Select Page

টাকা দিয়েও মূল প্রতিযোগিতায় যেতে পারেননি ‌‘মিসেস এশিয়া বাংলাদেশ’, আয়োজক দম্পতি কারাগারে

টাকা দিয়েও মূল প্রতিযোগিতায় যেতে পারেননি ‌‘মিসেস এশিয়া বাংলাদেশ’, আয়োজক দম্পতি কারাগারে

 ‘মিসেস এশিয়া বাংলাদেশ ২০২২’ বিজয়ী খাদিজা আক্তার রাহার কাছ থেকে টাকা নেয়ার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রতিযোগিতাটির আয়োজক প্রতিষ্ঠান অপূর্ব ডটকমের মালিক অপূর্ব আবদুল লতিফ ও তার স্ত্রী আফসানা হেলালি ওরফে জোনাকি। 

খাদিজা আক্তার রাহা

গত বুধবার (৩০ নভেম্বর) রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে গুলশান থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় পাঁচ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠান।

গুলশান থানায় অপূর্ব ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ৪০৬, ৪২০ ও ৫০৬ ধারায় মামলা করেন রাহা। পরে পুলিশ তদন্তে নামলে বিষয়টির সত্যতা পায় এবং তাদের গ্রেপ্তার করে।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক ফাইজুল হক বলেন, অপূর্ব ডটকমের মালিক অপূর্ব আবদুল লতিফ ও তার স্ত্রী আফসানা হেলালি ওরফে জোনাকি রাহার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে সেটার অনুমোদনের কোনো কাগজপত্রও দেখাতে পারেননি তারা। এখনো তদন্ত চলছে।

মামলায় রাহা উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ‘মিসেস এশিয়া ইন্টারন্যাশনাল-২০২২’ প্রতিযোগিতায় পাঠানোর প্রতিশ্রুতিতে তার কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান। পুরোটাই ফাঁকি জেনে তিনি টাকা চাইলে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়।

গত ২০ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে থাইল্যান্ডে যাওয়ার কথা ছিল রাহার।

রাহা জানান, থাইল্যান্ডে ‘মিসেস এশিয়া’র মূল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া যাবে এমন আশ্বাস দিয়ে ৮ নভেম্বর ছয় লাখ টাকা নিয়েছেন বাংলাদেশের আয়োজক অপূর্ব ডটকম-এর মালিক অপূর্ব আবদুল লতিফ। রাহার অভিযোগ, ছয় লাখ টাকা নেওয়ার পরে গত ২০ নভেম্বর থাইল্যান্ডে নির্ধারিত আয়োজনে অংশ নিতে রাহাকে আবারও চৌদ্দ লাখ টাকা দিতে বলেন আয়োজক অপূর্ব। মোটা অংকের এই টাকা দিতে রাজি হননি বিজয়ী রাহা। তার দাবী, টাকা দেননি বলেই থাইল্যান্ডে ‘মিসেস এশিয়া ২০২২’-এ অংশ নেয়া হয়নি তার। পরবর্তীতে রাহা তার দেয়া ছয় লাখ টাকা ফেরত চাইলে আয়োজক তা দিতে অস্বীকৃতি জানান।

অপূর্ব আবদুল লতিফ ও তার স্ত্রী আফসানা হেলালি

এসব অভিযোগ এনে আয়োজক অপূর্ব আবদুল লতিফের বিরুদ্ধে ২৭ নভেম্বর গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন রাহা।

তিনি বলেন, গত ১১ নভেম্বর ‘মিসেস এশিয়া ২০২২’ প্রতিযোগিতার জন্য বাংলাদেশ থেকে বিজয়ী হই। তার আগে ৮ নভেম্বর আমার থেকে ছয় লাখ টাকা নেয় আয়োজক অপূর্ব। বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে ২০ নভেম্বর থাইল্যান্ড যাওয়ার কথা ছিল। সে জন্য আমার পাসপোর্ট নেয়া হয়। তখন বলে, কোনো স্পন্সর পাইনি। সেজন্য ১০দিনের জন্য সেলফ স্পন্সর করতে বলা হয়। যার মধ্যে ছিল ভিসা প্রসেস, যাতায়াত, হোটেল, পঞ্চাশটির মতো ড্রেস, জুতা এবং কিছু অনুশীলন; সবকিছু বাবদ আমাকে ছয় লাখ টাকা স্পন্সর করতে বলে।

রাহা আরও বলেন, অপূর্ব ডট কম-এর মালিক অপূর্ব আবদুল লতিফ ও তার স্ত্রী তাদের দুজনের আশ্বাসে টাকা দেই। কিন্তু তারা আমার ভিসা করেনি। পরে খোঁজ নিলে, তারা আমাকে জানায় আরও চৌদ্দ লাখ টাকা দিতে হবে। তখন আমার মনে সন্দেহ লাগে। পরে তারা আমাকে মেসেজ পাঠায়, পুরো টাকা না দেয়ায় আমার সেখানে যাওয়া হচ্ছে না। পরবর্তীতে ছয় লাখ টাকা ফেরত চাইলে আমার সঙ্গে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করে এবং টাকা দিতে অস্বীকার করে।

গ্রেপ্তারের আগে অভিযোগ অস্বীকার করে অপূর্ব আবদুল লতিফ বলেন, কম জনপ্রিয় প্রতিযোগিতাগুলোতে স্পন্সর পাওয়া মুশকিল। সেক্ষেত্রে আমরা আগেই বলেছি, যদি তুমি নিজে স্পনসর যোগাড় করে দিতে পারো তাহলে আমরা তোমাকে পাঠাতে পারব। সে বলেছিল আমার স্পনসর আছে। তো, যে টাকা নিয়েছি সেটা স্পন্সর যিনি করেছেন, তার কাছ থেকে নিয়েছি। কোনো প্রতিযোগীর কাছ থেকে নয়। যে স্পন্সরের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তাকে যথাযথ মানি রিসিট দিয়েছি। তার (রাহা) সঙ্গে থেকে কোনো ধরনের টাকা পয়সার লেনদেন করা হয়নি। তিনি যথাযথ কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবেন না। যে অভিযোগ তিনি তুলছেন পুরোপুরি মিথ্যে ও বানোয়াট। বিষয়টি নিয়ে দরকার পড়লে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়বো।

অপূর্ব ডটকম-এর প্যাডে ছয়লাখ টাকার পেমেন্ট রিসিট-এর কপিতে উল্লেখ আছে, খায়রুল ইসলাম নামের একজন ছয় লাখ টাকা দিয়েছেন। প্যাডে উল্লেখ আছে, থাইল্যান্ডে ‘মিসেস এশিয়া ২০২২’-এর জন্য স্পন্সর। স্বাক্ষর অপূর্ব নামের একজনের।

এ বিষয়ে খাদিজা রাহা বলেন, খায়রুল ইসলাম আমার ছেলে। যেহেতু আমি প্রতিযোগী ছিলাম সে কারণে তারা বলেছিল মানি রিসিটে আমার নাম না রাখতে। তাই আমার ছেলের নামে টাকা দেই। আমি যেহেতু ফাইনালি থাইল্যান্ড যেতে পারিনি, এ কারণে আমি ছয় লাখ টাকা ফেরত চাই। আমি একজন সিঙ্গেল মাদার। অনেক কষ্ট করে এই টাকা জোগাড় করেছি। কিন্তু অপূর্ব ডটকম থেকে টাকা চাইলে আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।


মন্তব্য করুন