Select Page

দায় থেকেই ভাষা সংগ্রামে অংশ নিয়েছি — আনোয়ার হোসেন

দায় থেকেই ভাষা সংগ্রামে অংশ নিয়েছি — আনোয়ার হোসেন
image_69598-235x175চলে গেল সদ্যপ্রয়াত অভিনেতা আনোয়ার হোসেনের ৮২তম জন্মদিন। শুধু চলচ্চিত্রের পর্দায়ই নয়, ব্যক্তিজীবনেও তিনি ছিলেন রাজনীতিসচেতন। সরাসরি অংশ নিয়েছেন ভাষা আন্দোলনে। বছর তিনেক আগে ফেব্রুয়ারির এক সন্ধ্যায় উঠে আসে সদ্যপ্রয়াত এ নবাবের জীবনের অপ্রকাশিত খুঁটিনাটি। সে সময় সাক্ষাতকারটি নিয়ে ছিলেন আহমেদ তেপান্তর-
আপনি ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন?
হ্যাঁ, নিজের তাগিদেই অংশ নেয়া। দায়িত্ব মনে করেছি। ওই সময় আমাদের ওদিকে আন্দোলনের মূল নেতা ছিলেন রাজনীতিক আবুল মনসুর সাহেবের বড় ছেলে (ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের বড় ভাই) মাহাবুব আনাম। তিনি আমার এক বছরের সিনিয়র ছিলেন। ঢাকায় সর্বদলীয় ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হলে আমরা মাহাবুব সাহেবের নেতৃত্বে মিছিল-মিটিং করি।
তাহলে পরে যখন ভাষাসৈনিক তালিকা হলো, তাতে তো আপনার নাম নেই।
আসলে আমি চিরায়ত শিল্পী হতে চেয়েছি, অন্যকিছু নয়। তাই ওসব নিয়ে মাথা ঘামাইনি। তাছাড়া দেখছই তো, এসব নিয়ে বিতর্ক কম হচ্ছে না। মান-অভিমান চলছে। তাতে কী, আমি তো শিল্পী।
কিন্তু আপনি কি মনে করেন না একজন শিল্পীর জীবনে রাজনৈতিক সচেতনতা দরকার?
অবশ্যই দরকার। তবে গায়ে-গতরে নয়, সেটা হতে পারে উপলব্ধিতে। মনে হয় না আমার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক চরিত্রে এ দেশের কিংবা এ উপমহাদেশের কোনো অভিনেতা অভিনয় করেছেন। আমি নবাব সিরাজউদ্দৌলা, রাখাল বন্ধু, জীবন থেকে নেয়া, আলোর মিছিল, দুই দিগন্ত, বন্ধন, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, সূর্য সংগ্রামের মতো ছবিতে অভিনয় করে রাজনৈতিক চরিত্রগুলোকে দেশের রাজনৈতিক স্রোতের সঙ্গে দেখাতে চেয়েছি। কতটুকু পেরেছি, সেটা ভবিষ্যতের প্রজন্ম বলতে পারবে।
১৯৮৫ সালের পর আপনাকে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য চরিত্রে দেখা যায়নি, এটাকে কীভাবে
ব্যাখ্যা করবেন?
এটার জন্য আমি দায়ী নই। আমাদের দেশের সমস্যাটা হলো, ৫০ পেরোলে তাকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে কাস্ট করা যায় না। এখানে বয়সকে প্রাধান্য দেয়া হয়, অভিনয়গুণকে নয়। কলকাতায় দেখো, সৌমিত্র, বলিউডে অমিতাভ, নাসিরুদ্দিন শাহ— এখনো কেন্দ্রীয় চরিত্রে একের পর এক হিট ছবি উপহার দিচ্ছেন। আসলে আশির দশকের পর থেকে সব গল্পই নায়কনির্ভর হয়ে গেছে। ফলে যারা প্রকৃত শিল্পী, তাদের পাট চুকেছে।
আপনার কোনো আক্ষেপ…
আক্ষেপ নেই। তবে একটা কথা বলার আছে, আমাদের সময় কাজী খালেক, মুস্তাফা, শওকত আকবর, খান আতা, আলতাফ, খলিলউল্লাহ আমরা সবাই নিজেদের বন্ধু ভেবে একটা পরিচ্ছন্ন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতাম। এখন এটা দেখা যায় না। এটা সুখকর নয়। এ বিষয়ই মাঝে মধ্যে আমাকে ভাবায়।


মন্তব্য করুন