Select Page

চোরাবালি : দেশীয় আন্ডারওয়ার্ল্ড অ্যাকশান থ্রিলার

চোরাবালি : দেশীয় আন্ডারওয়ার্ল্ড অ্যাকশান থ্রিলার

184405_308139955962535_1939020046_n– ‘চোরাবালি চেনেন ?একবার পড়ে গেলে সেখান থেকে আর ওঠা যায়না’।

গল্পের প্রধান চরিত্র সুমনের (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত) দেয়া এই উদ্ধৃতি থেকেই চলচ্চিত্রটির এরূপ নামকরন। ছবির নাম ‘চোরাবালি’ !

টিভি নাটকে হাত পাকিয়ে এবার চলচ্চিত্রে অভিষিক্ত পরিচালক রেদওয়ান রনির স্বপ্নের ফসল এই চোরাবালি। বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে যখন এতদিন অফট্রাক পরিচালকদের লড়াইলব্ধ চলচ্চিত্রের নামে বড় পর্দায়  নাটক প্রদর্শন, অনট্রাকের বারংবার ব্যর্থতা আর অতিরঞ্জিত ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রদর্শনের যুগ চলে আসছিলো সেই সময়ে সত্যিকারের সুবাতাস নিয়ে এলেন এ পরিচালক। ২ ঘন্টা ১৯ মিনিটের এ চলচ্চিত্রটি দেখার সময়ে কোন ঝিমুনি, ভ্রুকুটি করার সুযোগ পাইনি। ছবি শেষে মুখ থেকে একটি লাইনই নিসৃত হলো, এ ছবি হিট !

চলচ্চিত্র ভালোবাসি, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে বলে ছবিটিকে হিট বলা নয়। এর মধ্যে এমন সব উপকরণ ছিল যা পাওয়ার বুভুক্ষায় দেশের দর্শক এতদিন বলিউডে বিনোদন খুঁজেছেন। পরনির্ভরশীলতার দিন শেষ, এবার নিজেদের বুভুক্ষা আমরা নিজেরাই মেটাতে সক্ষম। তাই দেখিয়ে দিলেন রেদওয়ান রনি।

এবার কাহিনীর দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক।সুমন (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত) এক খুনি-চাঁদাবাজ। নব্য রাজনীতিবীদ শীর্ষ সন্ত্রাসী গডফাদার ওসমান গনি (শহিদুজ্জামান সেলিম) ডান হাত হিসেবে কাজ করে সে। ওসমান গনি নিজের পাপ চাপা দিতে সুমনকে দিয়ে একের পর এক মানুষ খুন করায়। গনির বান্ধবী উঠতি মডেল সুজানা (পিয়া) সন্তানসম্ভবা হওয়ায় গনিকে বিয়ের চাপ দিলে গনি তা নাকোচ করে সন্তানটি নষ্ট করতে বলে। সুজানা গনির সব কুকীর্তির খবর ফাঁস করে দেয় তরুণী সাংবাদিক নবনী আফরোজ (জয়াআহসান) এর কাছে। খুন হয় সুজানা। ততক্ষনে সব জেনে গেছে নবনী আফরোজ।

Ch2

ওদিকে গনির পোষা কিলার সুমনেরহ ঠাৎ মনুষত্ববোধ জেগে ওঠে। মানুষ মারার নামে এতদিন কি করেছে সে! নবনী আফরোজ কি তার হাতে খুন হবে নাকি ঘটবে অন্য কোন ঘটনা? জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে ছবিটি।

শ্যুটিং এর শুরুতে হুমায়ুন ফরীদির ওসমান গনি চরিত্রে অভিনয়ের কথা ছিলো। তবে তিনি কিছুদিন শ্যুটিং এর পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তার স্থলাভিষিক্ত হন শহিদুজ্জামান সেলিম। ওসমান গনি চরিত্রে শহিদুজ্জামান সেলিমের দূর্দান্ত অভিনয় দর্শককে মাতিয়ে রেখেছে সারাটা সময়। তিনি একাই যেন পুরো ছবিটাকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছেন।

Ch3

অন্যদিকে ইন্দ্রনীলের অভিনয়ে পরিমিতিবোধ, সুঠামদেহ আর জয়ার স্বভাবজাত ডায়লগথ্রোয়িং দর্শককে একটি ভালো বানিজ্যিক ছবিদর্শনের তৃপ্তি এনে দেবে। খানিকটা অপ্রধান চরিত্রে এটিএম শামসুজ্জামানের অভিনয় ছিলো বিনোদনমূলক। অভিনেতা সোহেল রানা, হিল্লোল, ইরেশ যাকের পর্দায় স্বল্প উপস্থিতিতে তাদের যোগ্যতার পরিচয় রেখেছেন। প্রযোজক সালেহীন স্বপন সুজানার বন্ধু ডাক্তার চরিত্রে বেশ ভালোভাবেই উৎরে গেছেন।

চিত্রগ্রাহক খায়ের খন্দকারের চিত্রগ্রহন ছিলো এককথায় দূর্দান্ত। বার্ডস আইভিউয়ে ঢাকা শহরকে এমন চমৎকারভাবে দেখিয়ে চোখ জুড়ানোর জন্য তাকে ধন্যবাদ। ছবিতে বেশ কিছু ব্যতক্রমী শট ব্যবহৃত হয়েছে। যেগুলো অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য।

Ch4

চোরাবালি ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন কলকাতার অনুপম রায় ও হৃদয় খান। ছবিতে মোট ৬টি গান রয়েছে, কণ্ঠ দিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু, হৃদয় খান, কণা, আরফিন রুমী, অনুপম রায়, ন্যান্সি, মিলন মাহমুদ। প্রত্যেকটি গানই সমান শ্রুতিমধুর। আবহসঙ্গীতে বাইশে শ্রাবণ খ্যাত কোলকাতার ইন্দ্রদীপ দাসগুপ্তের কাজ ছিলোএককথায় দারুন। পরিচালক দৃশ্যের প্রয়োজনে গানের পুরোপুরি ব্যবহার না করে প্রত্যেকটি গানের খণ্ড অংশকে ব্যবহার করেছেন। ব্যাপারটি আমার কাছে পজেটিভ লেগেছে। ছবির প্রয়োজনেই গান, গানের প্রয়োজনে ছবিকে অনাকাঙ্খিতভাবে দীর্ঘায়িত করা কখনোই ভালো চলচ্চিত্রের স্ট্রাটেজি হতে পারে না।

আমি অবশ্যই বলছি ছবিটি আন্তর্জাতিক মানের, তবে নির্মানে সম্পূর্ন ত্রুটিমুক্ত তা বলছিনা। যে বিষয়ে সবার আগে মাইনাস মার্কিং করতে হয় তা হচ্ছে আইটেম সং। আইটেম গার্ল সিন্ডি রাওলিং ‘দে ভিজিয়ে দে’ নামক যে গানটিতে নেচেছিলেন সে গানের সম্পাদনায় গানের বিটে আর দৃশ্যায়নে ছন্দপতন দর্শককে সিটে নড়েচড়ে বসানোর বদলে কতকটা বিরক্তিই সৃষ্টি করেছে। শেষের দিকে ফাইট দৃশ্যে পরিপক্কতার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।

পরিসংহারে আসা যাক। এ বছরে দুটি বাণিজ্যিক ধারার আশা-জাগানিয়া চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিলো (মোস্টওয়েলকাম, ভালোবাসার রঙ)।এগুলো দেখে বলেছিলাম, এর মাধ্যমেই বুঝি বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে অচিরেই শুভদিনের সূচনা হবে। চোরাবালি দেখার পর গর্ব নিয়েই বলতে হচ্ছে, শুভ দিনের সূচনা বুঝি হয়েই গেলো। আর শঙ্কা নয়, এবার নিদ্বিধায় সিনেমা হলে আসুন, ছবি দেখুন আর বিনোদিত হোন।

বাংলাদেশী চলচ্চিত্র দীর্ঘজীবি হোক।

ch5

ছবির নাম : চোরাবালি
কাহিনী-চিত্রনাট্য-পরিচালনা : রেদওয়ান রনি
প্রযোজনা : সালেহীন স্বপন (স্ক্রিন হাউস এন্টারটেইনমেন্ট) ও মাছরাঙ্গা প্রোডাকশন।
শ্রেষ্টাংশে : ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, জয়া আহসান, শহীদুজ্জামান সেলিম, এটিএম শামসুজ্জামান, সালেহীন স্বপন, সোহেল রানা, আদনান ফারুক হিল্লোল, ইরেশ যাকের, পিয়া।
চিত্রগ্রহন : খায়ের খন্দকার
আবহসংগীত : ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত
জনরা : অ্যাকশান/থ্রিলার
আমার রেটিং : ৪.২/৫


৩ টি মন্তব্য

  1. সওদাগর নেজাম

    চোরাবালি দেখা হয় নাই। তবে ট্রেলার দেখে মনে হলো, ভাল হবে। ডিভিডি পাওয়া যায় বাজারে?

    • দারাশিকো

      মিস করছেন বস। বাংলাদেশে এই ধরনের ছবি সাম্প্রতিক সময়ে হয় নাই, ভালো সাসপেন্স আছে গল্পে, স্টোরিটেলিংও দারুন। ডিভিডি এখনো আসে নাই বলেই জানি, বাজার এখনো ফুরায় নি। ঈদে আসতে পারে, তবে রিকোয়েস্ট থাকবে দেখতে হলে বড় পর্দায় দেখার চেষ্টা করবেন, টিভি মনিটরে সিনেমার স্বাদ পাওয়া যায় না।

  2. চোরাবালি চোখের জন্য ভালো। কানের জন্য আরামদায়ক।

    এই এক্সপেরিয়েন্স দর্শক ও নির্মাতাদের নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। বাংলা মুভির উপর দর্শকদের প্রত্যাশা বেড়েছে। আশা করা যায়, বাংলাদেশি মুভি সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা ভালোভাবেই করবে।

মন্তব্য করুন