Select Page

চলচ্চিত্র পরিচালনা নিয়ে কিছু কথা (পর্ব – ০২)

চলচ্চিত্র পরিচালনা নিয়ে কিছু কথা (পর্ব – ০২)

director-chair1

সকালে ‘কালের কন্ঠ’ পেপারটা পড়ছিলাম। বিনোদন পাতায় একটা নিউজে চোখ আটকে গেলো। নিউজটা আমাদের দেশের সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত নাম ‘নায়লা নাঈম’ কে নিয়ে লেখা। নায়লা সম্ভবত তার জীবনের প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে, নিউজ অনেকটা এরকমই। আমি ঠিক সেদিকে যাচ্ছি না। তবে, নিউজের একটা লাইন আমাকে প্রচন্ডভাবে আকৃষ্ট করলো। লাইনটা অনেকটা এরকম – “নতুন এ চলচ্চিত্রটির পরিচালক কে হবেন, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি! তবে গল্প-সংলাপ লেখা শেষ এবং তিনটা গানও রেকর্ডিং করা শেষ….” !!!

প্রথমেই একটা ব্যাপারে সবার কাছে একটু জানতে চাই – আমাদের ঢালিউডে একজন ‘পরিচালক’ -এর কাজের পরিধি কতটুকু??!! তাকে কি শুধু এতটুকু জানিয়ে দেয়া হবে যে, অমুক প্রযোজকের ছবি, অমুক-তমুক অভিনয় করবে, অমুক দিন থেকে শ্যুটিং শুরু – আপনি কি কাজটা করে দিতে পারবেন ?!! -_-

এবং, তারপর প্রযোজকের কথা মেনে… সুবোধ বালকের ন্যায়… ঝড়ের গতিতে শ্যুটিং শেষ করে… সব দায়-দায়িত্ব চলচ্চিত্রের সম্পাদকের হাতে তুলে দিয়ে, তিনি বউ-বাচ্চা নিয়ে কক্সবাজার চলে গেলেন ‘হাওয়া’ খেতে !!

তারপর, প্রোডাকশন থেকে কোন একদিন তাকে জানানো হলো যে… “ভাই, আপনার ছবি তো গত শুক্রবার মুক্তি পেয়ে গেছে !! ছবি এমন হিট হইসে যে, সব সিনেমা হলে ‘আগুন’ জ্বলতেছে একেবারে” !!!  :-/

ব্যাস… তারপর আবার আগের মতো তিনি নিমগ্ন হয়ে পড়বেন কোন ব্যবসা কিংবা অন্য কোন কাজে !! আর, অপেক্ষায় থাকবেন… আবার কবে ‘ডাক’ আসবে !!!  -_-

এভাবেই তারা এক সময় সিনিয়র হয়ে উঠবেন । আর আমরাও তাদের যথারীতি সম্মান দিয়ে ‘লিজেন্ড’ উপাধীতে ভূষিত করে মাথায় পেতে রাখবো !!!

একদম মন থেকে বলবো একটা কথা… এই ‘লিজেন্ডারী’ পরিচালকেরাই আমাদের এখানে ‘চলচ্চিত্র পরিচালনা’ পেশাটাকে পৌরসভার রাস্তা নির্মানের ‘কনট্রাক্টর’ -এর পেশার সাথে একেবারে মিলিয়ে-মিশিয়ে ফেলেছে আজ !!!

আমার এই লেখাটার ১ম পর্বে একটা কথা বলেছিলাম যে, একটা চলচ্চিত্রের ভুত-ভবিষ্যৎ তো পরিচালকের উপরেই নির্ভর করে, তাই না !!  তো ধরুন… পরিচালক নিজেই ভালোভাবে জানেন না যে, তার চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা কে করছে ! আপনাদের কি মনে হয়… এই ‘মহান’ পরিচালকের এই চলচ্চিত্রের অদূর ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে ?!!!

একটা ঘটনা বলি… ঘটনা তেমন কিছুই না, শুধু একটা চলচ্চিত্রের ভেতরকার একটা ব্যাপার বলবো ।

সরাসরি কোন নাম ব্যবহার করবো না ! চলচ্চিত্রটা গত বছরের… ডিজিটাল ফরমেটেই নির্মিত হয়েছিলো এবং অনেকেই হয়তো দেখে থাকবেন ! তো, চলচ্চিত্রটার পুরো শ্যুটিং শেষ । এডিটিং -এর কাজ চলতেছে । হঠাৎ এডিটর সাহেব বন্ধু পরিচালক কে একটু খোঁচা মেরেই বললেন… “কিরে ‘অমুক’, তুই হইলি ছবির পরিচালক ! অথচ, তোর ছবির বেশিরভাগ শটগুলাতেই ‘৩,২,১,০,অ্যাকশন’ তো বলে অন্যজনে… হয় ফাইট ডিরেক্টর বলে নয়তো কোরিওগ্রাফার বলে ! তোরে তো বলতে শুনি নারে কখনও” !!!! 😮

বুঝতে তো পেরেছেন ব্যাপারটা !! যে পরিচালক সম্পর্কে কথাটা বললাম, তার সম্পর্কে এটাও শুনেছি যে… তার ছবির সেটে নাকি তাকেই খুঁজে পাওয়া যায় না ! এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, তার নাকি প্রযোজকের বেচে যাওয়া টাকা মেরে দেওয়ারও অভ্যাস আছে !!! -_-

তাহলে বলুন এবার ! এদের সাথে কাজ করতে প্রযোজক কেনো এতোগুলো টাকা খরচ করবেন !! আর আমরা ঠিকই বড় গলায় বলি যে, আমাদের এখানে প্রযোজকই তো পাওয়া যায় না… প্রযোজক তো টাকা খরচই করতে চায় না ! ব্লা… ব্লা… ব্লা… !!

তাই, আগেও বলেছি… এখনও বলছি ! পরিচালনা আর ‘কন্ট্রাক্টরি’ পেশা এক নাহ !! অনেক গুনী পরিচালকদের মুখে বলতে শুনেছি যে, একটা চলচ্চিত্র তাদের কাছে একেক জন সন্তানের মতো !! এতো যত্ন, ভালোবাসা আর মমতা দিয়ে এগুলোকে বড় বানিয়েছেন তারা । অতঃপর এই চলচ্চিত্রগুলোই দেশের সম্পদে পরিণত হয় এক সময় !!

তাই, দেশের এই শিল্পীগোষ্ঠীদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি… যদি কিছু সৃষ্টি করতে না পারেন, তাহলে অনুরোধ একটাই থাকবে যে… দয়া করে অন্তত কিছু ধ্বংস করবেন না !! প্রয়োজনে সরে দাড়ান । আপনাদের মতো ‘কন্ট্রাক্টর’ দের জন্য দেশের মেধাবী রা সুযোগ হারাচ্ছে !! দেশের চলচ্চিত্রের দুরবস্থা যেহেতু আপনারাই সৃষ্টি করেছেন… আপনাদের সরে দাড়ানোর মধ্যেই রয়েছে এই সংকট নিরসনের একমাত্র সমাধান !!

জয় হোক বাংলা চলচ্চিত্রের… জয় হোক বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের… 🙂


মন্তব্য করুন