Select Page

‘জীবন থেকে নেয়া’র শিল্পীরা সংবর্ধিত

‘জীবন থেকে নেয়া’র শিল্পীরা সংবর্ধিত

২১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’র জীবিত তিন শিল্পী ও এক চিত্রগ্রাহককে নিয়ে পুনর্মিলনীর আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। অনুষ্ঠানে তিন অভিনয়শিল্পী রাজ্জাক, সুচন্দা, আমজাদ হোসেন ও চিত্রগ্রাহক আফজাল চৌধুরীকে সম্মাননা দেওয়া হয়। তা নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রথম আলো

এ ছাড়া হয় ‘জীবন থেকে নেয়া ও জহির রায়হান’ শীর্ষক আলোচনা সভা। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) জহির রায়হান কালার ল্যাব মিলনায়তনে হয় এ অনুষ্ঠান।

সভায় ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবির শুটিংয়ের সময়কার একটি ঘটনার কথা বলছিলেন রাজ্জাক, ‘এফডিসিতে শুটিং চলছিল। হঠাৎ করে সেনানিবাস থেকে এসে জহির রায়হান ও আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো। তাদের কাছে অভিযোগ ছিল, এটি পাকিস্তানবিরোধী সিনেমা হচ্ছে। জহির রায়হান সেদিন সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করে ফিরে এলেন। কাজ আবার শুরু হলো। কিন্তু সেন্সরে আটকে দেওয়া হয় ছবিটি। পরে ছাড়পত্র পায়।’

রাজ্জাক বলেন, ‘জহির রায়হান আমার ওস্তাদ ছিলেন। তিনিই নায়করাজ রাজ্জাককে সৃষ্টি করেছেন। তিনি বাঁধাধরা নিয়ম মেনে চলতেন না, নিয়ম মেনে কাজও করতেন না। তিনি কাজের ক্ষেত্রে সৎ ও সাহসী ছিলেন।’

জহির রায়হানের স্ত্রী ও জীবন থেকে নেয়া ছবির নায়িকা সুচন্দা বলেন, ‘জহির রায়হানের সাহিত্য, চলচ্চিত্রে সব জায়গাতেই মুক্তিকামী মানুষের কথা উঠে এসেছে। তার জ্বলন্ত উদাহরণ “জীবন থেকে নেয়া।”’ ছবির নির্মাণের শুরুর কথা বলতে গিয়ে এই নায়িকা বলেন, ‘আমি আর জহির দুজন মিলে পাকিস্তানের লাহোরে গিয়েছিলাম। একদিন আমরা দুজন মিলে একটি সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। রাতে হোটেলে ফিরে জহিরকে খুব অস্থির দেখাচ্ছিল। কী যেন ভাবছিলেন তিনি। তখনই তিনি “জীবন থেকে নেয়া” বানানোর পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন আমাকে।’

ছবির আরেক শিল্পী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের তরুণেরা জানে না, জহির রায়হান কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন। তিনি যুদ্ধ করেননি, কিন্তু তাঁর কলম আর ক্যামেরা মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করেছে।’ দুঃখ করে এই চলচ্চিত্র নির্মাতা বলেন, ‘এই দীর্ঘ সময়ে কেউই জহির রায়হান কিংবা “জীবন থেকে নেয়া” ছবিটি নিয়ে আলোচনায় এগিয়ে আসেনি। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ছোট পরিসরে হলেও কাজটি করল। ছবিটির অনেক স্মৃতিই হয়তো অনেকে ভুলে গেছেন। তাই বলে কেউ যেন এ সময়ে এসে ছবিটি নিয়ে কোথাও ভুল ব্যাখ্যা না করেন।’

আলোচনা সভার প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘জহির রায়হানের “জীবন থেকে নেয়া” ছবিটি সেসময় আলোড়ন তুলেছিল। ছবিটি জাতীয়তাবাদী সংগ্রামকে উৎসাহিত করেছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জহির রায়হান এমন একজন মানুষ ছিলেন, যিনি যুদ্ধের মধ্যেও “স্টপ জেনোসাইড” বানিয়ে মুক্তিকামী বাঙালিদের ওপর অত্যাচারের দৃশ্য পৃথিবীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন।’

পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজারের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন ছবির চিত্রগ্রাহক আফজাল চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, চলচ্চিত্র নির্মাতা সালাউদ্দিন জাকী, বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন কুমার ঘোষ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে কবিতা আবৃত্তি করে শোনান শিমুল মুস্তাফা, মেহের আফরোজ শাওন ও অমিত হাসান। শেষে ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটি দেখানো হয়।


মন্তব্য করুন