউকে নিলেও তার চেয়ে হাজারগুণ ভালো করতে পারতো।

অবশ্য সব থেকে বড় বিষয় মুজিব চরিত্রে অভিনয় করার মতো বাঙলাদেশে এখন আর জীবিত কেউ নাই, আগে ছিলো।
অন্যান্য চরিত্র নিয়ে কোনো কথা নেই। রিয়াজ, তৌকির, আসাদ, রুবেল এরা ভালো অভিনেতা। এরা চালিয়ে নিতে পারবে যে চরিত্র দেয়া হয়েছে তাদের। কিন্তু জাতীয় মাতাশ্রী ফজিলাতুন নেসা চরিত্রে তিশাকে ইতিহাসের অংশ বানানোর মতো এত বড় ন্যাক্কারজনক কলঙ্ক চাঁদের গায়েও নাই। তিশার জয় বাঙলা বলাটাও কলকাতা স্টাইলে। বাঙলাদেশিরা জয় বাঙলা ওই টোনে বলে না।

এর বাইরে নিচুমানের ভিএফএক্স, অ্যাকশান সিন দেখে মনে হয় শ্যামের বাসার কাজের ছেলে আব্দুল বানিয়েছে সিনেমাটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সিনেমার সিনসিনারি থেকে মারিংকাটিং করে।

কস্টিউম, মেকআপের অবস্থাও যা তা, একটা মুজিব কোট আর মোটা ফ্রেমের চশমা পরিয়ে দিলেই শেখ মুজিব, যেন আঙুল উচা করে জয় বাঙলা বলতে পারলেই বঙ্গবন্ধু। শুভকে মনে হচ্ছিলো মুজিবে মোমের তৈরি মূর্তি।

হালচাষ যে গরু দিয়ে করতে হয় তা শ্যামের মতো ফিল্মমেকার হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন। গাধা পিটিয়ে যেমন ঘোড়া বানানো যায় না, তেমনই আসমান থেকে সবচেয়ে ভালো ফিল্মমেকার হায়ার করলেও এখনকার বাঙলাদেশি ছিনেমার আবালদের দিয়ে ঠিকঠাক অভিনয় করানো যাবে না, এটা ধ্রুব সত্য।

আল্লাহ্ বিশাল বাঁচা বাঁচিয়ে দিয়েছে যে পদ্মা ব্রিজ বানানোর মহান দায়িত্ব শ্যাম বেনেগালকে দেয়া হয় নাই। শ্যামকে দেওয়া উচিত ছিলো আসলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চালানোর কাজ। মহাকাশে আর্টকে ফার্টে তরজমা করলেও আমরা টের পাইতাম না।

অনেক সিনেমা বিশেষজ্ঞ আর অভিজ্ঞ দর্শক বলছেন যে শ্যাম বেনেগাল যেহেতু বড় ফিল্মমেকার সেহেতু ট্রেইলার দেখে তার সিনেমাকে উড়িয়ে দেয়া যাবে না।

আমি একজন সাধারণ দর্শক, অভিজ্ঞ বা বিশেষজ্ঞও নই। তারপরও আমি বলতে পারি যে অভিজ্ঞরা খুবই সাধারণ কথা বলছেন।

আমার অন্যান্য আর্টিস্টদের নিয়ে কথা নেই। সব ভালো ভালো অভিনেতা অভিনেত্রী। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো একটা তীব্র আর বিরাটাকায় চরিত্রের জন্যে দেশীয় আবাল চাটুকারদের পাল্লায় পড়ে শ্যাম যে আরেফিন শুভর মতো একজন অর্বাচীনকে এক টাকার মজুরিতে নিয়োগ করে ইতিহাসে ঠেসে দিয়েছেন সেইটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় হঠকারিতা।

ভাই! শুভকে জাস্ট কার্টুনের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে ইমিটেশন। তো প্রধান চরিত্রে যদি একটা কার্টুনকে দেখা যায় পুরা সিনেমাজুড়ে, তাহলে অন্য কুশীলবরা প্রাণপণে পায়ুয় ঘাম পায়ে ফেললেও তো কোনো ফায়দা হবে না।

শেষ কথা, মুজিবের বায়োপিক আরো চল্লিশ বছর আগে মৃণাল সেন কিংবা সত্যজিৎকে দিয়ে বানানো উচিত ছিলো।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

জন্ম ২৪ আগস্ট ১৯৮১, চকরিয়া, কক্সবাজার, বাঙলাদেশ। লেখালেখি আর ছবি আঁকাই মূল কাজ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চিত্রকলায় স্নাতকোত্তর। বইয়ের সংখ্যা ১৮টি।

মন্তব্য করুন