Select Page

তাড়াহুড়া থাকলেও প্রশংসনীয় প্রয়াস ‘মুন্সিগিরি’

তাড়াহুড়া থাকলেও প্রশংসনীয় প্রয়াস ‘মুন্সিগিরি’
ওয়েবফিল্ম: মুন্সিগিরিঅবলম্বন: শিবব্রত বর্মণের ‘মৃতেরাও কথা বলে’, স্ক্রিপ্ট: নাসিফ ফারুক আমিন; পরিচালনা: অমিতাভ রেজা চৌধুরীঅভিনয়: চঞ্চল চৌধুরীপূর্ণিমাশবনম ফারিয়া, ইমতিয়াজ বর্ষণ, গাজী রাকায়েত, শহীদুজ্জামান সেলিম ও আরো অনেকে; ব্যাপ্তি: পঁচাশি মিনিট; প্ল্যাটফর্ম: চরকি

মুন্সিগিরি’ দেখে আবারও সেই প্রশান্তি পেলাম, যা অমিতাভ রেজা আর গিয়াসউদ্দিন সেলিমের কাজে সবসময় পেয়ে এসেছি। আমার বাবা পর্যন্ত একটা দৃশ্য দেখেই আটকে গেলো এতটাই যে চুলায় কিছু গরম দিয়েছিল মনে নেই। অথচ দেশি কন্টেন্ট দেখছি দেখলেই নাক সিটকায় চলে যায়। শেষ তাকে কিছুটা আগ্রহ নিয়ে দেখতে দেখেছিলাম ফারুকির লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলম্যান। এবার এক পর্যায়ে বলেই ফেললো, বাহ! এরা তো থ্রিলার ভালোই বানায়। আমি বললাম, বাবা এটা অমিতাভ রেজা চৌধুরী বানাইসে, বুঝতে হবে!

কোন আজাইরা সাবপ্লট নেই, সোশ্যাল মিডিয়া ধরতে গিয়ে নতুন অ-অভিনেতা নেই, ছোটখাটো চরিত্রেও সব দক্ষ অভিজ্ঞ অভিনেতারা আছেন, তাই কোন দৃশ্যেই মনোযোগ সরে না। সিনেমাটোগ্রাফি, লাইটিং সবকিছুতে শহর, অলিগলি, অন্দরমহল রিয়েলিস্টিক পর্যায়ে থাকে, যেটা বাংলাদেশি কনটেন্টে বিরল পর্যায়ে। চিত্রনাট্য এত টাইট যে অনেক চরিত্র আর সম্পর্ক আলাদা করে এক্সপ্লোর করা হয়ে ওঠেনি। এটা নিয়ে হতাশা থাকতে পারে যে এটা আরেকটু লম্বা বা ওয়েবসিরিজ হলো না কেন??

একটা দীর্ঘ কথোপকথনে উটকো ইন্টারেপশান ঘটবে এটাও স্বাভাবিক, একইভাবে হুট করে ডাক পড়েছে বলে দায়িত্বরত পুলিশ যে সব ছেড়ে চলে যাবে, কিন্তু সাবঅর্ডিনেট তাকে বলবে— ‘স্যার, মিলাদটা করে আসলেই পারতেন’, ‘কিংবা, সরি স্যার, জুতা পরে ঢুকে পড়লাম’ এমন প্রচুর ছোট ছোট নুয়ান্স প্লটকে গতিময়তার পাশাপাশি গ্রাউন্ডেডও রেখেছে। ফ্ল বলতে তদন্ত দৃশ্যে কিছু ব্যাপার অযৌক্তিক লেগেছে, যেমন একটা রহস্য ফাঁসের পর পুলিশ বাড়ির লোককে বলে দেয়, যে আসলে ব্যাপারটা তো এটা তোমরা জানতেও না। এখানে কিন্তু পুলিশ তদন্তের ভেতরকার কিছু বাইরের লোককে বলবে না। তারপর একটা বিশেষ দৃশ্যে অদ্ভুতভাবে বইটাকে ব্লার করে দেখানো হয়, আমি টেনে আবার দেখেছি। ইচ্ছাকৃতভাবে কেন এই ব্লারটা করা হলো, মাথায় ঢোকে নি।

সবমিলিয়ে ‘মুন্সিগিরি’ এমন একটা থ্রিলার, যার মাঝে ওল্ড-স্কুল মিস্ট্রি থ্রিলারের সবকিছু রয়েছে। নতুন কিছু নেই। কোন নিরীক্ষা নেই, তবে পরিচালনা, চিত্রনাট্য আর অভিনয়ের সলিডিটির কারণে দেশি যে কোন কনটেন্টের চেয়ে অনেক উপরে রাখা যায়। এই ভদ্রলোক আজও একই লেভেলে অপারেট করছেন, সবকিছুর মধ্যে যেই সিংকটা তার কাজে থাকে, সেটা অন্য কোথাও আজও পাইনি। এখন অনেক তরুণ নির্মাতা কাজ করছেন, সবখানেই একটু না একটু ‘দেখাতে গিয়ে খেলো হয়ে গেলো’ থাকেই। সবকিছু ছাপিয়ে একটা থ্রিলার গল্প কীভাবে বলতে হয় অমিতাভ রেজার কাছ থেকে সবার শেখা উচিত। তবে এটা ওয়েব সিরিজ হলে তাড়াহুড়াটা কম লাগত। অবশ্যই অমিতাভ রেজার সেরা কাজ না, তাই বলে যেই নেতিবাচক রিভিউ দেখেছি, অর্থ পাইনি।

‘মুন্সিগিরি ২’ আসুক। চরকির কাছে অনুরোধ রইলো।

এটা আমাদের দেশি ‘ফ্যামিলি ম্যান’ হয়ে উঠুক।

বাংলাদেশি কন্টেন্ট হিসেবে: ৪.৫/৫

সবমিলিয়ে: ৩.৫/৫


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

সিনিয়র কন্টেন্ট এক্সেকিউটিভ, বঙ্গ বিডি। সাবটাইটেল ও অনুবাদ আমার পেশা। শখে মুভি রিভিউ করি।

মন্তব্য করুন