Select Page

চিরসবুজ জাফর ইকবালের জন্মদিন

চিরসবুজ জাফর ইকবালের জন্মদিন

Jafar-Iqbalবাংলা চলচ্চিত্রের স্টাইলিশ নায়কদের অন্যতম জাফর ইকবালের ৫৬তম জন্মদিন শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর)। তিনি চিরসবুজ নায়ক হিসেবে পরিচিত। শহুরে রোমান্টিক ও রাগী তরুণের ভূমিকায় দারুণ মানালেও সব ধরনের চরিত্রে ছিল তার স্বাচ্ছদ্য বিচরণ। বাস্তব জীবনে চমৎকার গান গাইতে পারা এ অভিনেতা বেশকিছু ছবিতে গায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ওই ছবিগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

জাফর ইকবাল ১৯৫০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে জন্মগ্রহণ করেন। বোন খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী শাহানাজ রহমতুল্লাহ ও বড় ভাই আনোয়ার পারভেজ নামকরা সঙ্গীত পরিচালক। সাংগীতিক আবহে বেড়ে উঠা জাফর ইকবালের আবির্ভাবও গায়ক হিসেবে। এসএসসি পাস করার আগেই গিটার বাজানোয় দক্ষ হয়ে উঠেন। এলভিস প্রিসলি ছিল তার প্রিয় শিল্পী। স্কুলে কোনো ফাংশন হলে গিটার বাজিয়ে এলভিস প্রিসলির গান গাইতেন। ১৯৬৬ সালে ‘রোলিং স্টোন’ নামে একটি ব্যান্ড গড়ে তোলেন। চলচ্চিত্রে তার অভিষেক গান দিয়ে। ‘পিচঢালা পথ’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান করেন।

১৯৬৯ সালে এক গানের অনুষ্ঠানে তিনি পরিচালক খান আতাউর রহমানের চোখে পড়েন। অনুষ্ঠান শেষে খান আতা তার হাতে একটা কার্ড দিয়ে বলেন, ‘ফিল্মে অভিনয় করবে?’ প্রশ্নটি শুনে জাফর ইকবাল একটু ভাবলেন। নম্রভাবে বললেন, ‘ইচ্ছে আছে। সুযোগ পেলে অভিনয় করব।’ সে বছরেই মুক্তি পায় তার প্রথম ছবি ‘আপন পর’, বিপরীতে ছিলেন কবরী। এ ছবির একটি বিখ্যাত গান ‘যারে যাবি যদি যা’। ওই গানে জাফর ইকবালের বরফ শীতল অভিব্যক্তি এখনও দর্শকদের চোখে ভাসে। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। রাজ্জাক, আলমগীরদের মতো নায়কের পাশে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম নায়ক হিসেবে অচিরেই দর্শকদের মনে স্থান করে নেন। প্রায় ১৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। যার বেশিরভাগই ছিল ব্যবসায় সফল। জাফর ইকবাল অভিনীত ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘সূর্যসংগ্রাম’, ‘সূর্যস্বাধীন’, ‘ভাই বন্ধু’, ‘চোরের বউ’, ‘অবদান’, ‘সাধারণ মেয়ে’, ‘একই অঙ্গে এত রূপ’, ‘ফকির মজনুশাহ’, ‘দিনের পর দিন’, ‘বেদ্বীন’, ‘মিস লংকা’, ‘আবিষ্কার’, ‘বিরহ ব্যথা’, ‘অংশীদার’, ‘মেঘবিজলী বাদল’, ‘সাত রাজার ধন’, ‘আশীর্বাদ’, ‘অপমান’, ‘এক মুঠো ভাত’, ‘নয়নের আলো’, ‘গৃহলক্ষ্মী’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘প্রেমিক’, ‘নবাব’, ‘প্রতিরোধ’, ‘ফুলের মালা’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘সিআইডি’, ‘মর্যাদা’, ‘অবুঝ হৃদয়’ ও ‘সন্ধি’। ববিতার সঙ্গে তার জুটি ছিল দর্শক নন্দিত। বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম এ জুটি মোট ৩০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে।

JAFOR-1

রূপালী পর্দায় জাফর ইকবালকে বিচিত্র ধরনের চরিত্রে দেখা গেছে। ‘এক মুঠো ভাত’ ছবির কঠোর সমাজ বাস্তবতায় বিপথগামী এক তরুণ, ‘মাস্তান’ ছবির প্রেমিক যুবক, ‘নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রে গ্রাম থেকে শহরে আসা গায়ক, ‘অবুঝ হৃদয়’ ছবির প্রেমের টানপোড়নে অস্থির তরুণ, ‘ভাইবন্ধু’ ছবির অন্ধ গায়ক ও ‘বন্ধু আমার’ ছবির বন্ধুবৎসল চরিত্রের কথা এখনও পুরনো দিনের দর্শকরা মনে করেন।

1

চলচ্চিত্রের কারণে গানে তিনি বেশি সময় দিতে পারেননি। তারপরও গানে তার জনপ্রিয়তা ছিল। ১৯৮০ এর দশকে বিটিভির আনন্দমেলায় তিনি বেশ কটি গান গেয়েছেন। ‘বদনাম’ ছবিতে তার গাওয়া ‘হয় যদি বদনাম হোক আরো’ গানটি খুবই জনপ্রিয় হয়। গানটিতে ঠোঁট মেলান রাজ্জাক। ‘ফকির মজনু শাহ’ ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি রুনা লায়লার সঙ্গে কণ্ঠ দেন ‘প্রেমের আগুনে জ্বলে পুড়ে’ গানটিতে। চলচ্চিত্রের বাইরে ‘সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী’, ‘যে ভাবে বাঁচি, বেঁচে তো আছি’ ও ‘এক হৃদয়হীনার কাছে’ উল্লেখযোগ্য গান। তিনি প্রায় ২০০টি গান গেয়েছেন। তার বিখ্যাত একটি অ্যালবামের নাম ‘কেন তুমি কাঁদালে’। এ ছাড়া অনেক ছবিতে তিনি আবহসঙ্গীত করেছেন। সম্প্রতি একটি নাটকের জন্য ‘যে ভাবে বাঁচি, বেঁচে তো আছি’ গানটি নতুন করে গেয়েছেন জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা ও অভিনেতা পার্থ বড়ুয়া।

জাফর ইকবালের স্ত্রীর নাম সনিয়া। তাদের দুই সন্তান। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন খামখেয়ালী, আবেগপ্রবণ ও দারুণ অভিমানী। নিয়ন্ত্রণহীন জীবনযাপন ও অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে তার হৃদযন্ত্র ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯১ সালের ২৭ এপ্রিল জাফর ইকবাল মারা যান। এ সময়ে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছিলেন।

 


মন্তব্য করুন